আজকের পর্ব থেকে আমরা চেষ্টা করবো রুকিয়ার আয়াতগুলো
নিয়ে একটু কথা বলতে, সেগুলো আত্মস্থ করার মানসে ইনশাল্লাহ। আমার সীমিত বুঝ মতে রুকিয়ার আয়াতগুলো হয় আল্লাহর পরিচয় নিয়ে কথা বলে যাতে আমরা এক আল্লাহর উপরই ভরসা করতে পারি। না হয় জ্বীন জগত সম্পর্কে আমাদের এমন তথ্য জানায় যা জানলে আমরা আর জ্বীন সাধক বা ভণ্ড পীরদের কাছে যাবো না। আমাদের মনে রাখতে হবে যে ধৈর্য্য এইসব ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ দেখা যায় ধৈর্য্যের অভাবেই আমরা তাবিজ কবজের দ্বারস্থ হই।
এখানে বলে রাখা ভালো যে রুকিয়ার আয়াত কোনগুলো
সে ব্যাপারে সবসময় আমরা সুনির্দিষ্ট হাদীস পাই না। তাই এই লিস্টটা All conclusive কিছু না।
সূরা ফাতিহাঃ
একদম প্রথমেই আছে সূরা ফাতিহা। এটার মর্যাদা
নিয়ে তো বলার কিছু নাই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীরা
স্বয়ং এটা দিয়ে রুকিয়া করেছেন। বুখারীর হাদিস থেকে আমরা তা জানতে পারি।
আবূ সাঈদ (রহ.) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)-এর একদল সাহাবী কোন এক সফরে যাত্রা করেন। তারা এক আরব গোত্রে পৌঁছে
তাদের মেহমান হতে চাইলেন। কিন্তু তারা তাদের মেহমানদারী করতে অস্বীকার করল। সে
গোত্রের সরদার বিচ্ছু দ্বারা দংশিত হল। লোকেরা তার (আরোগ্যের) জন্য সব ধরনের
চেষ্টা করল। কিন্তু কিছুতেই কোন উপকার হল না। তখন তাদের কেউ বলল, এ কাফেলা যারা এখানে অবতরণ করেছে তাদের কাছে তোমরা গেলে ভাল হত। সম্ভবত,
তাদের কারো কাছে কিছু থাকতে পারে। ওরা তাদের নিকট গেল এবং বলল,
হে যাত্রীদল! আমাদের সরদারকে বিচ্ছু দংশন করেছে, আমরা সব রকমের চেষ্টা করেছি, কিন্তু কিছুতেই উপকার
হচ্ছে না। তোমাদের কারো কাছে কিছু আছে কি? তাদের (সাহাবীদের)
একজন বললেন, হ্যাঁ, আল্লাহর কসম আমি
ঝাড়-ফুঁক করতে পারি। আমরা তোমাদের মেহমানদারী কামনা করেছিলাম, কিন্তু তোমরা আমাদের জন্য মেহমানদারী করনি। কাজেই আমি তোমাদের ঝাড়-ফুঁক
করব না, যে পর্যন্ত না তোমরা আমাদের জন্য পারিশ্রমিক
নির্ধারণ কর। তখন তারা এক পাল বকরীর শর্তে তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হল। তারপর তিনি
গিয়ে الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
“আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন” (সূরা ফাতিহা) পড়ে তার উপর ফুঁ দিতে লাগলেন।
ফলে সে (এমনভাবে নিরাময় হল) যেন বন্ধন হতে মুক্ত হল এবং সে এমনভাবে চলতে ফিরতে
লাগল যেন তার কোন কষ্টই ছিল না। (বর্ণনাকারী বলেন,) তারপর
তারা তাদের স্বীকৃত পারিশ্রমিক পুরোপুরি দিয়ে দিল। সাহাবীদের কেউ কেউ বলেন,
এগুলো বণ্টন কর। কিন্তু যিনি ঝাড়-ফুঁক করেছিলেন তিনি বললেন এটা করব
না, যে পর্যন্ত না আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)-এর নিকট গিয়ে তাঁকে এই ঘটনা জানাই এবং লক্ষ্য করি তিনি আমাদের কী নির্দেশ
দেন। তারা আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে ঘটনা
বর্ণনা করলেন। তিনি [নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] বলেন, তুমি কিভাবে জানলে যে, সূরা ফাতিহা একটি দু‘আ?
তারপর বলেন, তোমরা ঠিকই করেছ। বণ্টন কর এবং
তোমাদের সাথে আমার জন্যও একটা অংশ রাখ। এ বলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) হাসলেন। (বুখারী পর্ব ৩৭ অধ্যায় ১৬ হাদীস নং ২২৭৬; মুসলিম
৩৯/২৩, হাঃ ২২০১)
সূরা বাক্বারাঃ
রুকিয়ার আয়াতের লিস্টে সূরা বাক্বারার অনেকগুলো আয়াত পাওয়া
যায়। পুরা সূরা বাক্বারার ফযীলাত নিয়ে নিচের হাদীস আছেঃ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ তোমাদের ঘরগুলোকে কবরস্থানে পরিণত করো না।
(এগুলোতে কুরআন তিলাওয়াত করো) কারণ যেসব ঘরে সূরা আল বাকারাহ্ তিলাওয়াত করা হয় সে
ঘর হতে শয়তান ভেগে যায়। (মুসলিম ৭৮০)
সূরা বাক্বারার ১-৫ আয়াত
অর্থঃ
আলিফ লাম মীম। (1) এ সেই কিতাব যাতে কোনই
সন্দেহ নেই। পথ প্রদর্শনকারী পরহেযগারদের জন্য, (2) যারা অদেখা বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে এবং
নামায প্রতিষ্ঠা করে। আর আমি তাদেরকে যে রুযী দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে (3) এবং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে সেসব বিষয়ের উপর যা
কিছু তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং সেসব বিষয়ের উপর যা তোমার পূর্ববর্তীদের
প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে। আর আখেরাতকে যারা নিশ্চিত বলে বিশ্বাস করে।(4) তারাই নিজেদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে সুপথ প্রাপ্ত, আর তারাই যথার্থ সফলকাম। (5)
মূল ভাবঃ
আমার কাছে মনে হয়েছে (ভুল হলে আল্লাহ মাফ করুন) এখানে গায়েবে বিশ্বাসের কথা
বলা হয়েছে যেটার একটা অংশ হচ্ছে জ্বীন জগতে বিশ্বাস।
সূরা বাক্বারার ১০২-১০৩ নং আয়াতঃ
এই আয়াতদ্বয় নিয়ে আগেই বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
No comments:
Post a Comment