চারদিকে একটা গেল গেল রব উঠেছে। হেফাজতে ইসলামের লক্ষ লক্ষ দাঁড়িটুপি ওয়ালা হুজুররা নাকি দেশকে আফগানিস্তান বানিয়ে ফেলছে। মেয়েদের স্কুল-কলেজে যাওয়া, চাকরি করা সব বন্ধ হয়ে যাবে, মেয়েদের ঘরের মাঝে বন্দী জীবন কাটাতে হবে! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া এক ছোট বোন জানাল রোকেয়া প্রাচীসহ আরো কিছু মুক্তমনা সাংস্কৃতিক কর্মী হলে হলে গিয়ে মেয়েদের বুঝানোর চেষ্টা করছেন যে হেফাজতের দাবী যদি মেনে নেয়া হয় তাহলে মেয়েদের কি করুণ দশাটাই হবে!
তুমিও দেখি ভয় পেয়ে গেছ আমার ছোট্ট আপু! তোমার এই বেহাল দশা দেখে আমিও যে হতবিহবল হয়ে গেছি! তোমাকে আমার একটা প্রশ্ন করতে খুব মন চাইছে। প্রশ্নটা আমি তোমাকে করছি, রোকেয়া প্রাচীদের নয়। কারণ তোমাকেই আমি ব্যাগের মাঝে আলাদা ওড়না রাখতে দেখি নামায পড়ার জন্য। ওরা কি ভাবছে না ভাবছে আমার এতে কিছু এসে যায় না, কারণ ওরা ব্যাপারটা যতই আদর্শের মোড়কে উপস্থাপন করুক না কেন ওদের টেনশনের কারণ আসলে বাণিজ্যিক। মেয়েরা ঢেকে ঢুকে চললে
ওরা নাটক সিনেমা বানায়ে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করবে কাদের দিয়ে? দেশের শ্রেষ্ঠ বিজনেস স্কুলে চার বছর পড়ে এইটুকু বোঝার মত ঘিলু আমার মাথায় জন্মেছে!
তাই আপু আমার না বলা কথাগুলো আজ তোমাকেই শুনতে হবে, আর তোমাকেই দিতে হবে আমার প্রশ্নের জবাব, যা আমার ভিতরে কিলবিল করছে। আমার ছোট্ট আপু, আমাকে বলত, এই যে তুমি নামায পড় মোটামুটি নিয়মিত, রোযাও রাখ, কি বিশ্বাস নিয়ে কর এগুলা বলত? তোমার কাছে কি আসলেই ইসলামকে আল্লাহর কাছ থেকে আসা দ্বীন মনে হয়? যদি না হয় তবে এই আমলগুলো করে কি লাভ?বিশ্বাস ছাড়া আমলতো মূল্যহীণ! একবার কি Revisit করা যায় নিজের বিশ্বাসগুলো?
আর যদি তোমার ইসলামকে আল্লাহর কাছ থেকে আসা দ্বীন বলে মনে হয়, তবে তুমি বল আপু, আল্লাহ কি সবচেয়ে দয়ালু, ন্যায়বিচারক আর জ্ঞানী নন?নারীরা কি আল্লাহর সৃষ্টি নয়? তবে কিভাবে তোমার মনে হচ্ছে আল্লাহ নারীদের প্রতি বৈষম্য করবেন?
দাঁড়াও,আজ তোমাকে আমার জীবনের গল্প বলি একটু, শুনবা?
আমিও একদিন তোমাদের মতই ছিলাম যে তসলিমা নাসরিনের লেখার অন্ধ ভক্ত ছিলাম। ভারতীয় লেখকদের বইগুলো গোগ্রাসে গিলতাম। ঐ বইগুলোতে কি থাকত জানো? ভগবান নিজে পুরুষ, তাই মেয়েদের প্রতি খালি বৈষম্য করেন। মুসলিম হিসেবে এমন Personification of God তো আমি মানতাম না, তবুও প্রচ্ছন্ন একটা রাগ ছিল আল্লাহর প্রতি! তসলিমা নাসরিনের লেখা পড়ে আমিও ভাবতাম, Arranged Marriage নারীর প্রতি এক ধরণের অবমাননা, বিয়ের রাতে চিনিনা জানিনা এমন লোকের সামনে আমার সব কিছু কেন উন্মুক্ত করব আমি? খুবই যুক্তির কথা লাগত সেগুলো। আমি তখন তোমার মতই বুঝি নি যে এগুলো আমাকে পুরুষদের কাছে Available করে পণ্য বানানোর কৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। আমার নারীত্ব আমার শরীরের প্রদর্শনে নয়, আমার বুদ্ধিমত্তায়। যাই হোক, অনেক পরে, জীবনে অনেক ঘাটের জল খেয়ে আমি আমার রবকে চিনতে শিখেছি, আর আলিমদের কাছে দ্বীন শিক্ষা করে আমি প্রকৃত ইসলামের পরিচয় পেয়েছি। তখন জেনেছি কিভাবে তসলিমারা আমার দ্বীন নিয়ে মিথ্যাচার করেছে।নিজেকে তখন খুব প্রতারিত লেগেছে, জান? শুনলে অবাক হবা যে আমার স্বামীকে আমি বিয়ের দিনের আগে (২দিন আগে) একদিন দেখেছি খালি! গয়নার দোকানে ১৫-২০ মিনিটের জন্য। যখন দেখেছি তখন আমাদের বিয়ের প্রস্তুতি ১০০% সম্পন্ন! বিশ্বাস কর, একটুও ঘুরি নি, ফিরি নি, কিছুই করি নি, তবুও প্রথম রাতে তাকে আমার যতটা আপন লেগেছিল, যে পবিত্রতার অনুভূতি হয়েছিল, আমি নিশ্চিত, সে অনুভূতি বছরের পর বছর প্রেম করেও তুমি পাবা না!
যাই হোক, আমি বড্ড বেশি
কথা বলে ফেলছি, অসংলগ্ন কথা। মনটা বিক্ষিপ্ত হয়ে আছেতো, তাই!
যা বলছিলাম, ইসলাম DOMINANT FORCE
হলে যে জীবন যাপন করা
যাবে না ভেবে তুমি ভয় পাচ্ছ, ওই জীবন আমি যাপন করেছি বহুদিন। কিন্তু একদিনের তরেও
শান্তি পাই নি, জানো? তোমার চারপাশের অভিজ্ঞতা কেমন আমি জানিনা, তবে আমার জীবনে
আমি চারপাশে শুধু তথাকথিত All square,
Empowered Womenই দেখে এসেছি! সমস্যা
হচ্ছে আমি তাঁদের বাইরের সাফল্যের কাহিনীই
যে শুধু জানি তা নয়, তাঁদের ঘরের ভিতরের হাহাকারের খবরও জানি। আমি দেখছি তাঁদের
উপার্জিত অর্থ, সামাজিক স্ট্যাটাস আর শিক্ষাগত যোগ্যতা কিছুই তাদেরকে তাঁদের প্রাপ্য
সম্মানটুকু দেয় নি। আবার বলছি, জীবনে অনেক
ঘাটের জল খেয়ে আমি দেখেছি, যতদিন না একজন ছেলে আল্লাহকে ভয় করবে, ততদিন
পৃথিবীর কোন Variable তাকে মেয়েদের সম্মান করাতে পারবে না!
ইয়ে মানে আপু সত্যি
বলতে কি, তোমরা যখন বল যে ইসলাম আসলে নারীদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে, তখন আমার
কাছে সেটা খুব হাস্যকর লাগে! তুমি কি জান না যে মানবজাতির প্রতি আল্লাহর প্রথম
নির্দেশ কি ছিল? (ইক্বরা, পড়!)তুমি কি টের পাওনা যে ইসলামের একটি সামান্য হুকুমও
পালন করা যায় না এ ব্যাপারে বিস্তারিত না জেনে?আমি জানি, তুমি জান না যে কেউ যদি
ইসলাম নিয়ে গভীরভাবে পড়তে যায়, তবে শুধু এক আয়িশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)র Verdict এর উপর বিপুল সংখ্যক বই তাকে পড়তে হবে!
হ্যাঁ তোমার মনে হতে
পারে যে আমি শুধু দ্বীন শিক্ষার কথা বলছি। সত্যি কথা কি জান, আমি যখন IBAতে পড়তাম, তখন আমার
মাঝে মাঝেই মনে হত ফিনান্স পড়ে আমি কি করব! একদিন আমার এক সিনিয়র আপু, যিনি দুই
দুইটা বাচ্চা নিয়ে (এখন তিনটা :D ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্সে প্রথম শ্রেণীতে
প্রথম হয়েছেন, তিনি আমাকে পথ দেখিয়েছিলেন ইসলামিক ফিনান্স নিয়ে পড়ার। আজ এখন নিজের
conventional জ্ঞানকে ইসলামের পথে কাজে লাগানোর চেষ্টা করতে গিয়ে দেখি
ছেলেদের সাথে না মিশে, তাঁদের সাথে ঢলাঢলি (কথাটা কানে বাজে ঠেকলে স্যরি আপু, আজ
মেজাজটা একটু খারাপই আছে) দিব্যি পড়াশোনা করা যায় এবং কোটি কোটি কাজের সুযোগ আছে
আমার জন্য।
আমি এখন যেখানে আছি,
মালয়শিয়াতে, IIUM এ, এখানে এসে আমি বুঝেছি Islamization of Education বলতে আসলে কি বুঝায়! এখানে তুমি History, Sociology, Political Science,
Economics, law যাই পড় না কেন তোমাকে
সেটার Islamic Perspective এবং Islamic Implication পড়াবে! কি অভাবনীয়
অনুভূতি যে এটা বোন, তোমাকে আমি ঠিক লিখে বুঝাতে পারব না! এখানে এসে আমার মনে হয়
আমি রাজ্য পড়ে ফেলি! আগামী সেমিস্টার থেকে ইনশাআল্লাহ Islamic contract law এর উপর কোর্স করব কিছু, যেগুলা এখানে law faculty তে Undergrad এ পড়ায়। ফ্রি ফ্রি,
গিয়ে বসে ক্লাশ করলে কেউ কিছু বলে না, উল্টা আরো খুশী হয়। এখানে আমরা বাংলাদেশি
কিছু বোনরা মিলে একসাথে হয়ে Interdisciplinary আলোচনা করি। একটা
ইসলামিক বিষয় আমরা যে যার field থেকে অন্যদের সাথে শেয়ার করি। কী যে মজা, কী আর বলব!
আমার স্বামীর সাথে আমার
আলোচনার একটা প্রিয় টপিক হচ্ছে এই Interdisciplinary টপিক উদ্ভাবন করা।
বিভিন্ন discipline এর মানুষদের কিভাবে merge করা যায় এইটা নিয়ে আমরা
দীর্ঘক্ষণ গবেষণা করে কাটায় দিসি। আর একটা নোটে সেটার উদাহরণ দিব নে!
শুন আপু, মোদ্দা কথা
তোমাকে আমি বলি, ইস্লামিক্যালি বাচ্চারা মূলত মানুষ হবে তার মায়ের কাছে। সে ছেলে বাচ্চাই হোক আর মেয়ে বাচ্চা। আর
ভবিষ্যৎ উম্মাহর সদস্যদের Utmost
Importance দেয়া হয়েছে। তাই তাঁদের
Proper Upbringing নিশ্চিত করতে মায়েদের পড়াশোনা করতে হবে এটার কোন বিকল্প
নাই। দ্বীন শিক্ষার একটা basic level তো মুসলিম হিসেবে সবারই থাকতে হবে, তাছাড়াও, যে যেই discipline নিয়েই পড়তে চাক না কেন, সেটার Islamic implication আছে। Islamic society তে মেয়েদের ভরণ পোষণের
দায়িত্ব ১০০% ছেলেদের (এটা মেয়েদের motherhoodকে সম্মানিত করার
ক্ষুদ্র এক উপায়)। তাই যত ধরণের innovative, voluntary কাজ আছে, সেগুলার জন্য
মেয়েরা হচ্ছে শ্রেষ্ঠ। মনে কর যে একটা charity based organization এর website develop করতে হবে। ওরাতো টাকা
পয়সা বেশি দিতে পারবে না, তাই ছেলেদের জন্য এমন কাজ করাটা মুশকিল। তবে কে করবে এই
কাজ? একজন নারী!! যে কাজ যত voluntary আর Innovative, যেগুলার জন্য ভাত কপালে জুটে না, সেই কাজগুলা মেয়েদের।
কেন? কারণটা simple- My
money is my money, his money is also my money!!!!So no চিন্তা, Do furti!!!!!!!!!
তাই তোমাকে বলছি রে
আপুমণি আমার, এমন বেদিশা হওয়ার কিছু নাই, যদি সত্যিকার ইসলাম আসে তবে Islamization of Education এর মাধ্যমে তোমার পড়াশোনা হবে দারুণ অর্থবোধক, আর যদি
কেউ ইসলামের নামে অপব্যাখ্যা দিতে আসে, তবে Islamic Online University তে ইসলামিক স্টাডিজ এও
একটা অনার্স করতেছি। দলিল চেয়ে আর উসূল আল ফিকহের জ্ঞান দিয়ে তার হালুয়া টাইট করে
দিব ইনশাল্লাহ। এখন যে তসলিমা বা থাবা বাবা নয়, আলিমদের কাছে ইসলাম শিখে অস্ত্রের
তূণ ভরে রেখেছি!
হ্যাঁ, তোমাকেই বলছি
আপু, সত্যিকারের ইসলামটা কি এটা এর তার কাছ থেকে না শুনে, নিজেই পড়ো না কেন রে
আমার বোন?
অনেক confidence নিয়ে তোমাকে বলছি, Do not wait for role models to teach you authentic
Islam, BE THAT ONE, MY DEAR SIS!
No comments:
Post a Comment