জ্যোতিষ শাস্ত্র ও জ্বীন জগতঃ
জ্বীনদের সাহায্য নিয়ে আরো যে একটা কাজ হয় সেটা
হচ্ছে ভবিষ্যৎ গণনা। এটা ইসলামে একেবারেই নিষিদ্ধ। হাদীসে আছে,
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোন গণক বা জ্যোতির্বিদদের
নিকট যাবে এবং তাকে কোন কথা জিজ্ঞেস করবে ৪০ দিন তার সালাত কবুল করা হবে না’
(মুসলিম, মিশকাত হা/৪৫৯৫)
আমরা আগেই আমাদের দ্বিতীয় মূলনীতিতে জেনেছি যে জ্বীনরা গায়েব জানে
না। তাহলে গণকদের কিছু কিছু কথা ফলে যায় কিভাবে? সেটাও আল্লাহ্ তাঁর অসীম
রহমতে আমাদের হাদীসের মাধ্যমে জানিয়ে দিচ্ছেন-
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত যে তিনি আল্লাহর
রাসূলকে বলতে শুনেছেন: “ফেরেশতারা আকাশের সীমানায় নেমে
আসমানে মীমাংসা হওয়া বিষয়ের উল্লেখ করেন, ফলে শয়তানরা তা
চুরি করে শোনে এবং গণকদের কাছে গোপনে পৌঁছে দেয়, অতঃপর তারা
এর সাথে নিজেরা একশটি মিথ্যা কথা বানিয়ে বলে। (বুখারী ৩২১০)
প্রশ্ন উঠতে পারে যে এখানে চুরি করে শোনার কথা
আসছে কেন। আসলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুয়্যতের পূর্বে জ্বীনরা
আকাশের সীমানায় অবাধে বিচরণ করতে পারতো,আসমানে গৃহীত সিদ্ধান্তের
ব্যাপারে জানা তাদের জন্য সহজ ছিল। এজন্যই কুরাইশদের মাঝে ভাগ্য গণকদের বিপুল
মর্যাদা ছিল। কিন্তু কুরআন নাযিল হওয়া শুরু হওয়ার পর থেকে তাদের প্রথম আসমান পার
হওয়ার ক্ষমতাই চিরতরে বন্ধ করে দেয়া হয়। মূলত কুরআন যে নাযিল হয়েছে সেটা তারা এই
ঘটনা থেকেই বুঝতে পারে। এরপর থেকে কোনো খবর তাদের শুনতে হয় চুরি করে, যদি ফেরেশতারা টের পেয়ে যায় তাহলে আগুনের গোলা ছুঁড়ে দেয়া হয়। যারা পালিয়ে
বাঁচতে পারে, শুধু তারাই কিছুটা খবর সংগ্রহ করতে পারে।এ
ব্যাপারে বিস্তারিত জানার জন্য সূরা জ্বীনের তাফসীর পড়া যেতে পারে।
এতো
গেলো ভবিষ্যতের কথা। ভাগ্যগণকদের কাছে গেলে তারা কারো অতীতের কোনো
বিশেষ ঘটনা বলে থাকে যাতে সাহায্য চাইতে আসা ব্যক্তির আস্থা অর্জন করা যায়। এটা
কিভাবে সম্ভব হয়? যে ব্যক্তি গণকের কাছে এসেছে তার ক্বারীনতো
ওই লোকের সাথে শুরু থেকেই আছে, তাই সে উনার অতীতের ব্যাপারে
সব তথ্যই জানেন, তখন ভাগ্যগণকের সাথে সমঝোতায় থাকা জ্বীন ওই
লোকের ক্বারীনের কাছ থেকে চমকপ্রদ তথ্য নিয়ে লোকটাকে মুগ্ধ করে ফেলার চেষ্টা চালায়।
যাদুটোনা ও জ্বীন জগতঃ
জ্বীন জগতের সাথে যাদু টোনার সম্পর্ক বোঝার জন্য আমাদের সবার আগে বুঝতে হবে
সূরা বাক্বারার ১০২-১০৩ নং আয়াত। এর অর্থ নিম্নরূপ-
আর তারা অনুসরণ করেছে, যা শয়তানরা সুলাইমানের রাজত্বে পাঠ করত। আর সুলাইমানকুফরী করেনি; বরং শয়তানরা মানুষকে যাদু শেখানোর মাধ্যমে কুফরী করেছে। আর [তারাঅনুসরণ করেছে] যা নাযিল করা হয়েছিল বাবেলের দুই ফেরেশতা হারূত ও মারূতের উপর।আর তারা কাউকে শেখাত না যে পর্যন্ত না বলত যে, “আমরা তো পরীক্ষা, সুতরাং তোমরা [আমাদের কাছ থেকে যাদু শেখার মাধ্যমে] কুফরী করো না। এরপরও তারা এদের কাছথেকে শিখত, যার মাধ্যমে তারা পুরুষ ও তার স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটাত। অথচ তারা তারমাধ্যমে কারো কোন ক্ষতি করতে পারত না আল্লাহর অনুমতি ছাড়া। আর তারা শিখত যাতাদের ক্ষতি করত, তাদের উপকার করত না এবং তারা নিশ্চয় জানত যে, যে ব্যক্তি তা ক্রয়করবে, আখিরাতে তার কোন অংশ থাকবে না। আর তা নিশ্চিতরূপে কতই-না মন্দ, যারবিনিময়ে তারা নিজদেরকে বিক্রয় করেছে। যদি তারা বুঝত। আর যদি তারা ঈমান আনতএবং তাকওয়া অবলম্বন করত, তবে অবশ্যই আল্লাহর পক্ষ থেকে [তাদের জন্য] প্রতিদানউত্তম হত। যদি তারা জানত। (২: ১০২-০৩)
এই দুই আয়াতে যাদুটোনা কুফর হওয়ার ব্যাপারে
কয়েকটি দলীল রয়েছে: ১) বরং শয়তানরা মানুষকে যাদু শেখানোর মাধ্যমে কুফরী করেছে - এর
দ্বারা প্রমাণিত হয় যে যাদুটোনা শিক্ষা দেয়া কুফর। ২) আর তারা কাউকে শেখাত না যে পর্যন্ত
না বলত যে, “আমরা তো পরীক্ষা, সুতরাং তোমরা [আমাদের
কাছ থেকে যাদু শেখার মাধ্যমে] কুফরী করো না। - এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে যাদুটোনা
শেখা কুফর। ৩) এবং তারা নিশ্চয় জানত যে, যে ব্যক্তি তা ক্রয়
করবে, আখিরাতে তার কোন অংশ থাকবে না। - আর আখিরাতে যার কোন
অংশই নেই সে হচ্ছে অমুসলিম, কাফির। ৪)
যদি তারা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত - অর্থাৎ তাদের ঈমান ছিল না।
No comments:
Post a Comment