Thursday, July 4, 2019

কুরআনে রুকিয়ার আয়াতগুলো আত্মস্থ করা-১


অনেক দিন ধরে ইসলাম প্র্যাক্টিস করছে এমন মানুষদের কাছ থেকে প্রায়ই আমি শুনি যে আপু রুকিয়া কী জিনিস? যাদুটোনা বা তাবিজ কবজ এগুলো আসলে কি করে মানুষ? অথবা কাজ কি হয় আসলে? বিশ্বাস করেন, আমার না খুব অবাক লাগে! কুরআন থেকে যে আমরা কতটা দূরে এই প্রশ্নগুলো স্রেফ সেটার একটা প্রমাণ।  

আসলে জ্বীনজগত সম্পর্কে ধারণার ব্যাপারে আমরা সাধারণত চরমপন্থা অবলম্বন করি। এক দল আছেন যারা সব কিছুকেই জ্বীনের আছর বলে মনে করেন এবং কিছু হলেই পীর, ফকিরদের কাছে যান জ্বীন ছাড়াতে। এসব পীরদের অলৌকিক কর্মকাণ্ড দেখে তারা বিস্ময়াভিভূত হয়ে যান, তাদেরকে আল্লাহর আউলিয়া ভেবে শিরকে লিপ্ত হয়ে যান। অথচ আমরা অনেকেই জানি না যে অলৌকিক কর্মকাণ্ডগুলো অধিকাংশই হয় জ্বীনদের সাহায্যে। যেমনঃ কেউ শূন্যের উপর ভেসে আছে দেখে অনেকে তাকে আল্লাহর আউলিয়া ভাবা শুরু করে। অথচ ব্যাপারটা আসলে সহজ, জ্বীনটা লোকটাকে হাত দিয়ে উপরে তুলে রেখেছে, কিন্তু আমরা মানুষরা জ্বীনটাকে দেখতে পাচ্ছি না, যদিও তারা ঠিকই আমাদের দেখতে পায় (৭:২৭) 

আরেক দল আছেন যারা এইসব গোঁড়া আচার আচরণকে স্রেফ কুসংস্কার বলে উড়িয়ে দিয়ে জ্বীনের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করে বসেন, ফলে আমাদের জীবনে অনেক অসুস্থতা, ঝামেলা ইত্যাদি যে জ্বীনের প্রভাবে হয় এটার বাস্তবতাকে অগ্রাহ্য করেন।মজার ব্যাপার হচ্ছে জিজ্ঞেস করলে দেখা যাবে তাদের সবারই কম বেশী সূরা নাস মুখস্ত আছে যেখানে আমরা জ্বীনদের থেকে আশ্রয় চাই আসলে জ্বীনে বিশ্বাস আমাদের ঈমানের অঙ্গ কারণ আল্লাহ্‌ কুরআনে এদের কথা উল্লেখ করেছেন, এদের ব্যাপারে বহু সহীহ হাদীস রয়েছে। এটা গায়েবে বিশ্বাসের[1] সাথে সংশ্লিষ্ট তাই আজকে আমরা জ্বীনজগতে বিশ্বাসের সাথে সংশ্লিষ্ট দুটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি তুলে ধরবো ইনশাল্লাহ

প্রথমত, মানুষ কখনো জ্বীনদের উপরে আধিপত্য বিস্তার করতে পারে না, তাদেরকে এই ক্ষমতা দেয়া হয়নি

দ্বিতীয়ত, জ্বীনরা গায়েব জানে না(৩৪:১২-১৪)

এখন এই সবগুলোর সাথেই ‘কিন্তু’ আছে। যেমন ১নং এর ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠে অনেক জ্বীন হুজুরের যে ভালো পোষা জ্বীন থাকে বলে আমরা শুনে থাকি? সেটা ব্যাপারটা কী? তাছাড়া সুলাইমান আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা করতেন বলেই তো আমরা জানি

আবার ২ নং এর ক্ষেত্রে আমরা দেখি যে আদতে কিছু ভাগ্য গণকের কথা সত্যি হয়ে যায়। সেটা কিভাবে হয়?

প্রথম মূলনীতি বুঝতে হলে আমাদের মনে রাখতে হবে যে কিয়ামতের দিন আল্লাহর সৃষ্টিকুলের মাঝে শুধু মানুষ ও জ্বীন জগতেরই বিচার হবে আর মানুষের মাঝে যেমন মুসলিম ও কাফির আছে, জ্বীনদের মাঝেও তেমন আছে। তার উপর আমাদের প্রত্যেকের সাথেই একটি সঙ্গী জ্বীন আছে, যার নাম ক্বারিন, তার কাজই হলো আমাদেরকে খারাপ কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করা। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে দুনিয়ার পরীক্ষার একটা অংশ। এই বিষয়টি আল্লাহ্‌ স্বয়ং কুরআনে সরাসরি উল্লেখ করেছেন-

তার সঙ্গী শয়তান বলবেঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমি তাকে অবাধ্যতায় লিপ্ত করিনি। বস্তুতঃ সে নিজেই ছিল সুদূর পথভ্রান্তিতে লিপ্ত। আল্লাহ বলবেনঃ আমার সামনে বাকবিতন্ডা করো না আমি তো পূর্বেই তোমাদেরকে আযাব দ্বারা ভয় প্রদর্শন করেছিলাম। (৫০:২৭-২৮)

এখানে মানুষ ও তার ক্বারীনের মাঝে তর্কের কথা বলা হচ্ছে। কিয়ামতের দিন তারা একে অন্যকে দোষারোপ করতে থাকবে

তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন এর ব্যাতিক্রম। হাদীসে আছে-

জ্বিনদের মধ্য হতে একজন করে সাথী তোমাদের প্রত্যেকের সঙ্গে যুক্ত করে দেয়া হয়েছে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, এমনকি আপনার সাথেও, হে রাসূলুল্লাহ (সা.)! তিনি উত্তরে বলেন, হ্যাঁ আমার সাথেও। কিন্তু ব্যতিক্রম হচ্ছে যে, আল্লাহ তায়ালা আমাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করেছেন এবং সে আনুগত্য স্বীকার করেছে। তাই সে আমাকে শুধু সৎকাজ করতে বলে।”(সহীহ মুসলিম হা/৬৭৫৭)

এখন আমাদের জীবনে অনেক ঘটনা ঘটে (যেমনঃ সংসার ভাঙা, বিয়ে থেমে থাকা, বারবার কোনো মেডিক্যাল কারণ ছাড়াই গর্ভপাত ঘটা ইত্যাদি) যেগুলো আসলে যাদু টোনার মাধ্যমে জ্বীনদের সহায়তায় করা হয়। এগুলো করা হয় খারাপ জ্বীনদের সাহায্য নিয়ে। কিন্তু আমরা বলছি যে এইসব খারাপ জ্বীনদের উপরে কোনো মানুষ কখনো প্রভাব বিস্তার করতে পারে না...তাহলে উপর্যুক্ত কাজগুলো আসলে কিভাবে করা হয়?



(চলবে)


No comments:

Post a Comment

রিবা নিয়ে জানা সিরিজের স্ক্রিপ্ট -১১

রিবার নানা রূপ আজকের পর্বে আমরা রিবার নানা রূপের সাথে পরিচিত হব যেন দৈনন্দিন জীবনে আমরা সেগুলো থেকে বেঁচে থাকতে পারি-   টাকা ধার নেয়ার...