এটা করা হয় ‘পারস্পরিক সমঝোতার’ ভিত্তিতে। আমরা সবাই জানি যে ইবলীসের মিশন হচ্ছে যত বেশী সংখ্যায় সম্ভব
আদম সন্তানকে তার সাথে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়া। জ্বীনদের মাঝে যারা তার অনুসারী,
তারা তাকে এ কাজে সাহায্য করে। এ ব্যাপারে নিচের হাদীসটা খুবই
গুরুত্বপূর্ণ-
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) বলেছেন : ইবলীস (শায়ত্বন) সমুদ্রের পানির উপর তার সিংহাসন স্থাপন করে।
অতঃপর মানুষের মধ্যে ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টি করার জন্য সেখান থেকে তার বাহিনী চারদিকে
প্রেরণ করে। এদের মধ্যে সে শায়ত্বনই তার নিকট সর্বাধিক সম্মানিত যে শয়তান মানুষকে
সবচেয়ে বেশী ফিতনায় নিপতিত করতে পারে। তাদের মধ্যে একজন ফিরে এসে বলে, আমি এরূপ এরূপ ফিতনাহ্ মানুষের মধ্যে সৃষ্টি করেছি। তখন সে (ইবলীস) প্রত্যুত্তরে
বলে, তুমি কিছুই করনি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, অতঃপর এদের অপর একজন এসে
বলে, আমি মানব সন্তানকে ছেড়ে দেইনি, এমনকি
দম্পতির মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ করে দিয়েছি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, শয়তান এ কথা শুনে তাকে
নিকটে বসায় আর বলে, তুমিই
উত্তম কাজ করেছো। বর্ণনাকারী আ’মাশ বলেন, আমার মনে হয় জাবির (রাঃ) এটাও বলেছেন যে, “অতঃপর
ইবলীস তার সাথে আলিঙ্গন করে”। (সহীহ : মুসলিম ২৮১৩)
অর্থাৎ জ্বীনদের একটা দল সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা
করে মানুষকে বিপথগামী করার, বিনিময়ে শয়তান তাদেরকে নানা ধরণের
পুরষ্কারের প্রলোভন দেখায়। শয়তানের কমন দুইটা পুরষ্কার হচ্ছে ক্ষমতা এবং রাজত্ব,
সাথে অনন্তকালের জীবন। ইবলিস আদম আলাইহি ওয়াসাল্লামকেও ঠিক একই কথা
বলেছিল। সে তাঁর কাছে এসেছিল একজন চরম হিতাকাংখী হিসেবে (৭:২০-২১), (২০:১২০)
শয়তানের এসব ওয়াদা দ্বারা প্রলুব্ধ হয়ে একদল জ্বীন মানুষকে বিপথগামী করতে উদ্যোগী হয়, মানুষের মাঝে একদল স্থূলবুদ্ধি সম্পন্নরা আবার তাতে সাড়া দেয়। তারা দুনিয়াতে অর্থ, ক্ষমতা, খ্যাতি এগুলোর মোহে আবিষ্ট হয়ে গিয়ে শয়তানের সাহায্য নেয়, নানা ধরনের কুফরী কালামে লিপ্ত হয়-যেমন তাবিজ কবজ, যাদু টোনা, ভাগ্য গণনা ইত্যাদি। কিন্তু ওই যে বললাম যে মানুষের পক্ষে জ্বীনদের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা সম্ভব না, তাই জ্বীনরা ওইসব মানুষদের সাথে একটা ‘চুক্তি’ করে। সেই চুক্তির ধারা অনুযায়ী মানুষ নানা ধরণের শিরকি, হারাম কাজে লিপ্ত হয়, জ্বীনদের ইবাদত করে। এজন্য তাদেরকে কিছু কিছু কাজ অকল্পনীয় কাজও করতে হয় যেমন মেয়েদের ঋতুস্রাবের রক্ত পান, কুরআনের মুসহাফের উপর বাথরুম করা, সেটা দিয়ে শৌচকাজ করা, অন্য মানুষ বা পশুপাখির রক্ত পান, বিশিষ্ট কোনো মানুষের রক্ত হাজির করা (ফলে তারা তাকে হত্যা করতে উদ্যত হয়, অনেকসময় করে), জ্বীনদের সিজদাহ করা, তাদের নামে উৎসর্গ করা ইত্যাদি। বিনিময়ে দুষ্ট ও শয়তান জিনেরা তাদের ওপর সন্তুষ্ট হয় এবং মানুষ যেসব কাজ করতে চায় সেগুলো করে দেয়। যেমনঃ কাউকে বাণ মেরে অসুস্থ করে ফেলা, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ ঘটানো, ভবিষ্যৎ বলে দেয়া, মানসিক বিকৃতি, ভুল দেখা বা শোনার উপসর্গ দেখা দেয়া ইত্যাদি......তবে এগুলোর কোনোটাই কার্যকর হয় না যদি না আল্লাহ্ অনুমতি দেন। এগুলোর স্বীকার হলে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে উল্টা যাদুটোনার আশ্রয় না নিয়ে শরীয়তসম্মত চিকিৎসার মাঝে সীমাবদ্ধ থাকা।
যাই হোক, এই উভয় দলের মাঝে এই
সমঝোতাপূর্ণ সম্পর্কের কথা আল্লাহ্ কুরআনে আমাদের জানিয়ে দিচ্ছেন-
আর যেদিন আল্লাহ তাদের সবাইকে সমবেত করবেন। সেদিন বলবেন, “হে জিনের
দল, মানুষের অনেককে তোমরা বিভ্রান্ত করেছিলে” এবং মানুষদের মধ্য থেকে তাদের সঙ্গীরা বলবে, “হে
আমাদের রব, আমরা একে অপরের দ্বারা লাভবান হয়েছি এবং আমরা
পৌঁছে গিয়েছি সেই সময়ে, যা আপনি আমাদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন।”
তিনি বলবেন, “আগুন তোমাদের ঠিকানা, তোমরা সেখানে স্থায়ী হবে। তবে আল্লাহ যা চান তা ব্যতীত।” নিশ্চয় তোমার রব বিজ্ঞ, সর্বজ্ঞ। (৬:১২৮)
কিন্তু আদতে শয়তানের কি সাধ্য আছে তাদেরকে
পুরস্কৃত করার? নিচের আয়াতটা একদম সত্য উন্মোচন করে দিয়েছে আমাদের সামনে-
যখন সব কাজের ফায়সলা হয়ে যাবে, তখন শয়তান
বলবেঃ নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে সত্য ওয়াদা দিয়েছিলেন এবং আমি তোমাদের সাথে ওয়াদা
করেছি, অতঃপর তা ভঙ্গ করেছি। তোমাদের উপর তো আমার কোন
ক্ষমতা ছিল না, কিন্তু এতটুকু যে, আমি
তোমাদেরকে ডেকেছি, অতঃপর তোমরা আমার কথা মেনে নিয়েছ। অতএব
তোমরা আমাকে ভৎর্সনা করো না এবং নিজেদেরকেই ভৎর্সনা কর। আমি তোমাদের
উদ্ধারে সাহায্যকারী নই। এবং তোমরাও আমার উদ্ধারে সাহায্যকারী নও। ইতোপূর্বে
তোমরা আমাকে যে আল্লাহর শরীক করেছিলে, আমি তা
অস্বীকার করি। নিশ্চয় যারা জালেম তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (১৪:২২)
তাই কেউ যদি দাবী করে যে তার পোষা ভালো জ্বীন
আছে, তাহলে তাকে নির্দ্বিধায় মিথ্যাবাদী বলা যাবে। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে সুলাইমান
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিভাবে তা করতেন?
আসলে এর একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন সুলাইমান আলাইহি
ওয়াসাল্লাম।
আল্লাহ্ তাঁকে এই বিশেষ ক্ষমতা দিয়েছিলেন (৩৮:৩৭-৩৮, ৩৪:১২-১৩) যা আর কাউকে দেননি, এমনকি আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকেও না। আমরা নিচের হাদীস থেকে এটা জানতে পারি-আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “একটি শক্তিশালী জ্বিন গতরাত্রে আমার নামায নষ্ট করার জন্য আমার ঔদাস্যের সুযোগ নিতে চাচ্ছিল। কিন্তু মহান আল্লাহ তাকে আমার আয়ত্তে করে দিলেন, সুতরাং আমি তার গলা টিপে ধরলাম। আমি সংকল্প করলাম, মসজিদের খুঁটিসমূহের কোন এক খুঁটিতে তাকে বেঁধে রাখি। যাতে সকালে তোমরা সকলে তাকে দেখতে পাও। অতঃপর আমার ভাই সুলাইমানের দুআ স্মরণ হল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা কর এবং আমাকে এমন এক রাজ্য দান কর, যার অধিকারী আমার পরে অন্য কেউ হতে পারবে না।’ (৩৮ঃ৩৫) সুতরাং আল্লাহ তাকে নিকৃষ্ট অবস্থায় ফিরিয়ে দিলেন।” (বুখারী ১২১০, মুসলিম ১২৩৭নং)
No comments:
Post a Comment