Monday, July 29, 2019

রিবা নিয়ে জানা সিরিজের স্ক্রিপ্ট -৫



অর্থনৈতিক দিক থেকে রিবার সংজ্ঞা


আগের পর্বগুলোতে আমরা রিবা নিয়ে আমাদের সমাজে প্রচলিত কিছু ভুল ধারণা নিরসনের চেষ্টা করেছি। আজকের পর্বে আমরা রিবা কী এটা খুব সহজ ভাষায় বোঝার চেষ্টা করবো ইনশাল্লাহ। রিবা কী এটাই যদি আমরা বুঝতে না পারি তাহলে আমরা কিভাবে এটা থেকে দূরে থাকবো?
তবে তার আগে আমাদের মাথায় গাঁথতে হবে যে আল্লাহ সুবহানুহু ওয়া তা’লা রিবা নিষিদ্ধ করেছেন মূলত আমাদের অর্থনৈতিক জীবনটাকে সহজ করার জন্য। তাই আজকে আমরা রিবার সংজ্ঞা বোঝার চেষ্টা করবো একদমই অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে। আমরা বোঝার চেষ্টা করবো যে কখন একটা সমাজে রিবা প্রসারতা লাভ করে।
দৃশ্যপট ১ঃ 
মনে করুন যে আপনি খুব বিপদে পড়েছেন, আপনার বেশ কিছু টাকার খুব দরকার। এখন আপনার আশেপাশে একজন ব্যক্তিই আছে যে টাকা ধার দিবে, শর্ত হচ্ছে সুদ দিতে হবে ১০% হারে তখন আপনি কী করবেন? আপনার আর কোনো উপায় নেই, আপনি যে ব্যক্তি ১০% হারে সুদে ঋণ দিচ্ছে, তার কাছেই যাবেন 
দৃশ্যপট ২ঃ 
এখন আরো একটি দৃশ্য কল্পনা করুন আপনার পরিচিত ২ জন ব্যক্তি আছে ধার দেয়ার মত একজন ৮% হারে দিচ্ছে, আর একজন ১০% আপনি নিঃসন্দেহে যে ৮% হারে দিচ্ছে, তার কাছে যাবেন টাকা এখন আগের বারের চেয়ে একটু কম দুষ্প্রাপ্য 
দৃশ্যপট ৩ঃ  
এবার ভাবুন এমন একটা পরিস্থিতি যেখানে প্রচুর মানুষ আপনাকে বিনা সুদে ধার দিতে রাজি আছে আর কিছু মানুষ আছে যারা ২-৩% সুদ ছাড়া আপনাকে ধার দিবে না তখন কি আপনি রাজি হবেন সুদ দিতে যেখানে সুদ ছাড়াই আপনি টাকা ধার পাচ্ছেন? নিশ্চয়ই না
তাহলে আমরা কি বুঝলাম?
·       একটা এলাকায় বা সমাজে টাকা যত দুষ্প্রাপ্য হয়, সুদের হার তত বাড়তে থাকে  
দৃশ্যপট ৪ঃ 
আসুন এবার একটু অন্যরকম একটা পরিস্থিতি চিন্তা করি একটা সমাজে, টাকার কোনো অভাব নেই, কিন্তু টাকা ইস্যু করার ক্ষমতা  বা সমস্ত টাকার নিয়ন্ত্রণ শুধু একটা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মাঝেই সীমাবদ্ধ  সেক্ষেত্রে তারা যদি সিদ্ধান্ত নেয় যে সুদ ছাড়া কাউকে টাকা ধার দেয়া হবে না, তাহলে টাকা দুষ্প্রাপ্যই রয়ে যাচ্ছে, টাকার পরিমাণ অঢেল থাকা সত্ত্বেও
এখান থেকে আমরা শিখলাম যে
·      টাকার পরিমাণ অঢেল এমনকি প্রয়োজনের অতিরিক্ত থাকা সত্ত্বেও যদি সব টাকার নিয়ন্ত্রণ কোনো গ্রুপ বা সিণ্ডিকেটের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকে, তাহলেও সেই সমাজে সুদ ছাড়া টাকা পাওয়া অসম্ভব হয়ে যেতে পারে
তাহলে আমরা বুঝলাম যে মূলত টাকার দুষ্প্রাপ্যতাই সুদভিত্তিক লেনদেনকে সম্ভব করে তোলে।এক কথায় যখন টাকার চাহিদা/ ডিমাণ্ডের তুলনায় যোগান/ সাপ্লাই কম হয়, তখনই সুদের হার বেড়ে যায়। 
যদি সিস্টেমটা এমন হয় যে সেখানে টাকা ছাড়া কোনো লেনদেন করা সম্ভব না, তবে পরিস্থিতি আরো কঠিন হয় পড়ে কারণ তাতে টাকার ডিমাণ্ড আরো বেড়ে যায় যাদের কাছে অতিরিক্ত টাকা আছে কিংবা  টাকা সাপ্লাই এর ক্ষমতা যাদের হাতে, তারা এটার সুযোগ নিয়ে সুদের হার বাড়িয়ে দিতে পারে কিন্তু যদি এমন হয় যে কিছুটা হলেও বিনিময় অর্থনীতি বিদ্যমান, মানে মানুষ তার কাছে থাকা টাকা ছাড়া অন্যান্য সম্পদ যেমন চাল, ডাল এগুলো দিয়ে লেনদেন করতে পারে, তাহলে টাকার ডিমাণ্ড কমে যায়। সুবিধাবাদী গোষ্ঠী যাদের কাছে টাকা নেই তাদের অবস্থার সুযোগ অতটা নিতে পারে না 
এখানে একটা বিষয় লক্ষণীয় যে। তারা স্রেফ টাকার সাপ্লাই এর চেয়ে ডিমাণ্ড বেশী-এই অবস্থার, কিংবা টাকার নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে, এটার সুযোগ নেয় 
আশা করি এতক্ষণের  আলোচনায় আমরা বুঝলাম যে কখন একটা সমাজে সুদ বিরাজ করে কিন্তু এটা থেকে কি আমরা বুঝলাম যে সুদ কী?
সুদ হচ্ছে সেই অতিরিক্ত চার্জ যা বিনিময়ের মাধ্যম তথা টাকা ধার দেয়ার সময় অতিরিক্ত টাকার মালিক/ টাকার নিয়ন্ত্রকরা আদায় করে থাকে 
সহজ ভাষায় একে আমরা একটা সেতুর টোলের সাথে তুলনা করতে পারি টোল না দেয়া পর্যন্ত যেমন ব্রিজ পার হওয়া যায় না, সুদ না দেয়া পর্যন্ত টাকার মালিক/ নিয়ন্ত্রকরা বাজারে টাকা ছাড়ে না


No comments:

Post a Comment

রিবা নিয়ে জানা সিরিজের স্ক্রিপ্ট -১১

রিবার নানা রূপ আজকের পর্বে আমরা রিবার নানা রূপের সাথে পরিচিত হব যেন দৈনন্দিন জীবনে আমরা সেগুলো থেকে বেঁচে থাকতে পারি-   টাকা ধার নেয়ার...