সূরা বাক্বারার শেষ দুই আয়াতঃ
অর্থঃ
এটা যদি আমাদের মুখস্থ না থাকে, অনুরোধ করবো মুখস্থ করে ফেলতে। অর্থ পড়লেই দেখবো যে কী পরিমাণ সাহস যোগায় এই আয়াতগুলো-
রসূল বিশ্বাস রাখেন ঐ সমস্ত বিষয় সম্পর্কে যা তাঁর পালনকর্তার পক্ষ থেকে
তাঁর কাছে অবতীর্ণ হয়েছে এবং মুসলমানরাও সবাই বিশ্বাস রাখে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর গ্রন্থসমুহের প্রতি এবং তাঁর পয়গম্বরগণের প্রতি। তারা বলে আমরা তাঁর পয়গম্বরদের মধ্যে কোন তারতম্য করিনা। তারা বলে, আমরা শুনেছি এবং কবুল করেছি। আমরা তোমার ক্ষমা চাই, হে আমাদের পালনকর্তা। তোমারই দিকে
প্রত্যাবর্তন করতে হবে। (285) আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না, সে তাই পায় যা সে উপার্জন করে এবং তাই তার উপর বর্তায় যা সে
করে। হে আমাদের পালনকর্তা, যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা ভুল করি, তবে আমাদেরকে অপরাধী করো না। হে আমাদের পালনকর্তা! এবং আমাদের উপর এমন
দায়িত্ব অর্পণ করো না, যেমন আমাদের
পূর্ববর্তীদের উপর অর্পণ করেছ, হে আমাদের প্রভূ! এবং আমাদের দ্বারা ঐ বোঝা বহন করিও না, যা বহন করার শক্তি
আমাদের নাই। আমাদের
পাপ মোচন কর। আমাদেরকে ক্ষমা কর এবং আমাদের প্রতি দয়া কর। তুমিই আমাদের প্রভু। সুতরাং কাফের সম্প্রদায়ের
বিরুদ্ধে আমাদের কে সাহায্যে কর।
মূল ভাবঃ
যদি আমাদেরকে কেউ যাদুটোনা করে (আল্লাহ্ মাফ করুক)তাহলে এটার চাইতে সুন্দর
দুআ মনে হয় আর হয় না যে আল্লাহ্ তুমি আমাকে সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা দিও না। এখন এই দুই আয়াতের ফযীলত নিয়ে একাধিক হাদীস আছে, বিস্তারিত জানা যাবে
এখানে।
সূরা ইমরানের প্রথম ১০ আয়াতঃ
অর্থঃ
আলিফ লাম মীম। (1) আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সবকিছুর ধারক। (2) তিনি আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন সত্যতার সাথে; যা সত্যায়ন করে পূর্ববর্তী কিতাবসমুহের। (3) নাযিল করেছেন তাওরত ও ইঞ্জিল, এ কিতাবের পূর্বে, মানুষের হেদায়েতের জন্যে এবং অবতীর্ণ করেছেন মীমাংসা। নিঃসন্দেহে যারা আল্লাহর
আয়াতসমূহ অস্বীকার করে, তাদের জন্যে রয়েছে কঠিন
আযাব। আর আল্লাহ হচ্ছেন
পরাক্রমশীল, প্রতিশোধ গ্রহণকারী। (4) আল্লাহর নিকট আসমান ও যমীনের কোন বিষয়ই গোপন নেই। (5) তিনিই সেই আল্লাহ, যিনি তোমাদের আকৃতি গঠন করেন মায়ের গর্ভে, যেমন তিনি চেয়েছেন। তিনি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই। তিনি প্রবল পরাক্রমশীল, প্রজ্ঞাময়। (6) তিনিই আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন। তাতে কিছু আয়াত রয়েছে সুস্পষ্ট, সেগুলোই কিতাবের আসল অংশ। আর অন্যগুলো রূপক। সুতরাং যাদের অন্তরে কুটিলতা রয়েছে, তারা অনুসরণ করে ফিৎনা বিস্তার এবং অপব্যাখ্যার উদ্দেশে
তন্মধ্যেকার রূপকগুলোর। আর সেগুলোর ব্যাখ্যা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। আর যারা জ্ঞানে সুগভীর, তারা বলেনঃ আমরা এর প্রতি ঈমান এনেছি। এই সবই আমাদের
পালনকর্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে। আর বোধশক্তি সম্পন্নেরা ছাড়া অপর কেউ শিক্ষা
গ্রহণ করে না। (7) হে আমাদের পালনকর্তা! সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্যলংঘনে প্রবৃত্ত করোনা এবং তোমার নিকট থেকে আমাদিগকে
অনুগ্রহ দান কর। তুমিই
সব কিছুর দাতা। (8) হে আমাদের পালনকর্তা! তুমি মানুষকে একদিন অবশ্যই একত্রিত করবেঃ এতে কোনই সন্দেহ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর ওয়াদার অন্যথা করেন না। (9) যারা কুফুরী করে, তাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি আল্লাহর সামনে কখনও কাজে আসবে না। আর তারাই হচ্ছে দোযখের ইন্ধন।
মূল ভাবঃ
এগুলো আল্লাহর পরিচয় দানকারী আরো কিছু আয়াত। আমার অসম্ভব প্রিয় একটা দুআ আছে এখানে। ৮ নং আয়াতটা।আল্লাহ
যে আমাদের এটা শিখাচ্ছেন,এটা থেকেই বোঝা যায় যে হিদায়াত স্থায়ী কিছু নয়। এই প্রেক্ষিতে আমার এই
আয়াতটা পড়ে মনে হল যে আমরা অনেকেই ‘তাত্ত্বিকভাবে’ জানি যে তাবিজ, যাদুটোনা ইত্যাদি করা শিরক। কিন্তু আল্লাহ্ মাফ করুন নিজেদের জীবনে যদি
বিশাল কোনো বিপদ আসে এগুলার ফলে, তখন অস্থির হয়ে গিয়ে এগুলার
দ্বারস্থ হই। যেমন মনে করুন আপনার একমাত্র সন্তান আইসিইউতে। ডাক্তাররা আশা ছেড়ে
দিয়েছেন। আপনাকে কেউ বললো যাদুটোনার কারণে এমন হয়েছে এবং আপনি অমুক জায়গায় গিয়ে
অমুক তাবিজ ঝুলালে আপনার সন্তান বেঁচে উঠবে।
কী করবেন আপনি? আপনি কিন্তু জানেন যে পাল্টা যাদুটোনা করা
শিরক.........
এইসব সময়েই আমাদের দুআ করা উচিৎ আগের পোস্টের
দুআটা...আল্লাহ যেন আমাদেরকে সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা না দেন আর একবার হিদায়াত লাভের
পর আমরা যেন সত্য লঙ্গনে প্রবৃত্ত না হই।
এই আয়াতের আরেকটা শিক্ষা হচ্ছে কুরআনের আয়াতকে
বিভ্রান্তভাবে ব্যাখ্যা না করা। যারা তাবিজ, যাদুটোনা এগুলোকে ইসলামের মোড়কে সাজিয়ে
উপস্থাপন করে, তারা সবসময় আপনাকে অস্পষ্ট কথাবার্তা বলবে।
যাদুটোনা যে কুফরি সেটা সূরা বাক্বারার ১০২-০৩ আয়াতে দ্ব্যর্থহীণ ভাষায় বলে দেয়া
হয়েছে।
আল্লাহ্ আমাদেরকে হিদায়াতের উপর মৃত্যু বরণ করার তৌফিক দান
করুন, আমীন।
No comments:
Post a Comment