রিবার প্রসার রোধ করতে
ইসলামের নানা নিয়ম
আমরা আগের পর্বগুলোতে দেখেছি টাকার
ডিমাণ্ডের চেয়ে সাপ্লাই বেশী হলে সুদভিত্তিক সমাজ গড়ে ওঠে। এমনটা যেন না হয় সেজন্য
ইসলাম শুধু রিবাই নিষিদ্ধ করে নি, আরো নানা নিয়ম বেঁধে দিয়েছে।
প্রথমত, যাকাতের বিধান দিয়েছে।
এর মাধ্যমে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশী টাকা ১ বছরের বেশী সময় ধরে জমানো থাকলে
সেটার নির্দিষ্ট অংশ দান করে দিতে হয়, অর্থ্যাৎ বাজারে ছেড়ে দিতে হয়।
সহজভাবে বলতে গেলে,
এটা টাকার সাপ্লাই বাড়িয়ে দেয় যেন ডিমান্ড ও সাপ্লাই এর মাঝে একটা
ভারসাম্য থাকে।
অনেকের হয়তো মনে হতে পারে যে যাকাত নিজেই
টাকার ডিমাণ্ড সৃষ্টি করতে পারে যদি যাকাত ফরয এমন
ব্যক্তিদের নিজস্ব আয় না থাকে। যেমন বাড়ির গৃহকর্ত্রী। তার হয়তো নিসাব পরিমাণ
স্বর্ণালংকার আছে,
কিন্তু আয় নেই। এখানে আমাদের মাথায় রাখতে হবে যে যাকাত মুদ্রা
দিয়েই আদায় করতে হবে ব্যাপারটা এমন না। স্বর্ণালংকারের
কিছু অংশ বেঁচে দিয়েও ঊনারা যাকাত আদায় করতে পারেন। আবার যখন গৃহপালিত পশু বা অনুরূপের উপর
যাকাত ফরয হয়,
তখনো সেই সম্পদের একটা অংশ দিয়েই যাকাত দেয়া যায়। অর্থ্যাৎ যাকাত মুদ্রার ডিমাণ্ডের উপর
কোনো অযাচিত চাপ সৃষ্টি করে না, কিন্তু সাপ্লাই বাড়ায়।
যাকাত যে নির্দিষ্ট খাতগুলোতে দিতে হয়
সেগুলো নিয়ে চিন্তা করলেও আমরা দেখবো যে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা এমন ব্যক্তি যাদের
ক্যাশ টাকা সবচেয়ে বেশী দরকার এবং সুদ ভিত্তিক ঋণ নেয়ার সম্ভাবনা খুবই প্রবল।
তাদেরকে ক্যাশ টাকা বা আয়ের উৎস (গৃহপালিত পশু, কৃষিজাত পণ্য) দিয়ে সেই সম্ভাবনার
দ্বার রুদ্ধ করা হয়। এভাবে যাকাত অর্থনীতিতে সুদের
প্রসার প্রতিরোধে অবদান রাখে।
দ্বিতীয়তঃ অপ্রয়োজনে ঋণ নেয়াকে নিরুৎসাহিত
করা। সমাজে রিবার বিস্তারের একটা হাতিয়ার হল সুদী ঋণের সহজলভ্যতা। এনজিও, ক্রেডিট কার্ড
কোম্পানিগুলো অনেক সময়ই তথাকথিত সহজ শর্তের কথা বলে আমাদেরকে নানা বিলাসিতা, ভোগবাদিতা ইত্যাদির
প্রলোভন দেখায় এবং সুদভিত্তিক লেনদেনের সাথে অভ্যস্ত করে তোলার চেষ্টা করে। আদতে এগুলো
ঋণের ফাঁদ ছাড়া আর কিছুই না, এভাবে
টাকার কৃত্তিম ডিমাণ্ড সৃষ্টি হয়।
আমরা যদি ইসলামের এই ব্যাসিক নীতিমালাগুলো
মেনে চলি তাহলে আমরা সমাজে সুদের বিস্তার রোধে অবদান রাখতে পারবো ইনশাল্লাহ।
No comments:
Post a Comment