২৮শে ফেব্রুয়ারীর পরে কিছু ভিডিও দেখেছিলাম যেখানে
দেখানো হয়েছিল পুলিশ কিভাবে ১০০% অকারণে শর্ট রেঞ্জে গুলি করে মানুষ মারছে। তখন
খুব কাছের অনেককে বলতে শুনেছিলাম পুলিশ নাকি বাধ্য হয়ে গুলি করছে এভাবে বৃষ্টির
মত। ওই ভিডিওগুলোর লিংক তাদের দিতে পারতাম, কিন্তু দেইনি, কারণ তাদের
ব্যক্তিগতভাবে চিনি, তারা কি প্রতিক্রিয়া দেখাবে তাও জানা ছিল। ভিতরে ভিতরে শুধু
একটা বোবা কান্না ডুকরে উঠত। জামাত শিবিরের Dehumanization এমন পর্যায়ে গেছে যে
ওদের সাথে কৃত অন্যায় নিয়ে কিছু বলা মানেই চিরতরে labeled হয়ে যাওয়া, সেটা আমি
জামাত শিবিরের সাথে সংশ্লিষ্ট কেউ না এটা
যতই established fact হোক না কেন। থাবা বাবা মানুষ, কিন্তু জামাত শিবিরের কেউ
মানুষ নয়।
রাজনৈতিকভাবে আমি বরাবরই অদূরদর্শী। তাই নিজের so called
শিক্ষিত পরিমণ্ডলের সদস্যদের হাবভাব দেখে ভেবেছিলাম, জামাত নিষিদ্ধ হলে আমরা যারা
জামাত করিনা কিন্তু ইসলাম practice করার চেষ্টা করি, তাদের জন্য ইসলামের বাণী
পৌঁছানো সহজ হবে। মনের এই চিন্তাটা মুখে ব্যক্ত করতেই polictical science এ পড়া
ছোট বোন বিভিন্ন দেশের কেস স্টাডি দেখিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিল যে ধর্মীয় রাজনৈতিক দল
নিষিদ্ধ করা যে কোন দেশে ইসলাম নিষিদ্ধ করার প্রথম ধাপ। আরেক কাছের বোন ভবিষ্যৎ
বাণী করে বলেছিল সরকারের এই আচরণ জামাতের সাথে নয়, ইসলামের সাথে। ওর কথাটার বাস্তব
প্রতিফলন এত তাড়াতাড়ি দেখতে পাব ভাবি নি, ভাবতে চাই নি।
IOU তে আলেমদের কাছে দ্বীন শিক্ষা করেও আমার ঈমান খুবই
দুর্বল স্তরের। কবরে গিয়ে একা থাকতে হবে চিন্তা করলেই আমার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসে,
আব্বুকে ওখানে রেখে আসছি তাও। To be honest, পরকালের বর্ণনা, ফিরাঊনের কাহিনী,
সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়ের প্রতি আল্লাহ্র আযাবের বর্ণনা কিংবা সিরিয়া,
প্যালেস্টাইনের কাহিনী আমার কাছে কেমন যেন theory theory লাগত। সূরা বাক্বারার
শুরুতে মুত্তাকীদের যে সব বৈশিষ্ট্যসমূহ বলা আছে তার মাঝে একটা হল তারা গায়েবে
নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করে। বহুদিন সিজদাতে গিয়ে দুআ করেছি আল্লাহ যেন আমার মাঝে ওই
বৈশিষ্ট্যগুলো এনে দেন। দুআটা যে এভাবে কবুল হয়ে যাবে তা ভাবি নি!!!
প্রবাসে নিরাপত্তার চাদরে আবৃত আছি দেখে আজকাল অনেকেই
হিংসা করেন।কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি ব্যাপারটা খুব আনন্দদায়ক লাগেনা এটা ভেবে যে এই
নিরাপত্তাটা একটা নিয়ামত। এর হিসাব কিভাবে দিব তা ভেবে কূল কিনারা করতে পারি না।যাই
হোক, রাতের বেলা যখন জানলাম যে কারেন্ট অফ করে দিয়ে, সংবাদকর্মীদের সরিয়ে দিয়ে
অভিযান চালানো হচ্ছে, আমার প্রথমে বিশ্বাস হতে চায়নি। এটা আসলে আগে নিজের যে
মানসিকতার বর্ণনা দিলাম সেটারই ধারাবাহিকতা। আমার দেশের সরকার আমার দেশের নিরস্ত্র
মানুষের উপর রাতের অন্ধকারে গুলি করছে এটাও যে আমার কাছে theory theory লাগত! এই
কথা যে আমি জীবনে বহুবার পরীক্ষার খাতায় লিখেছি! কিন্তু সেটা তো অন্য একটা বাহিনীর
বর্ণনা হিসেবে!! আমার দেশের পুলিশের তো নয়! তাই খুব অসহায় বোধ করাতে গভীর রাতে
কুরআন নিয়ে বসলাম। চোখে পড়ল সূরা হাক্কাহর (৬৯ নং সূরা) ২৭, ২৮, ২৯ নং আয়াত। জীবনে
প্রথমবার, প্রথমবারের মত আমি কিয়ামত দিবসকে ১০০% visualize করতে সক্ষম হলাম-
‘হায়!
(দুনিয়ার) মৃত্যুই যদি আমার শেষ (অবস্থা) হত! আমার ধন সম্পদ আমার কোন কাজে আসল না,
আমার (সব) ক্ষমতা আধিপত্য নিঃশেষ হয়ে গেছে...
আমার মনে হল কথাটা যেন আমাদের রাজনীতিবিদরাই বলছে। আমি
পাতা উল্টাতে থাকলাম...সূরা জুমুআহ, সূরা কিয়ামাহ......আমি টের পেলাম যে আমি ওই
দিবসটাকে feel করতে পারছি, আমি আরো উপলব্ধি করলাম, আমি ওই্ দিনটাকে ভিতর থেকে চাওয়া শুরু করেছি.........ওই
দিন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে যে! আমি পড়লাম সূরা বুরুজ...আমার মনে পড়ল এর
তাফসীরের ঘটনাটা, যেখানে জালিম শাসক বিশ্বাসীদের পুড়িয়ে মেরেছিল। আমি অনুভব করলাম
ওই ঘটনাটা অসম্ভব কিছু ছিল না।
তারপর আমার চোখ গেল সূরা শামস এ। এইবার এই সূরার তাফসীরে
শোনা একটা কথা মনে করে আমি সমূলে কেঁপে উঠলাম। ওখানে বলা হয়েছিল যে যদিও সালিহ আলাহি
ওয়াসাল্লামকে নিদর্শন স্বরূপ দেয়া উটকে হত্যা করেছিল সম্প্রদায়ের মাত্র ৯জন মানুষ,
আল্লাহ নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিলেন গোটা জাতিটিকে। কারণ ওরা কেউ অন্যায়টাকে বাঁধা দেয়
নি। আমরা অনেকেই আল্লাহ্র গযব চাইছি, কিন্তু একবারো কি ভেবে দেখেছি যে আল্লাহ যদি
পাকড়াও করা শুরু করেন আর সেটা যদি আমাকে দিয়ে শুরু হয়, তবে কেমন হবে ব্যাপারটা?
অনেকদিন ধরে আমাদের এলাকায় একটা দুর্যোগ due হয়ে আছে। আমি সেটার নাম নিচ্ছি না।
কিন্তু সাভার কি আমাদের বুঝিয়ে দেয় নি সেমনটি হলে আমাদের মুকাবিলার শক্তি কতটুকু?
রাতটা কোন রকমে কাটল। সকালে প্রাথমিকভাবে জানলাম
সংখ্যাটা ৪০০ র মত।চেতনার পতাকাবাহীদের অসামান্য সাফল্য হিসেবে জামাত শিবিরের
duhumanization টার না হয় basis পাওয়া যায়। কিন্তু মাদ্রাসার এই হাজার হাজার
মানুষদের? তাই এই বোকার হদ্দ আমি স্বপ্নেও কল্পনা করি নি যে হলুদ মিডিয়াকে বিশ্বাস করে গতকালকের ঘটনায়
১৫-২০জন মারা গিয়েছে এ কথা কেউ বলতে পারেন বা কুরআন পুড়ানোর ঘটনায় মাছের মায়ের
পুত্রশোক দেখাতে পারেন। তাই কিছু মানুষের প্রতিক্রিয়া পড়ে এইবার আমি সত্যিকার
অর্থেই বোবা হয়ে গেছি। তারপর আস্তে আস্তে হুঁশ ফেরার পর বুঝেছি, যাদের দিন কাটে
হিন্দী সিরিয়াল আর রিয়েলিটি শো দেখে,যাদের প্রতিটা রক্ত মাংস হারাম আয় দ্বারা
পরিপুষ্ট তাদের কাছে আমি কিভাবে আশা করব যে তারা একদিনে সত্য আর মিথ্যার মাঝে
পার্থক্য করতে পারবেন? যদি পারতেনই, তবে তো জীবনের উদ্দেশ্য নিয়েই ভাবতেন সবার
আগে..................এটা একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, হুট করে কিছুই হয় না। কিন্তু
তাদের উদ্দেশ্যে বলছি-----যদি ভেবে থাকেন এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবং খুব শীঘ্রই
আমরা আবার আগের Heedless জীবনে ফিরে যেতে পারব, তাদের কাছে humble reminder,
ভৌগোলিকভাবে আমাদের দেশের অবস্থান অত্যন্ত, অত্যন্ত crucial। অর্থমন্ত্রী যে
ভারতীয় রুপী চালু করার কথা বলেছেন সেটার কি ভয়াবহ অর্থনৈতিক implication আছে, তা
ইসলামী অর্থনীতি না পড়লে আপনি বুঝবেন না। গতকালকের এই ঘটনার পর মাদ্রাসার
ছাত্রগুলো যদি সহিংস হয়,(আমি আশা করি তা হবে না) তাহলে তাদেরকে একাজে আজ বাধ্য করে, কাল বাংলাদেশকে বহির্বিশ্বের
সামনে উপস্থাপন করা হবে জঙ্গী রাষ্ট্র হিসেবে। আর তাতে কারা লাভবান হবে তা বুঝার
মত ঘিলু আশা করি সবার আছে। তাই এখুনি যদি আমরা আমাদের করণীয় উপলব্ধি না করি, তবে
আমাদের নিজেদের লাশের গন্তব্যও তুরাগ বা বুড়িগঙ্গা হতে দেরি নেই!
সবার শেষে শুধু একটা কথা বলব। A believer never loses
hope। তাই আমি এত কিছুর পরও আশাবাদী। আমি এখন একটি productive muslim এর জীবন
কাটানোর ব্যাপারে আরো দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আমি এখন পরকালের বর্ণনা visualize করতে পারি।
৫ই মে আমাকে এই বিশাল উপহারটি দিয়েছে। এক দ্বীনী বোন মুহাম্মাদ আল জিবালীর
বারযাখের জীবন বইটা অনুবাদ করছেন স্বউদ্যোগে।সেখান থেকে একটা বিশাল হাদীসের অংশ
তুলে দিচ্ছি---------
"যখন একজন মু'মিন বান্দাহর এই
পৃথিবী চলে ছেড়ে যাওয়ার
এবং পরজগতে প্রবেশের মূহুর্ত উপস্থিত হয়, তখন আকাশ থেকে ফেরেশতারা নেমে আসেন।তাঁদের মুখমণ্ডলসমূহ সূর্যের
মত সাদা আর (উজ্জ্বল)। তাঁরা তাঁদের সঙ্গে জান্নাহ থেকে কাপড় ও সুগন্ধি নিয়ে আসেন।তাঁরা ওই
ব্যক্তির কাছ থেকে কিছুটা দূরে কিন্তু তার দৃষ্টিসীমার মধ্যে বসেন। এরপর মালাকুল-মাঊত
(মৃত্যুর
ফেরেশতা ) উপস্থিত হয়ে তার মাথার কাছে বসেন এবং বলেন," হে ভালো ও
প্রশান্ত আত্মা ! আল্লাহর ক্ষমা এবং সন্তুষ্টিতে বের হয়ে আস।" একথা শুনে আত্মাটি শরীর ছেড়ে
সহজেই বেরিয়ে আসে যেমন সহজে পানির পাত্রের মুখ থেকে পানি
প্রবাহিত হয় এবং তিনি (মালাকুল-মাঊত) তা গ্রহণ করেন।যখন আত্মাটি শরীর ছেড়ে বেরিয়ে
আসে,তখন আকাশ ও
পৃথিবীর মাঝখানে যত ফেরেশতা আছেন, এবং আকাশে যত ফেরেশতা আছেন,তাঁরা সবাই তার
জন্য ছলাহ পাঠ করতে থাকেন ( অর্থাৎ,দু'আ করতে থাকেন যে, তাকে যেন মাফ করে
দেয়া হয়)।তার জন্য আকাশের সমস্ত দরজা খুলে দেয়া হয়, এবং প্রতিটি দরজার
প্রহরী
আল্লাহর কাছে অনুরোধ করতে থাকেন, যেন এই আত্মাটি
তাঁদের দিকে ঊর্ধ্বারোহণ করে। মালাকুল-মাঊত (মৃত্যুর ফেরেশতা ) আত্মাটি গ্রহণ করার সাথে
সাথেই ( তাঁর সঙ্গী) অন্য ফেরেশতারা চোখের পলকে এটিকে তাঁর
কাছ থেকে নিয়ে নেন,এবং একে তাঁদের
(সঙ্গে আনা জান্নাতের) কাপড় ও সুগন্ধির মধ্যে স্থাপন করেন।এ
প্রসঙ্গে আল্লাহর আয়াত :<------আমার (প্রেরিত)
রাসূলরা (ফেরেশতারা) তার মৃত্যু ঘটায়, এবং তাঁরা কখনই তাঁদের দায়িত্বে অবহেলা করে না।> (৬:৬১)
এই আত্মা দিয়ে তখন পৃথিবীতে বিদ্যমান সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ কস্তুরীর সুগন্ধের মত সুঘ্রাণ বের হতে থাকে। ফেরেশতারা তখন এই আত্মাকে নিয়ে উপরে উঠতে থাকেন।যখনই তাঁরা (অন্য) কোনো ফেরেশতাদের দলের সম্মুখীন হন, তাঁরা জিজ্ঞাসা করেন,"এই ভালো আত্মাটি কার ?" উত্তরে তাঁরা (আত্মাবাহী ফেরেশতারা ) বলেন,"ঊনি হলেন অমুকের ছেলে (বা মেয়ে) অমুক" আর পৃথিবীর বুকে তাকে যেসব ভালো নাম ধরে ডাকা হতো, সেগুলো উল্লেখ করেন।তাঁরা সর্বনিম্ন আকাশে পৌছানোর পর সেখানে ঢোকার অনুমতি প্রার্থনা করেন। আর,তাঁদের জন্য দরজা খুলে দেয়া হয়।ওই আকাশের সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত ফেরেশতা তাঁদেরকে সঙ্গ দিয়ে পরবর্তী আকাশে নিয়ে যান।এভাবে তাঁরা চলতে থাকেন যতক্ষণ পর্যন্ত না তাঁরা সপ্তম আকাশে পৌঁছে যান। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তখন বলেন,"আমার বান্দাহর রেকর্ড ইল্লিইউনে লিখে রাখ।"এবং কী তোমাকে জানাবে যে ইল্লিইউন কি? তা হচ্ছে খোদাই করা রেজিস্টার (নিবন্ধনগ্রন্থ)।"(৮৩:১৯-২১).এভাবে তার রেকর্ড ইল্লিইউনে লিপিবদ্ধ করা হয় এবং ফেরেশতাদেরকে বলা হয়,"তাকে মাটিতে ফেরৎ নিয়ে যাও।কারণ,আমি তাদেরকে ওয়াদা করেছিলাম যে,মাটি থেকে তাদেরকে আমি সৃষ্টি করেছি,এর মধ্যেই তাদেরকে আমি ফেরৎ পাঠাবো, এবং তা থেকেই তাদেরকে আমি আরেকবার পুনরুত্থিত করব।" এই আত্মাকে তখন পৃথিবীতে ফেরৎ নিয়ে আসা হয় এবং একে তার শরীরের মধ্যে স্থাপন করা হয়। আর সে তখন তার সঙ্গীদের জুতার শব্দ শুনতে পায় যে তারা (তার দাফন সম্পন্ন করে) কবরের কাছ থেকে হেঁটে চলে যাচ্ছে।
আলহামদুলিল্লাহ, আমি এখন এমন দারুণ মৃত্যুর জন্য
প্রতীক্ষা করছি যখন আমাকে সূরা ফাজরের শেষ
তিনটা আয়াত বলা হবে ইনশাআল্লাহ।আপনি করছেন তো? পরকাল সত্য, এক ফোঁটা সন্দেহ নেই।
আপনি তো জানতে চান কালরাতে আসলে কি হয়েছে, তাই না? ঐদিন LIVE দেখতে পাবেন
ইনশাআল্লাহ। আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি ঐ দিনের জন্য, আর সাথে প্রস্তুত হচ্ছি সেদিন
হাস্যমুখে থাকার জন্য। আপনি?
No comments:
Post a Comment