ঘটনা ১:
২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের কথা।নানাবাড়ি
রংপুর গেছি সপরিবারে, সেখান থেকে দিনাজপুর (দাদাবাড়ি) যাওয়ার পরিকল্পনা। দেখতে দেখতে আব্বু চলে যাওয়ার একটা বছর পার হয়ে গেছে,উদ্দেশ্য-তার ‘মৃত্যু বার্ষিকী’ পালন করা। এই উপলক্ষে গ্রামের বাড়িতে লোক খাওয়ানো হবে ইত্যাদি......হঠাৎ ডাইনিং টেবিলে নাস্তা খেতে খেতে আমার এক আত্মীয় বললেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর জীবদ্দশায় ঊনার এই যে এত আত্মীয়, সাহাবীরা মারা গেছেন, উনি কি কারো মৃত্যু বার্ষিকী উদযাপন করেছেন? ঊনারা যা করেন নি তা আমরা কেন করব? আমি কথাটা শুনে খুব অবাক হয়ে ভাবতে থাকলাম যে ঊনারা যা করেন নি তা আমরা করতে পারব না, এটা কেমন কথা? আমরা যা করছি, তাতো খারাপ কিছু না! গরীব মানুষদের খাওয়ানো হবে, আব্বুর কবরে গিয়ে সূরা ইয়াসীন পড়া হবে----------সবই তো ভাল কাজ!!
কিন্তু অস্বীকার করব না যে কথাটা ব্রেনের কোথাও গিয়ে অনুরণন সৃষ্টি করেছিল। শুধু তাই না নানা, আব্বু, নানী পরপর তিন মাসে তিনটি আকস্মিক মৃত্যুর পর বিপর্যস্ত আমরা বাসার সন্নিকট মসজিদে ঈদ এ মিলাদুন্নাবীর দিনে (একটা ভাল দিনে) ‘দুআ’র আয়োজন করেছিলাম, সেখানেও আত্মীয়দের একটি অংশ আসেন নি, বলেছিলেন এগুলো নাকি ‘বিদআত’ .....
ঘটনা ২:
জীবনে কাংখিত সাফল্য সব পেতে পেতে খুব ফুরফুরে একটা জীবন কাটাচ্ছিলাম,
হঠাৎ করেই আব্বু চলে গেলেন। তারপর থেকে ভয়াবহ বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হতে আমার অবস্থা যাকে বলে পুরা কেরোসিন! আব্বুর জন্য কী করা যায় এই চিন্তায় অস্থির দিন কাটে। হঠাৎ মনে পড়ে গেল এক বন্ধুর কাছে শোনা একটা আমলের কথা- কবরস্থানে গিয়ে সূরা ইয়াসীন পড়া! আরো মানুষের কাছে শুনলাম সূরা ইয়াসীনের নানা ফযীলাতের কথা। তাই শুনে তখন ৪০বার সূরা ইয়াসীন পড়ে একটা খতম দিয়েছি আমি!তারপরও নিয়মিত ওটা পড়তাম,সাথে কল্পনা করতাম যে, আমি আব্বুর কবরস্থানে দাঁড়িয়ে এটা পড়ছি!
ঘটনা ৩:
আমি ছোটবেলায় যার কাছে আরবি শিখতাম, ঊনি আমাকে একটি বিশেষ নামায শিখালেন যেটা জুমুআ দিনে পড়ে সওয়াব বর্ষায় দেয়া যায়... (মানে ওই নামাযের সওয়াবটা যাকে চাবেন, তার আমলনামায় যোগ হবে)আমি বহুদিন আব্বুর জন্য ওই আমলটা করেছি।
আজকে যারা এই নোটটা পড়ছেন, তাদের বলছি, উপরের সবগুলো ঘটনা আমার নিজের জীবনের টুকরা কাহিনী। কিন্তু সম্ভবত exclusively তা শুধু আমার জীবনের গল্পই নয়। তখনকার আমি প্রতিনিধিত্ব করতাম আমার দেশের কোটি কোটি তরুণ ছেলে মেয়ের যারা ইসলাম যে জেনে বুঝে পালন করার বিষয় –এই কনসেপ্ট টার সাথেই আদৌ পরিচিত নয়। অথচ ‘বিদআত’- এই টার্মটা বহুবার শুনেছে এবং নিশ্চিতভাবেই এর মানে জানে না!
এইসব ঘটনাগুলো ঘটার পর আমার জীবনের গতিপথের অনেক পরিবর্তন এসেছে, বিশ্বমানের আলিমদের কাছে ইসলাম শেখার চরম সৌভাগ্য হয়েছে। কিন্তু সমাজের যে অংশের প্রতিনিধিত্ব আমি করেছি সুদীর্ঘকাল, তাদের অবস্থার বিশেষ কোন পরিবর্তন হয় নি। তাই যখন কারণে অকারণে মানুষকে ‘বিদআত’ শব্দটা ব্যবহার করতে দেখি, আর আশেপাশের মানুষগুলোকে এর সংজ্ঞা নিয়ে গোলকধাঁধায় পড়ে থাকতে দেখি তখন বুকের ভেতর থেকে একটা কষ্ট হয়, খুব তীব্র কষ্ট! ইসলামের মৌলিক কোন বিষয়গুলোই আসলে রকেট সাইন্স নয় যে বোঝা খুব কষ্টকর। আসুন ব্যাপারটা একটু বোঝার চেষ্টা করি, আর আমাদের চারপাশে খুব প্রচলিত কিছু ‘বিদআত’ চেনার চেষ্টা করি।
ইসলাম মানুষের জীবনের কাজগুলোকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করেছেঃ
§ ইবাদাত (যা মানুষ করে সে মুসলিম বলে, আর মূল উদ্দেশ্য থাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। যেমনঃ নামায, রোযা, কুরআন পাঠ ইত্যাদি )
§ মু’মালাত (যা মানুষ করে সে স্রেফ মানুষ বলে, আর মূল উদ্দেশ্য থাকে জৈবিক প্রয়োজন মেটানো। যেমনঃ খাওয়া, ঘুম, চাকরি ইত্যাদি)
ইসলামে সকল ইবাদাতের একমাত্র উৎস হল ওহী।তাই এক্ষেত্রে starting assumption হচ্ছে সবকিছুই হারাম, যা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল শিখিয়ে গেছেন, তা ব্যতীত। কেউ যদি আপনাকে বিশেষ কোন নামায শেখায় (যেমনটি আমার আরবী টিচার আমাকে শিখিয়ে ছিলেন)তবে মূল নিয়ম হচ্ছে তা নিষেধ, যতক্ষণ না আপনি প্রমাণ পাচ্ছেন যে এটা সহীহ সুন্নাহতে আছে, সাহাবীরা করেছেন!
অন্যদিকে মু’মালাতের ব্যাপারে starting assumption হচ্ছে সবকিছুই হালাল, যা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল নিষেধ করে গেছেন, তা ব্যতীত। কেউ যদি আপনার সামনে কোন খাবার নিয়ে আসে, তবে মূল নিয়ম হচ্ছে তা জায়েজ, যতক্ষণ না আপনি প্রমাণ পাচ্ছেন যে এটা সহীহ সুন্নাহ বা কুরআনে নিষেধ করা হয়েছে।
তাহলে ‘বিদআত’ কি? ‘বিদআত’ হচ্ছে ইবাদাতের ক্ষেত্রে উদ্ভাবন। অর্থাৎ ইবাদাতের ক্ষেত্রে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও তাঁর সাহাবীদের ‘ইচ্ছাকৃত বর্জন’।
এই বিশেষণটা যেন আমরা জীবনেও না ভুলি- ইবাদাতের ক্ষেত্রে ‘ইচ্ছাকৃত বর্জন’।
এটা মনে রাখলে ‘বিদআত’ চেনা খুব সহজ হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ! আসুন নিচের স্টেপ গুলো follow করার চেষ্টা করি-
ü কাজটা কি আপনি ইবাদাত মনে করে করছেন?
ü যদি করে থাকেন তবে এটা কি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও তার সাহাবীদের জানা ছিল?
ü যদি জানা না থাকে, তবে এটা ‘বিদআত’, কারণ ওহীর ব্যাপারে আপনি উনাদের চেয়ে বেশি জানেন না কোনভাবেই এবং এটা আমাদের জন্য প্রয়োজনীয় কোন জ্ঞান নয়।
ü যদি জানা থাকে, তবে ঊনারা কি এটার উপর আমল করেছিলেন?
ü যদি করে থাকেন, আলহামদুলিল্লাহ্, আমরাও করতে পারি।
ü যদি জেনে থাকেন,কিন্তু তারপরও না করে থাকেন তার মানে এটা ‘বিদআত’, কারণ ‘ইচ্ছাকৃত বর্জন’ ছিল।
যখন ইবাদাত এবং মু’মালাতের এই অতি গুরুত্বপূর্ণ
শ্রেনীবিভাগের বিষয়টি পরিষ্কার না করেই আমরা কাউকে বলে দেই যে আল্লাহর রাসূল ও তার সাহাবীরা যা করেন নি তা করাই হচ্ছে ‘বিদআত’,তখন নিশ্চিতভাবে প্রশ্ন ওঠে যে তাহলে কি প্লেনে চড়া ‘বিদআত’? কম্পিউটার ব্যবহার করা? Common sense দিয়েই আমরা বুঝি যে তা নয়। এভাবে পরোক্ষভাবে কিন্তু আমরা ভয়ংকর একটা পাপ কে হাস্যস্পদ করে তুলি মানুষের কাছে! এখন নিশ্চয়ই বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে, কারণ প্লেনে সাধারণত কেউ ইবাদাত মনে করে চড়ে না, আর আল্লাহর রাসূল ও তার সাহাবীরা প্লেনে চড়া ইচ্ছাকৃত ভাবে বর্জন করেন নি!!!
বিদাআতের ব্যাপারে একটা খুব common কথা হচ্ছে যে এগুলোতো ভাল কাজ, তাহলে করতে কি অসুবিধা। মাননীয় পাঠক, বিদআত যেহেতু ইবাদাতের সাথে সংশ্লিষ্ট, তাই তা ভাল কাজ হতে বাধ্য। কিন্তু আল্লাহ বলেছেনঃ
“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।” (৫:৩)
রাসূল (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম)নিজেও বলে গেছেন - “নিশ্চয়ই সর্বোত্তম বাণী আল্লাহ্র কিতাব এবং সর্বোত্তম আদর্শ মুহাম্মদের আদর্শ। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হল (দ্বীনের মধ্যে) নব উদ্ভাবিত বিষয়। আর নব উদ্ভাবিত প্রত্যেক বিষয় বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআত হল ভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৩৫ ও সুনান আন-নাসায়ী, হাদীস নং ১৫৬০]
“যা কিছু কাউকে জান্নাতের নিকটবর্তী করে অথবা আগুন থেকে দূরবর্তী করে তার এমন কিছুই নেই যা কিনা তোমাদের জন্য স্পষ্ট করে বর্ণনা করা হয়নি” [তাবারানীর আল মুজাম আল কাবির, আলবানীর মতে সহিহ]
উপরের referenceগুলো থেকে এই বিষয়টি crystal clear যে বিদআত উদযাপনের অর্থ হল আপনার বুদ্ধি দিয়ে আপনি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার একটি উপায় আবিষ্কার করেছেন, যা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও তার সাহাবীদের জানা ছিল না। আর না হয়, এমন কোন উপায় আগে থেকেই ছিল কিন্তু রাসূল (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দ্বীন প্রচারের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেন নি!!!!!!! আমরা কি বুঝতে পারছি, যে এই দুটোর যে কোনো একটা বিষয় দূরতমভাবে বিশ্বাস করলেও সেটা আমাদের ইসলামের বাইরে নিয়ে যায়?
নোটের শুরুতে আমি তিনটি বিদআতের উদাহরণ দিয়েছি। সেগুলো কিভাবে বিদাআত হল তা কি আমরা উপরে প্রদত্ত মূলনীতির আলোকে বুঝতে পারছি?আমাদের মাথায় রাখতে হবে যে মৃত ব্যক্তির কিভাবে উপকার হয় তা গায়েবের জ্ঞানের সাথে সংশ্লিষ্ট। আর গায়েবের জ্ঞানের ব্যাপারে আমাদের ১০০ ভাগ নির্ভর করতে হবে ওহীর উপরে।
অনেক সময় দেখা যায় আমরা বিদআতগুলোকে নানা রকম নাম দিয়ে প্রতিস্থাপন
করার চেষ্টা করি। যেমন মিলাদকে দুআ। আবার সবাই মিলে কুরআন ভাগ করে তিলাওয়াত করা, একবার খতম দেয়া------করি কারণ তাতে আমাদের দুআ কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। কিন্তু আমরা ভুলে যাই, কুরআন খতম দেয়ার এই প্রথাটাই ইসলামিক না। কারণ এভাবে না বুঝে তিলাওয়াত করে 'খতম' দেয়ার জন্য নাযিল হয় নাই। এটা নাযিল হয়েছে জীবনে ধারণ করার জন্য, প্রতিটা মুহুর্তে আমল করার জন্য!
এগুলোর সাথে যোগ হওয়া দরকার গতকাল পালিত ঈদ এ মিলাদুন্নাবী- জশনে জুলুছ! পেপারে দেখলাম কোন মাইছভান্ডারী নাকি এবার ২৫ লাখ লোকের সমাবেশ ঘটাবে---------সকল ঈদের বড় ঈদ বলে তারা এই যে এটা পালন করছে, এত খানাপিনা, আয়োজন-------এগুলার সাথে প্রকৃত ইসলামের দূরতম সম্পর্ক থাকার সম্ভাবনাও ক্ষীণ
ইসলাম টলটলে পরিষ্কার, বিশুদ্ধ পানি দিয়ে কানায় কানায় ভর্তি একটি গ্লাসের মত। আপনি যদি এতে নতুন কিছু যোগ করতে চান, তবে কিছু পরিষ্কার পানি ফেলে দেয়া ছাড়া উপায় নেই। বিদআতের ব্যাপারটাও ঠিক সেরকমই! সমাজে বিদআতের প্রচলনের অর্থ সুন্নাত উঠে যাওয়া! যেমনটা গতকাল শেখ তৌফিক চৌধুরীর পেইজে দেখলাম স্ট্যাটাস দিয়েছেন-
We don't do a sin
except that we leave a good deed by it. In the same way, we do not do a bidah
except that we leave a sunnah at the same time. The more sins and bidahs in our
ummah, the faster our good deeds and the Prophet sallallahu alahi wa sallam's
sunnah will be lost. Pay heed to this my people and come back to the straight
path.
আর সবাইকে এটা নিয়ে মাতামাতি করতে দেখে( বামপন্থীরাও
শুনলাম মহাসমারোহে পালন করছে) দয়া করে বিভ্রান্ত হবেন না প্লিজ......কারণ তারা চায় সমাজে এইগুলার প্রচলন বাড়তে থাকুক। শয়তানের সবচেয়ে প্রিয় কাজ হল আপনাকে বিদআতে লিপ্ত রাখা, কারণ আপনি এটা ইবাদাত মনে করে করছেন, আর এজন্য কখনও অনুতপ্ত হবেন না! এরা চায় আমরা অশিক্ষিতের মত এই দূষিত ইসলাম নিয়েই মেতে থাকি!
বিদআত থেকে দূরে থাকার জন্যই যে শুধু এটা চেনা প্রয়োজন, তা নয়, অন্যকে খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকতে বলার জন্যও...।আমি অনেককেই ঠাস ঠাস করে এটা বিদআত ওটা বিদআত এভাবে মন্তব্য করতে শুনেছি। এর ফলে মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়......কোন কাজ বিদআত না হলেও সেটা হারাম হতে পারে। যেমন ধরুন ভ্যালেন্টাইন ডে উদযাপন। এটা নিষিদ্ধ অমুসলিমদের সংস্কৃতির অংশ যা ইসলামের স্পিরিটের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক বলে, এটা কেউ ইবাদাত মনে করে করে না, তাই একে বিদআত বলে আখ্যায়িত করার সুযোগ নেই!
অনেকে বলেন যে এই দিনটা তে কি একেবারেই অতিরিক্ত কিছু করা যাবে না, নামায বা অন্য ইবাদাত? দেখুন উরফ বা custom এর একটি ব্যাপার আছে। ঈদে মিলাদুন্নাবী
যদি এখন সোমবার পড়ে আর আপনি যদি সোমবার বলে রোযা রাখেন, তাইলে হতে পারে মানুষ, যারা আপনাকে অনুসরণ করে, ধারণা করে নিবে যে আপনি আসলে এই উপলক্ষে অতিরিক্ত ইবাদাত করছেন। তাই এরূপ না করাই অনুচিত, যদিও আল্লাহইএকমাত্র নিয়্যাতের ব্যাপারে অবগত! আর একটু গভীরভাবে ভেবে দেখুন, আপনি কি আসলেই একদমই অতিরিক্ত কোন সওয়াবের আশা করছেন না?উত্তরটা আপনি ই ভাল জানেন!
আল্লাহ আমাদের বিশুদ্ধ ইসলাম পালন করার তোফিক দিন, আমীন!
No comments:
Post a Comment