Wednesday, July 3, 2019

Fatwa Shopping-কার সাথে প্রতারণা করি আমরা?

কোন একজন ক্লাসিক্যাল স্কলার (নাম ভুলে গেছি) বলেছিলেন আমি আমার মা বাবার চেয়েও আল্লাহর judgement কে prefer করব কারণ আমি জানি যে তাদের চেয়েও আল্লাহ আমার প্রতি বেশি দয়ালু। আবার Nouman Ali Khan তাঁর সূরা ফাতিহার তাফসীরে বলেছিলেন আমাদের আল্লাহর justice কে ভয় পাওয়া উচিৎ। তিনি এতটাই ন্যায় বিচারক যে পক্ষপাতিত্বের সামান্য সুযোগও নাই। কিয়ামতের দিনের বিচারের যে বৈশিষ্ট্যটি আমার কাছে সবচেয়ে স্বাতন্ত্র্যমণ্ডিত মনে হয়, তা হল আল্লাহ বিচার করবেন হৃদয়ের অবস্থা দিয়ে,ধানাই পানাই এর কোন সুযোগই থাকবে না।ব্যাপারটি খুব কঠিন, আবার একইসাথে চরম শান্তিদায়ক-ন্যায়বিচার পাব এই অবিচল আস্থা থেকে আসা এক অনাস্বাদিত স্বস্তি!

Fatwa Shopping- এই টার্মটাও আমি প্রথম শুনি Nouman Ali Khan  এর তাফসীরে। তিনি সূরা শামসের তাফসীরে (সম্ভবত) বলেছিলেন পাপ-পূণ্যের একটা সহজাত অনূভুতি আল্লাহ আমাদেরকে দিয়েছেন। যখন আমরা একটা অনুচিত কাজ করি তখন সেই অনুভূতিটা আমাদেরকে পীড়া দিতে থাকে। তার মুখ বন্ধ করার জন্য আমরা ফতওয়া খুঁজতে যাই। আলিমকে নিজের পরিস্থিতি বর্ণণা করতে করতে এমন পর্যায়ে নিয়ে যাই যেন আলিম তাই বলেন যা আমি শুনতে চাই।কিংবা ফতওয়া ততক্ষণ খুঁজতে থাকি যতক্ষণ না আমার মনের মত টা পাই! তিনি এটাকে অভিহিত করেছেন Worship of Desire হিসেবে।

আমাদের মুসলিমদের এখন একটা ভালই সুবিধা হইসে, সবকিছুতেই আমরা উলেমাদের মতানৈক্য খুঁজে পেতে পারি। তাই সবকিছুতে বলতে পারি এ ব্যাপারে Difference of opinion আছে, অতএব যে কোন একটা মানলেই চলে!!

কিন্তু আসলে কি তাই? যখন কোন ব্যাপারে Difference of opinion থাকে, তখন আমাদের করণীয় কি এতই Simple? জান্নাত কি এতই সস্তা?

IOU  থেকে অর্জিত জ্ঞান থেকে জানি যে Difference of opinion দু ধরণের হতে পারে-

১। Conflicting Variation বা যেখানে একাধিক মত চলতে পারে না-যে কোন একটি সঠিক হতে হবে যেমন কোন বিষয় অযূ ভঙ্গকারী কিনা এব্যাপারে ইখতিলাফ থাকতে পারে না।

২।  Co existing Variation বা যেখানে একাধিক মত সঠিক হতে পারে বা সহাবস্থান করতে পারে- যেমন সালাতে হাত কোথায় বাধঁতে হবে বা সিজদাহ সাহূ সালাত শেষ হওয়ার আগে না পরে ইত্যাদি।

এখন যদি একটা আমলের ব্যাপারে উলামাদের মাঝে মতানৈক্য থাকে, তখন আসলে আমাদের করণীয়টা কি? আমি কি আমার যে মতটা ভাল লাগে সেটা করতে পারি বা যে কোন একটা মত নিতে পারি? এখানেই আসে Fatwa Shopping এর বিষয়টা, যা দিয়ে আসলে আজকের নোটের সূচনা। একটি বিশেষ ব্যক্তিগত কারণে ব্যাপারটা আমাকে খুব ভাবাচ্ছিল। তাই এসময় আমাদের করণীয় জানতে আমার একজন শিক্ষককে ফোন দিলাম।আলহামদুলিল্লাহ তিনি সুন্দর করে আমাকে বুঝিয়ে বললেন যে এসময়-

যে স্কলারের জ্ঞান ও তাকওয়া আমার কাছে বেশি নির্ভরযোগ্য মনে হয়, তার মত গ্রহণ করতে।

যদি এমন হয় যে দুজনই আমার কাছে সমানভাবে গ্রহণযোগ্য, তাহলে উনাদের দালীল (যদি আপনি Student of knowledge  হন) জেনে যেটা বেশি সহীহ মনে হয় সেটার আলোকে কাজ করুন।

আর যদি দু পক্ষের দলীল-ই সমান শক্তিশালী হয় তবে-
ü কেউ বলেছেন কঠিনটা নিতে কারণ জান্নাত কঠিন বিষয়াদি দ্বারা পরিবেষ্টিত।
ü কেউ বলেছেন সহজটা নিতে কারণ দ্বীন সহজ
ü কেউ বলেছেন যেটা নিরাপদ সেটা নিতে
আবার কেউ বলেছেন অধিকাংশ আলেম যে মত প্রকাশ করেছেন, সেটা নিতে!
.........
অর্থ্যাৎ আপনার তাকওয়া এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ factor. যদি আসলেই আমার আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার ব্যাপারে আপোষহীণ মনোভাব থাকে তবে আমরা আলিমকে দিয়ে আমাদের কাজ সিদ্ধ করে নিব না ইনশাল্লাহ কারণ তারা কেউই অন্তর্যামী নন, কিন্তু আল্লাহ অন্তর্যামী।

এখানে উল্লেখ্য যে Difference of opinion অবশ্যই ইসলামী আইন শাস্ত্র দ্বারা অনুমোদিত মতানৈক্য হতে হবে। হাতুড়ে ডাক্তারদের মত সব হালাল করা তথাকথিত ব্যক্তিরাও আছেন, যারা তাই বলেন যা মানুষ  শুনতে চায়!! যেমন গান শুনা অনুমোদিত, এমন  কথা কিন্তু চার ইমামের একজনও বলেন নি! তাই বলা যাবেনা যে এ ব্যাপারে মতানৈক্য আছে! এখন আপনি বলতে পারেন যে নাশিদ শোনাটা জায়েজ। Fine, no problem. কিন্তু মিউজিক হারাম হওয়ার ক্ষেত্রে Objective of Shariah টা একটু মাথায় রাখা উচিৎ। গান এবং কুরান একই হৃদয়ে সহাবস্থান করতে পারেনা। এখন আপনি আগে গান শুনতেন, এখন ধুমায়ে নাশিদ শোনা শুরু করলেন!!!সামি ইঊসুফ এর নাশিদে নিষিদ্ধ বাদ্যযন্ত্র আছে কিনা এটা Ignore করলেন, খালি মাথায় রাখলেন নাশিদ শোনাটা জায়েজ। কিন্তু নাশিদ আপনার জীবনে গানের মত কাজ করছে কি না এটা মাথায় রাখা উচিৎ না? কোরানের প্রতি আপনার হৃদয়ে টান অনুভব করছেন নাকি? এটা পৃথিবীর কোন আলিম আপনাকে বলে দিবে না, এটা সম্পূর্ণ নিজের সাথে আপনার বোঝাপড়া!

আর একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল জীবনের সবক্ষেত্রে ফতওয়া খুঁজতে গেলে বিভ্রান্ত হয়ে যাওয়ার একটা সুযোগ আছে- আল্লাহর দেয়া আক্বল কে একটু কাজে লাগানো উচিৎ। অনেক সময় একটা বিষয় নিয়ে বড় বড় স্কলারদের মাঝে মতানৈক্য  থাকতে পারে- কেউ কিছু জিনিস একবারে সোজা নিষেধ করেন, কেউ শর্তযুক্তভাবে অনুমোদন দেন। আপনি যদি সেই শর্তগুলো মানতে যান, তাহলে দেখবেন ওটা পালন ই করা যাচ্ছেনা। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় জন্মদিন উদযাপনের কথা! বিলাল ফিলিপ্স এবং আরও অনেকে এটাকে মুশরিকদের ধর্মের অংশ হিসেবে বিবেচনা করে একে শিরক বলেন। আবার জাকির নায়েকের Reference  দেয়া হয় যে তিনি নাকি এটাকে allow করেন। আবার বলছি, তিনি যে শর্তগুলো দিচ্ছেন তা পালন করে জন্মদিন পালন করতে গেলে আপনাকে চরম সাধনা করতে হবে। এখন আপনি নিজেকে প্রশ্ন করবেন যে মিউজিক না বাজিয়ে ছেলে মেয়ে আলাদা করে , অপচয় না করে জন্মদিনের পার্টি করাটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত? মুসলিম এতটা effort কেন দিবে? আপনি এর মাধ্যমে কি প্রমাণ করতে চাচ্ছেন, ইসলাম পালন করলে Life Boring হয়ে যায় না, সবকিছু করা যায়? এই কথাটা কি আসলে সত্য? এখানেই আক্বল প্রয়োগের প্রশ্নটা চলে আসে! মুসলিম হিসেবে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া কি উদযাপনযোগ্য কিছু? আপনি কি এতটাই নিশ্চিত আপনার জান্না্তে যাওয়ার ব্যাপারে যে সেটার দিন ঘনিয়ে আসছে বলে আপনি খুশীতে গদগদ? একটু চিন্তা করলেই আপনি নিজেই এই রীতির খারাপ দিক গুলো বুঝতে পারবেন, আপনার বাচ্চার মাঝে হিংসা, হতাশা, লোভ এমন বেশকিছু স্বভাব গড়ে উঠবে। একটা মুসলিমের জীবনের সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গী, Life Style........এগুলোর সাথে ব্যাপারটা সাংঘর্ষিক না? এখন কেউ যদি আপনাকে জিজ্ঞেস করে জন্মদিন উদযাপনের বিধান কি, যে কিনা সালাত আদায় করে না, তাকে যদি আপনি বলেন ব্যাপারটা শিরক----------(যদিও আপনি সেটাই বিশ্বাস করেন) এটা কি উচিৎ হবে? জীবন নিয়ে যে Holistic Approach টার কথা বললাম, সেভাবে বুঝানোর একটা চেষ্টা চালানো যেতে পারে!!

আমি আসলে ইদানিং আমাদের চারপাশের মানুষগুলোর জীবন নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার প্রতি উদাসীনতা দেখে খুব হতাশ! আমরা একেকজন দুনিয়ার পড়াশোনা করে ফাটায় ফেলতেসি, কিন্তু একটু দ্বীন শিক্ষা করতে গেলেই আমাদের রাজ্যের Excuse শুরু হয়ে যায়!সময় নাই, বাসা দূরে, বাসা থেকে সহযোগিতা করে না......কাকে ঠকাই আমরা? যে আমাকে দ্বীনের দাওয়াত দিচ্ছে তাকে? সে কিন্তু তার চেষ্টার মাধ্যমে তার আমলনামা ভরিয়ে ফেলছে!আমার খুব ভয় হয়, আমরা পাস মার্ক টাকে অনেক কম বানিয়ে ফেলেছি দেখে। পরকালে গিয়ে যদি দেখি পাস মার্ক আসলে ৬০ এ ছিল, যেখানে আমি দুনিয়াতে ভেবেছিলাম ২০ তাহলে কি হবে? সূরা আসরের তাফসীরে শুনেছিলাম যে ওখানে কোন পুরষ্কারের কথা বলা হয়নাই অর্থ্যাৎ শুধু Pass Mark পাওয়ার উপায় বলা হইসে। উল্লেখিত চারটা কাজ যতক্ষণ না করতেছেন, বাকি পুরা সময়টাই loss! Indeed Human being is in certain loss!!

আমরাতো থাকবনা বেশিদিন এখানে। পরকালের জীবনটাই তো আসল, চিরস্থায়ী! সেটা নিয়ে কি ছেলেখেলা করা যায়? আমি বাণিজ্যের ছাত্রী কিনা, তাই সবসময় খালি Business Term মাথায় ঘোরে! Sustainable না হলে সে প্রোজেক্ট সিলেক্ট করিনাতো আমরা! কোন জীবনটা Sustainable? দুনিয়া না আখিরাত?

No comments:

Post a Comment

রিবা নিয়ে জানা সিরিজের স্ক্রিপ্ট -১১

রিবার নানা রূপ আজকের পর্বে আমরা রিবার নানা রূপের সাথে পরিচিত হব যেন দৈনন্দিন জীবনে আমরা সেগুলো থেকে বেঁচে থাকতে পারি-   টাকা ধার নেয়ার...