ভূমিকা
কথা
বলছিলাম মাতৃস্থানীয়া একজন মুরুব্বীর সাথে।প্রায় জীবন সায়াহ্নে পৌঁছে যাওয়া এই
নারীর গভীর জীবন বোধ আমাকে প্রায়ই চমৎকৃত করে। অথচ ঊনি পড়াশোনা করেছেন মাত্র পঞ্চম
শ্রেণী পর্যন্ত। তাই জীবন নিয়ে ঊনার উপলব্ধিগুলো আমাকে ভাবিয়ে তোলে ‘উচ্চশিক্ষিত’
এই বিশেষণের প্রকৃত অর্থ নিয়ে।
আমার
প্রায়ই মনে হয় আমরা এক অদ্ভূত সময়ে বাস করছি।আমাদের নামের পাশে বিশাল বিশাল
ডিগ্রীর তকমা ঝুলছে, পড়াশোনাকে আমরা জীবনের ধ্যান জ্ঞান বানিয়ে ফেলেছি অথচ এই
আমাদেরই জীবনের খুব ছোট ছোট ব্যাপারে ‘কমন সেন্সের’ খুব অভাব। পিএইচডি ডিগ্রীধারী মা-বাবাকে
আপনি দেখবেন পরীক্ষার আগে টাকা দিয়ে সন্তানের জন্য প্রশ্ন কিনতে। এটা যে কত ভয়ংকর
আত্মঘাতী একটা কাজ এই সামান্য বোধটুকু আমাদের ডিগ্রীগুলো আমাদের দিতে পারছে না।
ঠিক
একইভাবে জীবনের একটা বিশাল অংশ অনেক ডিগ্রী অর্জনের পিছনে ব্যয় করে হঠাৎ করে কেউ
যখন নিজের ‘মুসলিম’ আত্মপরিচয়ের ব্যাপারে সচেতন হয়ে ওঠে, তখন অবাক হয়ে উপলব্ধি করে
যে ইসলামের নুন্যতম ব্যাসিক জ্ঞানটুকুও তার নেই। সে জানে না কিসে অযূ ভংগ হয় কিংবা
কিসে ঈমান বিনষ্ট হয়ে যায়। স্বাভাবিকভাবেই তখন এক অজানা আক্রোশে মনটা ছেয়ে যায়।
রাগ হয় নিজের উপর, আশেপাশের মানুষগুলোর উপর, এই সিস্টেমের উপর।যা কিছু পড়েছি, যা
কিছু পড়ছি সব কিছুকে ‘দুনিয়াবী শিক্ষা’ মনে হয়।‘দুনিয়াবী’, কারণ এটা আমার পরকালে
কোনো উপকারেই আসছে না।ইসলামের বুঝ আসার পর তাই আমাদের প্রথম প্রতিক্রিয়া
হয়-‘দুনিয়াবী পড়া ছেঁড়ে দিয়ে দ্বীনের পড়াশোনায় ব্যাপৃত হব’।এর পিছনে প্রভাবক
হিসেবে আরো কাজ করে প্রচলিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিরাজমান পরিবেশ যা কীনা
ইসলাম পালনের জন্য খুবই প্রতিকূল।
কিন্তু
এই যে ইসলাম প্র্যাক্টিস শুরু করার পরই আমরা পড়াশোনা ছেঁড়ে দিতে চাই এটা কি সঠিক
সিদ্ধান্ত?যে উম্মাহর নবীর উপর প্রথম নির্দেশ ছিলো ‘পড়ো’, তাদের জন্য পড়াশোনাকে
এইভাবে দুনিয়াবী আর দ্বীনী এই দু’ভাগে ভাগ করার চিন্তাটা কি ইসলাম সম্মত?
আমাদের
আজকের আলোচনা মূলত এটা নিয়েই। আমি নিজে যেহেতু অর্থনীতি নিয়ে পড়ছি এবং আমি একজন
মেয়ে, তাই আমি প্রচুর মেয়ের কাছ থেকে এই টপিক নিয়ে প্রশ্ন পাই। তাদেরকে আমার মতামত
জানাতে গিয়েই এই টপিকের উপর একটা সিরিজ লেখার চিন্তা মাথায় আসে।
তবে
আমি শুরুতেই স্পষ্ট করে বলতে চাই যে আমি কোনো স্কলার
নই। আমি এখানে যা বলবো তা সম্পূর্ণ রূপে আমার নিজস্ব মতামত, বলা যেতে পারে জীবন থেকে
নেয়া অভিজ্ঞতা। তাই দয়া করে কেউ মনে করবেন না যে আমি ফতওয়া দেয়া শুরু করেছি। তা করার
প্রশ্নই ওঠে না।
আমি বিভিন্ন ফিল্ডে
অধ্যয়নরত মেয়েদের থেকে প্রশ্ন পাই যারা পড়াশোনা চালিয়ে নেয়া নিয়ে দ্বিধান্বিত। আলোচনার
সুবিধার্তে আমি একটা উদাহরণ দিচ্ছি -
আপু আমি অনার্সে 'ল'
নিয়ে পড়েছি । আমি কর্পোরেট জবে আগ্রহী না, লিগ্যাল প্র্যাকটিসও করবো না। আমি
শিক্ষকতা পেশাতে যেতে চাই, সেটার জন্য আমার মাস্টার্স করা জরুরী। কিন্তু আমি
যেহেতু মেয়ে,অর্থ উপার্জন করা আমার জন্য জরুরী না, তাহলে মাস্টার্স করার জন্য কো
এডুকেশনে পড়তে যাওয়া কি আমার জন্য উচিৎ হবে?
আমি যখন এসব ব্যাপারে আমার মতামত দিতে চাই, আমি প্রথমেই বলে নেই যে অন্য কেউ
আপনার জীবনের সিদ্ধান্ত নিয়ে দেবে না, এটা কোনো কাজের কথাও না যে আপনি অন্যের কথা
শুনে নিজের জীবনের বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে
পারাটা একটা অপরিহার্য দক্ষতা যেটা আমাদের সবার অর্জন করতে পারা উচিৎ। আমি মোটা
দাগে সবাইকেই তাহাজ্জুদ পরে আল্লাহর সাথে কন্সাল্ট করতে বলি। তারপর নিজের কিছু পর্যবেক্ষণ
ঊনাদের সাথে শেয়ার করি।
আমি
প্রথমেই জানতে চাই যে ঊনি বিবাহিত কী না, হলে বাচ্চা আছে নাকি। এগুলো ব্যক্তিগত
প্রশ্ন, সন্দেহ নেই, কিন্তু তবু আমি করি কারণ এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো অনেকটা
নির্ভর করে আমি প্রাপ্ত বয়স্ক দ্বারা পরিবেষ্টিত নাকি নই। যদি আমার বাচ্চা থাকে তাহলে সমীকরণ এক রকম, যদি
না থাকে তাহলে আরেক রকম। কারণ আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে একটা মেয়ে প্রাথমিকভাবে
দায়িত্বশীল তার পরিবারের ব্যাপারে। একটা মেয়ে লম্বা সময়ে বাইরে থাকলে আজকের সময়ে
বেশ কিছু সমস্যা হয় বাচ্চার দেখভাল করা নিয়ে। আবারো বলছি, আজকের সময়ে.........যখন
আমরা যৌথ ফ্যামিলিতে থাকি না বললেই চলে। আর Sexual Abuse এর ব্যাপারটা মহামারী
আকার ধারণ করাতে বাইরের কাউকে বাচ্চার দেখভালের জন্য বিশ্বাস করা খুব কঠিন এখন।
তাই আমার আজকের লেখা মূলত তাদের জন্য যাদের ছোট
বাবু নেই। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ Disclaimer.
এসংক্রান্ত কোনো আলোচনায়
যাওয়ার আগে সবার আগে যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলা দরকার সেটা হল ফ্রিমিক্সিং। কো এডুকেশন হারাম এটা আমরা হর হামেশা বলে থাকি।
কিন্তু ফ্রি মিক্সিং আর কো এডুকেশন কি সমার্থক?
(চলবে)
২য় পর্বের লিংক
No comments:
Post a Comment