ফেসবুকে মেসেজটা
পেয়ে একটু চমকে উঠল মুমু। যার হাত ধরে ইসলামের পথে হাঁটি হাঁটি পথ চলা, সে খুব আন্তরিকতা
নিয়ে ওকে ফেবুতে ক্রস জেন্ডার ইন্টার্যাকশনের ব্যাপারে সতর্ক হতে বলেছে। একটা ব্রাদারের
সাথে মুমুর ফেসবুক কনভার্সশনের স্ন্যাপশটও তুলে দিয়েছে। তারপর ছোট্ট করে নিচে লিখেছে
সামনাসামনি এভাবে কি ঠিক এই কথাগুলোই বলবে ও ওই ভাইয়ের সাথে?
প্রশ্নটা
একটা চাবুকের মত যেন এসে ওকে আঘাত করল......হুম! আসলেই তো! সামনাসামনি তো এখন আর এভাবে
তো দূরের কথা অপ্রয়োজনে ভাইদের সাথে কথাই বলে না! হোক সে বড় বা ছোট! ভার্চুয়াল জগতটা
আসলেই একটা ধোঁয়াশাপূর্ণ জগত। ঠিক ভুলের নিশ্চিত জ্ঞানগুলোও কেমন যেন বিলুপ্ত হতে বসে!
হঠাৎ করে এটা নিয়ে একটা ভিডিওর কথা মনে পড়ল মুমুর। কিছুদিন আগে আরেক দ্বীনী
বোন ট্যাগ করেছিল, খুব জোর দিয়ে বলেছিল দেখতে। কিন্তু তখন IOU এর final এক্সাম চলছিল বলে দেখা
হয়ে ওঠে নি। এখন দেখল...
দুটো লিটমাস
টেস্টের কথা বলা হয়েছে ভিডিওটাতে। মাশাল্লাহ খুবই কার্যকরী! প্রথমটা হচ্ছে
কোনো নন মাহরামের সাথে কথা বলার সময় খেয়াল রাখব যে আমার বাবা,ভাই বা স্বামী এমন কেউ
সামনে থাকলেও আমি কি এভাবেই কথা বলতাম কী না। আর দ্বিতীয়টা হচ্ছে আমাকে কারো সাথে কথা
বলতে দেখে দূর থেকে কেউ যেন এটা না ভাবতে পারে যে আমাদের মাঝে অন্যরকম বা স্পেশাল কোনো
সম্পর্ক আছে।
ধুম করে ২টা
টিপস মুমু ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড এ অ্যাপ্লাই করে ফেলল। আসলেই তো! ওর কথা বলার ধরণে নিশ্চয়ই
কোনো সমস্যা ছিল যা আয়িশার চোখে লেগেছে, নাহলে তো আর ও এই মেসেজই পাঠাতো না!
এবার থেকে
সতর্ক হয়ে যাবে মুমু ইনশাল্লাহ। ভিডিওটা শেয়ার দিলো নিজের ফেসবুকে।
মুমুর শেয়ার
দেয়া ভিডিও চোখে পড়ল নূপুরের। ওখানে বলা কথাগুলো শুনতে শুনতে নিজের অজান্তেই আনমনা হয়ে গেলো নূপুর। .........কোনো নন
মাহরামের সাথে কথা বলার সময় আমরা খেয়াল রাখব যে আমার বাবা,ভাই বা স্বামী এমন কেউ সামনে
থাকলেও আমি কি এভাবেই কথা বলতাম ? আর আমাকে কারো সাথে কথা বলতে দেখে দূর থেকে কি এটা
মনে হচ্ছে যে আমাদের মাঝে অন্যরকম বা স্পেশাল কোনো সম্পর্ক আছে?
.........এই
কথাগুলো যদি কেউ ওকে আগে বলত! কত ভুল হয়ে গেছে! চোখে ভেসে উঠল সায়মার ফ্যাকাশে মুখ!
অপারেশনের আগে হাত ধরে মাফ চেয়েছিল নূপুরের। বলেছিল ভাবী আমাকে মাফ করে দিয়েন, অনেক
বেয়াদবী করেছি আপনার সাথে..............সাথে আরো বলেছিল কেন এমন করত ও!
সায়মা আর
মারুফের বিয়ের ঘটক নূপুর নিজে। বড় ভালবেসে ছোট্টবেলার বান্ধবীর ছোট বোন সায়মার সাথে
দেবর মারুফের বিয়ে দিয়েছিল ও। বড় বোনের বান্ধবী হিসেবে যে সম্পর্কটাই ছিল খুব আন্তরিক,
জা হয়ে এসে সেই সম্পর্কটা কেমন তিতা হয়ে গেল! সায়মার উপর খুবই বিরক্ত ছিল নূপুর। এমন
শিক্ষিত একটা মেয়ে এমন সন্দেহবাতিক হয়? নুপূরের বিয়ের সময় মারুফ ক্লাস টেনে পড়ে। নিজের
ছোট ভাই এর মত করে মানুষ করেছে ওকে। তাকে নিয়ে সন্দেহ?
আজ মনে হচ্ছে
ভুলটা ওদেরই ছিল। ছোট হোক আর বড়, যে নন মাহরাম, সে তো নন মাহরামই! সায়মা হাসপাতালের
বেডে শুয়ে ওকে বলেছিল একদিন মারুফ আর নূপুর কথা বলছিল, দূর থেকে ওদের কথা বলার ভঙ্গী
দেখে সায়মার মাথায় নাকি রক্ত উঠে গিয়েছিল...
No comments:
Post a Comment