শর্মীঃ এই আজকের প্রথম আলোতে আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদের ‘শাড়ি’ নামের লেখাটা পড়েছিস?
স্নিগ্ধাঃ হুম দেখলাম। এমনিতে পড়া হত না হয়তো কিন্তু যে হারে ফেসবুকে মানুষজন কথা বলতেসে এটা নিয়ে, কৌতূহল বশত চোখ বুলালাম একবার। এভাবে উলটা মানুষ আরো মার্কেটিং করতেসে লেখাটার।
শর্মীঃ তোর কি বক্তব্য লেখাটা নিয়ে?
স্নিগ্ধাঃ মানুষজন এভাবে রিঅ্যাক্ট করতেসে কেন আমার কাছে ক্লিয়ার না আসলে। লেখাটার ভাষা খুবই বাজে হলেও শাড়ি নিয়ে যা বলসে তার মূল থিম তো ঠিকই আছে। এটা একটু উলটা পালটা ভাবে পরলেই ছেলেদের বিশেষ আকাংখা জাগ্রত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল আর লেখাটার লেখকের চিন্তা ভাবনা যে এমন তা তো জানাই কথা। তোরা আসলে অনেক ছোট, ঊনার আগের বিটিভিতে অনুষ্ঠান উপস্থাপনা বা এসব দেখিস নাই তো, তাই একটা ফেরেশতা টাইপের ইমেজ বানায় রাখসিস। ঊনারা মেয়েদেরকে এভাবেই দেখতে চান তাই শাড়িকে শালীন পোশাক বলসেন। ঊনারা মেয়েদেরকে শালীনতার একটা অদ্ভুত কনসেপ্ট শিখাতে চান যাতে দুই কূলই রক্ষা হয়-মানে ঊনাদের দৃষ্টি সুখও হয় আবার সংস্কৃতিমনা বাঙ্গালী নারীর সৌন্দর্য শাড়ি এইসব হাবিজাবি কথাও বলা যায়। তবে ঊনার এই একটা লেখা দিয়ে ঊনার অন্য কাজ মানে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের এইসব, ভ্রাম্যমান লাইব্রেরী, সেগুলাকে ছোট করে দেখার পক্ষপাতী না আমি। ব্যক্তি মানুষ আর তার কাজকে আলাদা করে দেখা শিখতে হবে আমাদের।
শর্মীঃ আমি তোর সাথে কিছুটা একমত। আমি আসলে খুব অবাক হইসি লেখাটা পড়ে। আমার কাছে মনে হইসে এই বুড়া বয়সে এসে ঊনি ঊনার আসল চেহারাটা উন্মোচন করে দেয়ার ভুলটা কেন করলেন বুঝলাম না। আমি নিজে তো সেই কবে থেকেই বিশ্ব সাহিত্ব কেন্দ্রের নিয়মিত সদস্য। পড়ে পরীক্ষাও দিতাম। কখনো কুরআনের অনুবাদ বা ইসলামিক কোনো বই দেখি নি। ইসলামের প্রতি আমাদের এই সো কল্ড সুশীল সমাজের যে একটা সূক্ষ্ম বিতৃষ্ণা আছে এবং সেটা যে ঊনারা খুব সাফল্যের সাথে আমাদের প্রজন্মের মাঝে ঢুকিয়ে দিতে পেরেছেন এটা বুঝতে আমার অনেক সময় লেগেছে কিন্তু। নিজে বুঝলেও মানুষকে কিভাবে বুঝাবো তা বুঝে উঠতে পারতাম না। এখন ঊনি নিজেই সেই কাজটা করে দিলেন।
স্নিগ্ধাঃ আমি বুঝলাম না যে ঊনার এই লেখার সাথে ঊনার ইসলাম বিদ্বেষ এইসব হাবিজাবি কথা কোথা থেকে আসতেসে? তোদের হুজুরদের এইটা একটা সমস্যা কিন্তু! সব কিছুতেই ইসলামকে টেনে আনিস আর ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাস। ভাল্লাগে না যত্তসব।
শর্মীঃ শোন, তোকে আমি বুঝায় বলি ব্যাপারটা। আমরা যখন মেয়েদের পর্দা করার দুনিয়াবী উপকার নিয়ে কথা বলি, তখন বলি যে এতে মেয়েদের Sexual objectification টা হয় না, মানে মেয়েদেরকে স্রেফ ভোগ্যপণ্য হিসেবে দেখার রাস্তাটা বন্ধ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে একটা Underlying assumption হচ্ছে ছেলেদের এটা একটা স্বাভাবিক প্রবণতা- মেয়েদেরকে এভাবে কামনার দৃষ্টিতে দেখা। আল্লাহর ভয়ে দৃষ্টি সংযত যদি নাও করে তাতেও যেন আর এক দিক থেকে একটা রক্ষা কবজ থাকে, I mean, তাকালেও খুব বেশী কিছু যেন দেখা না যায়। এই যুক্তি যদি দেখানো হইতো তখন সুশীল ছেলেরা এবং ছেলেদেরকে খুব আপন ভাবা মেয়েরা হইহই করে উঠতো। আজকালকার ছেলেদের জন্য নারী অধিকার নিয়ে কথা বলা এক ধরণের স্মার্টনেস, জাতে উঠার ক্রাইটেরিয়া হয়ে গেছে। তাই তুই ছেলেদের দেখবি যে বলতে যে আমরা কি পশু নাকি যে মেয়ে দেখলেই উলটাপালটা চিন্তা আসবে? শিক্ষিত, সম্ভ্রান্ত ছেলেরা মেয়েদেরকে সম্মান করে সেটা তারা যেমন পোশাকই পরুক না কেন, এভাবে ছেলেদের Civic sense কে অপমান করা হয় ব্লা ব্লা রাজ্যের কথা শুনবি। এখন এই লেখা থেকে বুঝা যাচ্ছে যে বই পড়ে আলোকিত মানুষরাও মেয়েদেরকে এভাবেই দেখে যেভাবে এতদিন হুজুররা claim করে এসেছে। তারা খুব দুঃখিত যে আজকালকার মেয়েরা ওত বেশী শাড়ী পরে না, ঊনাদেরও মেয়েদের শরীরের উঁচু নিচু ভাঁজগুলো দু চোখ ভরে দেখা হয় না।
স্নিগ্ধাঃ ওই, লেখাটা থেকে এমনে শব্দ তুলে ধরিস না তো, খুবই বাজে লাগতেসে কানে। খুব ভালগার লাগসে আমার কাছে লেখাটা।
শর্মীঃ তবে এই লেখাটা পড়ে আমার কাছে আরো একটা জিনিস হঠাৎ মনে হইসে।আল্লাহ কেন মানুষের ছবি আঁকতে নিষেধ করসেন এইটার যৌক্তিক ব্যাখ্যা এতদিন আমার কাছে কিছু ছিলো না। ভাস্কর্যের ব্যাপারটা বেশ ক্লিয়ার যে এতে মূর্তি পূজার দুয়ার উন্মুক্ত হয়ে যেতে পারে। কিন্তু এইবার এই লেখাটার সাথে যেসব চিত্রকর্ম দেয়া হইসে সেটা দেখে আমার মনে হইসে যে ছেলেদের ছবি আঁকতে দিলে ওরা ঘুরে ফিরে মেয়েদের ছবিই আঁকবে আর সেখানে মেয়েদের বাজেভাবেই উপস্থাপন করবে। আমার কাছে তো লেখাটার সাথের ছবি গুলাও রীতিমত অশ্লীল লাগছে। তখন আমার মনে পড়লো যে ফেসবুকে একটা গ্রুপে আমি গল্প পড়তাম মাঝে মাঝে। সেখানেও মানুষ তাদের চিত্রকর্ম পোস্ট করতো, ক্যান জানি সব এই বুকের আঁচল খোলা নয়তো বাঁকা হয়ে দাঁড়ানো নয়তো আলু থালু বেশের মেয়েই হইতো।
স্নিগ্ধাঃ হুম এইটা ভালো পয়েন্ট বলছিস। ছবিগুলা আমারো চোখে লাগসে। মানুষকে স্বাধীনতা দিলে যেসব ব্যাপারে মানুষ সীমা মেনে চলতে পারবে না, সেগুলোতেই নিষেধ করা হইসে মে বি
শর্মীঃ এক্স্যাক্টলি। আর একটা জিনিসের ছবি আঁকার জন্য কল্পনা তো লাগেই সাথে একবার হলেও সেটার দিকে গভীর দৃষ্টি নিয়ে তাকাতে হয়। প্র্যাক্টিসিং মুসলিম কারো এমন আলু থালু বেশে নন-মাহরাম মেয়ের দিকে তাকানোর সুযোগ নাই তো। আর নিজের মাহরাম মেয়ের ছবিতো কেউ এঁকে প্রদর্শন করতে চাবে না।
স্নিগ্ধাঃ হুম। তবে প্রকৃতির ছবি আঁকার ব্যাপারে তোর চিন্তাটা কী?
শর্মীঃ ওই যে, যার ছবি আঁকবে তার দিকে বারবার নিবিষ্ট মন নিয়ে তাকাতে হবে, চিন্তা করতে হবে.........আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করা, ভ্রমণ করা, দেখা এগুলোতো কুরআনে খুবই উৎসাহিত করা হয়েছে। মানুষ পরকালের অস্তিত্ব এমনিতেই বুঝার কথা এইসব সৃষ্টি বৈচিত্র্য নিয়ে গবেষোনা করলে।
স্নিগ্ধাঃ হুম বুঝলাম। তোর কথাটা ভালোই যুক্তিযুক্ত লাগছে আমার কাছে। ওই ফোন রাখি রে এখন, আম্মার ইন্সুলিন নেয়ার সময় হয়ে গেছে।
শর্মীঃ হ্যাঁ, যা। আমিও পড়তে বসবো এখন ইনশাল্লাহ। ভালো থাকিস, আল্লাহ হাফেয।
No comments:
Post a Comment