সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে
যে অনেক কুরআন শরীফের শুরুতে কিংবা অজীফার বইগুলোতে প্রতিটা সূরার ফযীলাত ও নকশা
দেয়া থাকে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে এই
বিষয়গুলো অন্য সকল শিরকী ধর্মেরও অবিচ্ছেদ্য অংশ।সাধু সন্ন্যাসী বা মুনী ঋষিরা
এইসব তন্ত্র মন্ত্র করতেন।
এগুলোর ইসলামিক ভার্সন
হচ্ছে পীর ফকির যাদের আমরা আল্লাহর আউলিয়া ভেবে বিভ্রান্ত হই। আর আছেন এক শ্রেণীর
হুজুর যাদের দ্বীনের জ্ঞান খুবই সামান্য, তাই
অধিকাংশ সময়েই এরা এগুলো না বুঝেই দেন। আর অনেকে জানলেও মানতে চান না কারণ তাবিজ
বিক্রি একটি অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসা। সমস্যা
হচ্ছে এগুলোর গ্রাহক কিন্তু শুধু অশিক্ষিতরা না। শিক্ষিত অশিক্ষিত নির্বিশেষে আমি
মানুষকে অবাধে তাবিজ ব্যবহার করতে দেখেছি। এর কারণের মাঝে রয়েছে খুব তুচ্ছ কারণ
যেমন বাচ্চারা রাতে বিছানায় বাথরুম করে দেয় কিংবা ভয় পায়...আবার বড় বড় বিপদ থেকে
উদ্ধারের আশাও রয়েছে। আমার কাছে মনে হয় যে সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হচ্ছে বিপদ আপদের সময়
এগুলো না করে থাকা। অনেকে আছেন যে মুখে বলেন যে এসব তাবিজ কবজে তার বিশ্বাস নেই
কিন্তু কোনো বিপদে পড়লে ঠিকই এগুলোর আশ্রয় নেন। ঈমানের পরীক্ষাটা এখানেই।
অনেকে আছেন যারা দাবী করেন
যে শিরকী কিছু লেখা না থাকলে কুরআনের আয়াত দিয়ে তাবিজ দেয়া যাবে স্রেফ একটা
চিকিৎসা ব্যবস্থা হিসেবে। এখানে আমাদের কয়েকটা জিনিস বুঝতে হবে-
১। তাবিজ
কখনওই স্পষ্ট কুরআনের আয়াত/ আল্লাহর নাম দিয়ে দেয়া হয় না। যারা এসব সমর্থন করেন, তারাও এটা স্বীকার করেন। কারণ আমরা সবাই জানি যে কুরআনের আয়াত পবিত্র,
এটা লেখা তাবিজ টয়লেট বা সব জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায় না। তাই তারা
যেটা করেন সেটা হচ্ছে সংখ্যা তত্ত্ব ব্যবহার করেন, যেটার কথা
আগে উল্লেখ করেছি। তাদের দাবী হচ্ছে এটা স্রেফ একটা সাংকেতিক কোডের মত। আমার
প্রশ্ন হচ্ছে বিভিন্ন আরবী হরফের এই যে বিভিন্ন সংখ্যা আরোপ করা হচ্ছে, এটার উৎস কী?
আমরা কখনওই এটার কোনো সহীহ
উৎস খুঁজে পাবো না।
২। আল্লাহ
কুরআনে সুষ্পষ্ট ভাষায় বলছেন যে এটা আরবী কুরআন। আমরা যেন ভুলে না যাই যে অমুক
তাবিজ পরলে অমুক উপকার হবে-এটা গায়েবের জ্ঞান। তাই কোনো নির্দিষ্ট আমল করলে কোনো
উপকার হবে এটা যদি আমরা বলতে চাই, তবে সেটার
উৎস অবশ্যই হতে হবে কুরআন এবং সুন্নাহ। তাই তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেই তাবিজ
ব্যবহার করা শিরক না, এটা নিঃসন্দেহে বিদআত কারণ এটা রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীরা ইচ্ছাকৃতভাবে বর্জন করেছেন,
মানে তাদের সামনে এটা করার সুযোগ ছিলো, কিন্তু
তারা তা করেন নি।
৩। এটা
সর্বাংশে এড়িয়ে চলা উচিৎ কারণ আমাদের জানা নেই যে এই সংখ্যাগুলো দিয়ে কুরআনের আয়াত, আল্লাহর নাম লেখা হচ্ছে নাকি শয়তানকে ডাকা হচ্ছে।
৪। যারা
তারপরও এটার উপর অটল থাকতে চান, তাদের জন্য
মনে করিয়ে দিতে চাই সূরা বাক্বারার ১০১ নং আয়াতের কথা। এখানে বলা হচ্ছে-
যখন তাদের কাছে আল্লাহর
পক্ষ থেকে একজন রসূল আগমন করলেন-যিনি ঐ কিতাবের সত্যায়ন করেন, যা তাদের কাছে রয়েছে, তখন আহলে কেতাবদের একদল
আল্লাহর গ্রন্থকে পশ্চাতে নিক্ষেপ করল-যেন তারা জানেই না। (২ঃ১০১)
এখানে নিক্ষেপ করা অর্থে যে
আরবী শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে, সেটার
থিমটা হচ্ছে Trash করা, মানে আবর্জনা
যেভাবে হেলায় ছুঁড়ে দেয় মানুষ, সেভাবে। এর ঠিক পরের আয়াতেই
যাদুবিদ্যা যে কুফরী সেটা বলা হচ্ছে। মানে হচ্ছে যে মানুষ যখন আল্লাহর কিতাবকে
হেলাফেলা জ্ঞান করে, তখনই তারা সেগুলোকে এভাবে শয়তানি কাজে
ব্যবহার করে। আমি বহু মানুষকে দেখেছি যাদের সূরা নাস মুখস্থ, কিন্তু তারা জ্বীনের অস্তিত্বে, যাদু টোনা এগুলোতে
বিশ্বাস করে না। যদি কুরআনকে জঞ্জাল হিসেবে গণ্য না করা হয়, তাছাড়া
কিভাবে এটা সম্ভব হতে পারে?
আমার সীমিত অভিজ্ঞতা বলে যে
যারা এগুলোর উপরে অনেক ভরসা করেন, তারা আসলে
শর্টকাট খোঁজেন। তাদেরকে যদি সুন্নাত উপায়ে নিজে কুরআন/ দুআ তিলাওয়াত করতে বলা হয়,
তাহলে তাদের খুবই আলসেমী লাগবে এবং তারা নানা অজুহাত খুঁজবেন।
ধৈর্য্যের অভাবটাই আমার কাছে এক্ষেত্রে মুখ্য মনে হয়। সুন্নাহ পদ্ধতি ঊনাদের কাছে
অনেক দীর্ঘমেয়াদী লাগে, ঊনারা চান দ্রুত সমাধান।
তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে যদি আমাদের
বিস্তারিত আইডিয়া থাকে রুকিয়ার আয়াতগুলোর ব্যাপারে, মানে আমরা যদি সেগুলো বুঝে বুঝে
পড়ি, তাহলে উপকার তাড়াতাড়ি পাওয়া যাবে ইনশাল্লাহ। আর রুকিয়ার সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে
এটার কোনো সাইড এফেক্ট নাই। মানে আপনি যদি নিশ্চিত না হন যে যাদুটোনা করা হয়েছে
নাকি তাহলে প্রচলিত চিকিৎসার সাথে এগুলো পাশাপাশি চালিয়ে গেলে লাভ বৈ ক্ষতি নেই
যেহেতু কুরআন শিফা।
No comments:
Post a Comment