Sunday, August 18, 2019

রিবা নিয়ে জানা সিরিজের স্ক্রিপ্ট -৮



            
হাদীস থেকে পাওয়া মুদ্রানীতি 

আগের পর্বে আমরা দেখেছি যে সকল পণ্যের ( যেমন ভাত, ডাল, পোশাক-আশাক) দামই নির্ধারিত হয় তুলনামূলক ডিমাণ্ড এবং সাপ্লাই এর উপর নির্ভর করে। যদি ডিমাণ্ড সাপ্লাই এর চেয়ে বেশী হয় তাহলে দাম বেশী এবং সাপ্লাই ডিমাণ্ডের চেয়ে বেশী হলে দাম কম......এভাবে

তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে যে যেহেতু টাকার ডিম্যাণ্ডের তুলনায় সাপ্লাই কম হলেই টাকার মালিক/ নিয়ন্ত্রকরা সুদ আরোপ করার সুযোগ পায় তাহলে টাকার দামও এভাবে নির্ধারিত হলে সমস্যা কোথায়? সুদকে আমরা টাকার দাম হিসেবে চিন্তা করতেই পারি

কিন্তু না, ইসলামে মুদ্রাকে আর দশটা পণ্যের সাথে একই কাতারে ফেলা যায় না। এব্যাপারে হাদীসে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ

‘‘সোনার বিনিময়ে সোনা, রূপার বিনিময়ে রূপা, গমের বিনিময়ে গম, যবের বিনিময়ে যব, খেজুরের বিনিময়ে খেজুর, লবণের বিনিময়ে লবণ ক্রয় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে উভয় বস্ত্তকে যেমনকার তেমন, সমান সমান এবং হাতে হাতে হতে হবে। অবশ্য যখন উভয় বস্ত্তর শ্রেণী বা জাত বিভিন্ন হবে, তখন তোমরা তা যেভাবে (কমবেশী করে) ইচ্ছা বিক্রয় কর; তবে শর্ত হল, তা যেন হাতে হাতে (নগদে) হয়’’ (মুসলিম ১৫৮৭)

আপাতদৃষ্টিতে এই হাদীসটি পড়ে খটকা লাগতে পারে পারে। যদি আমি নগদে এবং সমান পরিমাণে লেনদেন করি, তাহলে সেই লেনদেনের দরকারটা কী! আর এমন অবাস্তব লেনদেন নিষিদ্ধ করারই বা কী দরকার!

কিন্তু আমরা যদি হাদীসটি গভীর মনোযোগ দিয়ে লক্ষ করি, তাহলে বুঝবো যে হাদীসে উল্লেখিত পণ্য গুলো আসলে তখন মুদ্রা হিসেবে ব্যবহৃত হত। হাদীসটি আসলে ইসলামে মুদ্রার ব্যাপারে মূলনীতি নির্ধারণ করে দিচ্ছে! 

মুদ্রা তথা বিনিময়ের মাধ্যম থেকে সুবিধা আসলে দুইভাবে নেয়া যায়ঃ

১) দেরীতে শোধ করার সুযোগ থাকলে
২) খারাপ কোয়ালিটির বেশী পরিমাণের সাথে  ভালো কোয়ালিটির কম পরিমাণ লেনদেন করার মাধ্যমে 

এই হাদীসে এই উভয় জিনিসই নিষেধ করে দিয়েছে। অর্থ্যাৎ বিনিময়ের মাধ্যম থেকে সুবিধা নেয়ার সম্ভাব্য সকল রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে 

এক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে এখানে এমন একটি অর্থনীতির কথা বলা হয়েছে যেখানে নানা ধরণের পণ্যই (যেমন খেজুর, লবণ ইত্যাদি) মুদ্রা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাহলে মুদ্রা হিসেবে প্রচলিত এমন পণ্যের বিভিন্ন কোয়ালিটির থেকে যদি কারো উপযোগ সৃষ্টি হয় (যেমন ২২ ক্যারাটের সোনা আর ১৮ ক্যারেটের সোনা) এবং কেউ যদি এর মাঝে লেনদেন করতে চায় তাহলে করণীয় কী? আলহামদুলিল্লাহ, হাদীস থেকে আমরা সেটাও জানতে পারি-

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) ও আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে খায়বারে তহসীলদার নিযুক্ত করেন। সে জানীব নামক (উত্তম) খেজুর নিয়ে উপস্থিত হলে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, খায়বারের সব খেজুর কি এ রকমের? সে বলল, না, আল্লাহর কসম, হে আল্লাহর রসূল! এরূপ নয়, বরং আমরা দু’ সা’ এর পরিবর্তে এ ধরণের এক সা’ খেজুর নিয়ে থাকি এবং তিন সা’ এর পরিবর্তে এক দু’ সা’। তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এরূপ করবে না। বরং মিশ্রিত খেজুর দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করে দিরহাম দিয়ে জানীব খেজুর ক্রয় করবে। (সহীহ বুখারী  ক্রয়-বিক্রয়  ২২০২) 

এথেকে আমরা বুঝলাম যে  একটি বস্তুকে একই সাথে পণ্য আর মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। যদি পণ্য হিসেবে ব্যবহার করতে হয় তাহলে অন্য মুদ্রার সাথে বাজারে লেনদেন করতে হবে। মানে ১৮ ক্যারাটের সোনা বাজারে বিক্রি করে যে টাকা পাওয়া যাবে, সেটা দিয়ে যতটুকু ২২ ক্যারাটের সোনা পাওয়া যায়, সেটা কিনতে হবে। 

প্রশ্ন উঠতে পারে যে মুদ্রাকে এভাবে আলাদা করার কারণ কীআসলে মুদ্রার কাজ আর সব পণ্যের থেকে আলাদা যেমনটা আমরা আগে দেখেছি। মুদ্রার মাধ্যমে কোনো পণ্যের উপযোগের পরিমাণ প্রকাশ করা হয়, মূল্য নির্ধারণ করা হয়, বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয় ইত্যাদি।

মুদ্রার এই বিশেষত্বের জন্যই মুদ্রাকে অন্য সব পণ্যের মত চিন্তা করে সুদকে মুদ্রার দাম হিসেবে চিন্তা করার কোনো সুযোগ নেই। 



No comments:

Post a Comment

রিবা নিয়ে জানা সিরিজের স্ক্রিপ্ট -১১

রিবার নানা রূপ আজকের পর্বে আমরা রিবার নানা রূপের সাথে পরিচিত হব যেন দৈনন্দিন জীবনে আমরা সেগুলো থেকে বেঁচে থাকতে পারি-   টাকা ধার নেয়ার...