Sunday, August 18, 2019

রিবা নিয়ে জানা সিরিজের স্ক্রিপ্ট -৭


      মুদ্রাভিত্তিক অর্থনীতিতে মুনাফার সংজ্ঞা



আমরা এখন বাস করি মুদ্রাভিত্তিক অর্থনীতিতে যেখানে সব লেনদেন মুদ্রার বিনিময়ে হয়ে থাকে। এই অর্থনীতিতে মুনাফার সংজ্ঞা বোঝার আগে আমরা জেনে নিবো মুদ্রার ভূমিকা বা কাজ।   

মুদ্রার কাজ মূলত ৩টি-

১) পণ্য থেকে পাওয়া উপযোগের মাপকাঠি (Measure of Value) 

কোনো বস্তু থেকে আমরা যে উপযোগ/ Value পাই সেটার পরিমাণ মুদ্রার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। তাই আমরা এভাবে বলে থাকি যে এই জামাটা থেকে আমি ৫০০ টাকার সমমানের উপযোগ পাই। এক্ষেত্রে মুদ্রা শুধুই একটা তথ্য হিসেবে কাজ করে

) পণ্যের মূল্যের রেফারেন্সঃ

আমরা যদি কিছু কিনতে চাই, সেটার দাম প্রকাশিত হয় মুদ্রা দ্বারা। যেমন ল্যাপটপের দাম হতে পারে ৩০,০০০টাকা। এভাবে ২টা জিনিসের মূল্যের মাঝে আমরা তুলনাও করতে পারি । একটা ল্যাপটপ নাকি একটা স্বর্ণের চেইন……কোনটা বেশী দামী সেটা আমরা বুঝতে পারি তাদের মূল্য থেকে যা মুদ্রার এককে প্রকাশিত। 

৩) বিনিময়ের মাধ্যম (Medium of exchange)ঃ

আমরা যা কিছুই কিনতে চাই, মুদ্রার বিনিময়ে কিনতে পারি যেমনটা আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে করে থাকি।

এখানে লক্ষণীয় যে কোনো বস্তু থেকে পাওয়া উপযোগের মুদ্রা মান আর সেটার দাম কিন্তু এক নাও হতে পারে। আমি যদি কোনো জামা থেকে ৫০০ টাকার সমান উপযোগ পাই তাহলে আমি হয়তোবা ওই জামাটার জন্য ৫০০ টাকাই দিতে রাজি থাকবো। কিন্তু বাজারে হয়তো সেটার দাম ৪০০ টাকা।

বাজারে কোনো পণ্যের মূল্য তথা দামটা আসলে নির্ধারিত হয় সেটার তুলনামূলক ডিমাণ্ড ও সাপ্লাইয়ের ভিত্তিতে। 

আগের পর্বে আমরা দেখেছি একজন মাত্র কৃষক ও মাছওয়ালার উদাহরণ যারা এক প্লেট ভাত ও একটি মাছ লেনদেন করেছে। এখন এমনও তো হতে পারে যে বাজারে আরো মাছওয়ালা আছে যে এক প্লেট ভাতের বিনিময়ে দুটি বা কেউ তিনটি মাছ দিতে ইচ্ছুক... আবার চালও আরো অনেকে বিক্রি করে। 

এভাবে ডিম্যাণ্ড ও সাপ্লাইয়ের মিথস্ক্রিয়াতে যে 'দাম' নির্ধারিত হয়, তা সাধারণত ক্রেতা বা বিক্রেতা যে দামে কেনা বেচা করতে রাজি থাকে তার সমান না। ক্রেতা যত দাম দেয়, সাধারণত জিনিসটা থেকে পাওয়া উপযোগের মূল্যমান তার চেয়ে বেশী থাকে, মানে সে এর চেয়ে বেশী দামে কিনতে রাজি ছিলো। এই দুটো পরিমাণের মাঝে পার্থক্যকে আমরা বলতে পারি ক্রেতার দিক থেকে মুনাফা। প্রচলিত অর্থনীতির ভাষায় এটা Consumer Surplus নামে পরিচিত।

একই কথা বিক্রেতার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। সেও আসলে জিনিসটা বেঁচে যত টাকা পায়, তার চেয়ে কম টাকায় বিক্রি করতে রাজি ছিল, মানে জিনিসটার উপযোগের মূল্যমান তার পাওয়া টাকার চেয়ে কম। সেজন্যই সে আসলে জিনিসটা বেঁচে দিতে চাইছে। প্রচলিত অর্থনীতির ভাষায় এটা Producer Surplus নামে পরিচিত।

এজন্য আমরা খুব সহজ ভাষায় বলি যে আয় ও ব্যয়ের মধ্যে পার্থক্যকে মুনাফা বলে
 মুনাফা= বিক্রেতা বিক্রি করে যত টাকা পেয়েছে (আয়)- যত টাকায় বেঁচতে রাজি ছিল (খরচ) 

এই সংজ্ঞার নেপথ্যের ঘটনাটা আমরা এতক্ষণ ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করলাম। সেই সাথে আমরা দেখানোর চেষ্টা করলাম যে ক্রেতার দিক থেকেও মুনাফাকে ব্যাখ্যা করা যায়।

তাহলে সুদ আর মুনাফার মাঝে পার্থক্য কি আমাদের কাছে স্পষ্ট হল কিছুটা? মূল পার্থক্য যেটা আমাদের ব্রেনে গেঁথে নেয়া দরকার, সেটা হচ্ছে মুনাফাতে সরাসরি কোনো পণ্যের লেনদেনের মাধ্যমে দুই পক্ষেরই উপযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে (Increase of Value) বা নতুন উপযোগের সৃষ্টি হচ্ছে (Creation of Value) কিন্তু সুদের ক্ষেত্রে শুধু বিনিময়ের মাধ্যম লেনদেন করা হচ্ছে। যার কাছে টাকা নেই তাকে স্রেফ লেনদেনের সুযোগ করে দেয়ার বিনিময়ে অতিরিক্ত চার্জ নেয়া হচ্ছে।

এখন উপযোগ কিভাবে সৃষ্টি করা যেতে পারে? 
·      আমার দক্ষতা কাজে লাগিয়ে আমি কোনো বস্তুর রূপান্তর ঘটাতে পারি (যেমন কাপড় থেকে জামা বানাতে পারি, আটা থেকে রুটি, পিঠা)। যাদের এগুলো করার সময়/ এনার্জি/ দক্ষতা নেই তাদের কাছে বেশী দামে বিক্রি করতে পারি
·      আমরা কোনো জিনিসকে সহজলভ্য করতে পারি ধরুন সুপার স্টোর গুলোতে জিনিস পত্রের দাম বেশী হয় কারণ সেখানে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে, সাজানোভাবে অনেক কিছু এক সাথে পাওয়া যায় যেটা হয়তো এলাকার কাঁচা বাজারগুলো থেকে কেনা কষ্টকর।
·      আমরা কোনো জিনিস দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষণ করতে পারি যেন মৌসুম ছাড়াও তা পাওয়া যায়।
এরকম আরো উদাহরণ দেয়া যায় যেখানে ঝুঁকি (Risk) নিয়ে বা ওয়ারেন্টি দিয়ে (Liability) বা নতুন উপযোগ সৃষ্টি করে মুনাফা অর্জন করা যায়।

তাহলে সুদ এবং মুনাফার মাঝে মূল পার্থক্যগুলো আসুন এক নজরে আবারো একটু দেখে নেই





No comments:

Post a Comment

রিবা নিয়ে জানা সিরিজের স্ক্রিপ্ট -১১

রিবার নানা রূপ আজকের পর্বে আমরা রিবার নানা রূপের সাথে পরিচিত হব যেন দৈনন্দিন জীবনে আমরা সেগুলো থেকে বেঁচে থাকতে পারি-   টাকা ধার নেয়ার...