Wednesday, July 24, 2019

রিবা নিয়ে জানা সিরিজের স্ক্রিপ্ট -৪

                                           রিবা নিয়ে অন্য ভুল ধারণাগুলো

আগের দুটো পর্বে আমরা মূলত ১ম ভ্রান্ত ধারণাটা নিয়ে কথা বলেছি যে ব্যাংকের সুদ নিষিদ্ধ রিবার অন্তর্ভুক্ত নয় এবং আমরা দেখেছি যে কুরআনের এত কঠোর অবস্থান থাকা সত্ত্বেও মুসলিম দেশগুলোতে কিভাবে রিবা মহামারীর মত ছড়িয়ে গেল। আজকের পর্বে আমরা সংক্ষেপে বাকি ভুল ধারণাগুলো নিয়ে কথা বলবো ইনশাল্লাহ।

              ভুল ধারণা :২

                           মুদ্রাস্ফীতির (Inflation) কারণে সুদ দেয়া বৈধ

আমরা আজকাল প্রায়ই অভিযোগ করে থাকি যে জিনিস পত্রের দাম বাড়ছে তো বাড়ছেই, এর সাথে আমরা তাল মিলাতে পারছি না, হাঁপিয়ে উঠছি। কিন্তু কেন এমনটা হচ্ছে তা কি আমরা বুঝি?
অনেকগুলো কারণের মাঝে একটা কারণ হচ্ছে টাকার মান কমে যাওয়া। এক বছর আগে ১০০টাকায় আমরা যতটুকু জিনিস কিনতে পারতাম, এখন সেই পরিমাণ জিনিস কিনতে আমাদের হয়তো খরচ হবে ১১৫ টাকা। অর্থাৎ একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিয়ে আগে যা কেনা যেত, এখন তার চেয়ে কম জিনিস কেনা যায়, তাই আমাদের মনে হয় যে জিনিস পত্রের দাম বাড়ছে।

এজন্যই আজকে যদি আমি কাউকে ১০০০ টাকা ধার দেই, এক বছর পর যদি সে আমাকে ১০০০টাকাই ফেরৎ দেয়, তাহলে আদতে যেন সে আমাকে ৯৫০টাকা ফেরত দিলো। কারণ এক বছর পর ১০০০টাকা দিয়ে যা কেনা যাবে, এক বছর আগে সেই জিনিস কেনা যেত ৯৫০টাকা দিয়ে। আমি যদি ঋণদাতাকে ১০০০টাকাই ফেরৎ দিতে চাই, আমার দেয়া উচিৎ ১০০০টাকার বেশী যাতে সে আগের ১০০০টাকার সমমূল্যের জিনিস কিনতে পারে। কিন্তু আমি যদি সেটা করি তাহলে ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে সেটা নিশ্চিতভাবেই সুদ বা রিবা হিসেবে বিবেচিত হবে।

তাই অনেকে বলে থাকেন যে এই ক্ষেত্রে সুদ দেয়া বৈধ কারণ আমি ঋণদাতাকে বেশী কিছু দিচ্ছি না, বরং তার ক্রয় ক্ষমতা যেন ঠিক থাকে সেজন্য আদতে সেই পরিমাণ টাকাই দিচ্ছি যা সে আমাকে দিয়েছিল।

আপাত দৃষ্টিতে যুক্তিটা বেশ সন্তোষজনক মনে হলেও এর মাঝে বিশাল এক চোরাবালি লুকিয়ে আছে যা চোখে পড়বে শুধু তখনই যখন আমাদের বর্তমান অর্থ ব্যবস্থা নিয়ে বিস্তারিত ধারণা থাকবে। এটা নিয়ে খুঁটিনাটি পড়াশোনা করলে আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে এইভাবে টাকার মান যে কমে যাচ্ছে, সেটা হচ্ছেই সুদ ভিত্তিক সিস্টেমের জন্য। তাই আমরা যদি মুদ্রাস্ফীতির (Inflation) এর সুদের সাথে আপোষ করা শুরু করি, তাহলে কোনোদিনও এই চোরাবালি থেকে বের হতে পারবো না। বরং আমরা যদি সবাই সুদ বর্জন করা শুরু করি, তাহলেই এই মুদ্রাস্ফীতি (Inflation) সমস্যা অনেকটাই কমে আসবে। সামনের পর্বগুলোতে যখন আমরা বর্তমান অর্থ ব্যবস্থা নিয়ে বিস্তারিত কথা বলবো, তখন এই বিষয়ে সকল দ্বিধা দ্বন্দ্ব দূর হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।

                                           ভুল ধারণা :৩
                            
রিবার নিষেধাজ্ঞা বাণিজ্যিক ঋণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়

এটা একেবারেই ভুল একটা কথা। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে মানুষের জীবনযাত্রা আজকের মত এত বস্তুবাদী ছিলো না যে বাড়ি, গাড়ি, বিলাস দ্রব্য কেনার জন্য মানুষ সুদ ভিত্তিক ঋণ নিবে। তখন মানুষ ঋণ নিতোই ব্যবসায়িক উদ্দেশে, আর সেটাই ইসলাম এসে নিষিদ্ধ করেছে।  
      ভুল ধারণা :৪

একান্ত নিরুপায় হলে রিবার সাথে যুক্ত হতে সমস্যা নেই।

এটা সত্যি যে একান্ত নিরুপায় হলে যে কোনো হারাম কাজই ইসলামে সাময়িক বৈধতা পায়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে নিরুপায় মানে আসলে কী। এই নিরুপায়তার সংজ্ঞাটা কী আমরা আমাদের খেয়াল খুশিমত বানাতে পারি? নিরুপায়তা বলতে এখানে জীবন বাঁচানোর মত পরিস্থিতির কথা বলা হয়েছে যখন মদ্যপান বা শুকরের মাংস খেয়ে হলেও জান বাঁচাতে হবে। আমরা যখন বাড়ি করার জন্য, গাড়ি কেনার জন্য, বিদেশে ঘুরতে যাওয়ার জন্য বা বিলাসজাত দ্রব্য কেনার জন্য সুদভিত্তিক লেনদেনের সাথে যুক্ত হয়ে পড়ি, তখন কি সেটাকে নিরুপায়তা বলা যায়? এভাবে কাকে ঠকাই আমরা? আমাদের রাবকে যিনি কী না আমাদের অন্তরের অবস্থা আমাদের চেয়েও ভালো জানেন?

         ভুল ধারণা :৫

তৎকালীন সময়ে রিবা ছিলো তীব্র শোষণের হাতিয়ার। একারণেই রিবা নিষেধ করা হয়েছিলো। কিন্তু এখন শক্তিশালী পক্ষও (যেমন সরকার) দুর্বলের (জনগণ) কাছ থেকে ঋণ নেয়। প্রেক্ষিত বদলে যাওয়াতে রিবার নিষেধাজ্ঞা আজকের সময়ে প্রযোজ্য নয়।

আসলে এই ধারণাটা তখনই জন্মায় যখন আমাদের বর্তমান অর্থব্যবস্থা সম্পর্কে জ্ঞান খুবই অপ্রতুল হয়। আগেকার সময়ে মহাজনেরা যখন চক্রবৃদ্ধি আকারে সুদ নিত সেটা ঋণগ্রহীতা ও তার পরিবারের জীবনটা ছিন্নভিন্ন করে দিতো। তখন সেটার প্রভাব শুধু ওই একটা পরিবারের উপরেই পড়তো।  কিন্তু বর্তমান অর্থনীতি সুদভিত্তিক হওয়ার কারণে আমাদের সবার জীবনে নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে, সেটা আমি প্রত্যক্ষভাবে রিবার সাথে জড়িত থাকি আর না থাকি। এক কথায় রিবা এখন আরো বড় শোষণের হাতিয়ার, যদিও সেটা আমরা সরাসরি টের পাই না। আসলে  সরকার আমাদের কাছ থেকে রিবা ভিত্তিক ঋণ নেয় বলেই বরং আমরা আজকে তাদের হাতে জিম্মি।   সামনের পর্বগুলোতে এটা আমরা আরো ভালোভাবে বুঝবো ইনশাল্লাহ।

No comments:

Post a Comment

রিবা নিয়ে জানা সিরিজের স্ক্রিপ্ট -১১

রিবার নানা রূপ আজকের পর্বে আমরা রিবার নানা রূপের সাথে পরিচিত হব যেন দৈনন্দিন জীবনে আমরা সেগুলো থেকে বেঁচে থাকতে পারি-   টাকা ধার নেয়ার...