এই ভিডিওটার লিংক ( রিবা নিয়ে প্রচলিত ভুল
ধারণা ২)
আগের ভিডিওতে আমরা রিবা নিয়ে কিছু ভুল ধারণার সাথে পরিচিত
হয়েছি,
আজকে আমরা প্রথম ভুল ধারণাটা নিয়ে একটু বিস্তারিত কথা বলবো
ইনশাল্লাহ।
ভুল ধারণা :১
ব্যাংকের সুদ রিবা নয়, কারণ তা চক্রবৃদ্ধি হারে নয়।
যারা এই মতের প্রচারক, তারা মূলত কুরআনের নিচের
আয়াতটিকে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করেন-
হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়ো না। আর
আল্লাহকে ভয় করতে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণ অর্জন করতে পারো। (৩:১৩০)
এই একটা আয়াত থেকেই কোনো উপসংহারে পৌঁছানোর আগে আমাদের দেখা
উচিৎ যে কুরআনে রিবার ব্যাপারে অন্য আয়াতগুলো কী। আমাদের একটা সমস্যা হচ্ছে যে
আমরা কুরআনকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখে থাকি, যেটা একেবারেই উচিৎ নয়।
রিবার বিষয়টা আসলে কুরআনে মোট চারবার উল্লেখ করা হয়েছে।
এগুলো কোন ক্রমে নাযিল হয়েছে সেটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ক্রমানুসারে আয়াত গুলো
হচ্ছে-
১ম আয়াতঃ
মানুষের ধন-সম্পদে তোমাদের ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পাবে, এই আশায়
তোমরা সুদে যা কিছু দাও, আল্লাহর কাছে তা বৃদ্ধি পায় না।
পক্ষান্তরে, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পবিত্র অন্তরে
যারা দিয়ে থাকে, অতএব, তারাই দ্বিগুণ
লাভ করে।(৩০: ৩৯)
২য় আয়াতঃ
বস্তুতঃ ইহুদীদের জন্য আমি হারাম করে দিয়েছি বহু পূত-পবিত্র
বস্তু যা তাদের জন্য হালাল ছিল-তাদের পাপের কারণে এবং আল্লাহর পথে অধিক পরিমাণে
বাধা দানের দরুন। আর
এ কারণে যে, তারা সুদ গ্রহণ করত, অথচ এ ব্যাপারে
নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল এবং এ কারণে যে, তারা অপরের
সম্পদ ভোগ করতো অন্যায় ভাবে। বস্তুত; আমি কাফেরদের জন্য
তৈরী করে রেখেছি বেদনাদায়ক আযাব। (৪:১৬০-১৬১)
৩য় আয়াতঃ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়ো না। আর
আল্লাহকে ভয় করতে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণ অর্জন করতে পারো। (৩:১৩০)
৪র্থ আয়াতঃ
যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতে দন্ডায়মান হবে,
যেভাবে দন্ডায়মান হয় ঐ ব্যক্তি, যাকে শয়তান
আসর করে মোহাবিষ্ট করে দেয়। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা
বলেছেঃ ক্রয়-বিক্রয় ও তো সুদ নেয়ারই মত! অথচ আল্লা’হ তা’আলা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ
করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। অতঃপর যার কাছে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে উপদেশ
এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, পূর্বে যা হয়ে গেছে, তা তার। তার ব্যাপার আল্লাহর উপর নির্ভরশীল। আর যারা পুনরায় সুদ নেয়,
তারাই দোযখে যাবে। তারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে।আল্লাহ তা’আলা
সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান খয়রাতকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ পছন্দ করেন না কোন
অবিশ্বাসী পাপীকে। হে
ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যে সমস্ত বকেয়া আছে, তা পরিত্যাগ কর, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক। অতঃপর যদি তোমরা পরিত্যাগ
না কর,
তবে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে যাও। কিন্তু
যদি তোমরা তওবা কর, তবে তোমরা নিজের মূলধন পেয়ে যাবে।
তোমরা কারও প্রতি অত্যাচার করো না এবং কেউ তোমাদের প্রতি অত্যাচার করবে না। (২ : ২৭৫-২৭৯)
লক্ষ্য করলে আমরা বুঝবো যে আয়াতগুলোতে রিবার ব্যাপারে
অবস্থান ক্রমশঃ কঠিন থেকে কঠিনতর হয়েছে। প্রথমে স্রেফ ইঙ্গিত করা হয়েছে যে এটা
আল্লাহর পছন্দনীয় নয় (সূরা রুমের আয়াতে)। এরপর সূরা নিসার আয়াতে আমাদের জানানো
হয়েছে যে ইহুদীদের জন্যও রিবা ভিত্তিক লেনদেন নিষিদ্ধ ছিলো, কিন্তু
ওরা সেটা মানে নি। এরপর সূরা আল ইমরানের সেই আয়াতটি নাযিল হয় যেটাতে দ্ব্যর্থহীণ
ভাষায় মুসলিমদের জন্য রিবাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু এখানেই শেষ নয়, রিবার
ব্যাপারে কঠোরতম শব্দাবলী ব্যবহার করা হয়েছে সূরা বাক্বারাতে যেখানে সুদের হারের
ব্যাপারে কোনো কথাই বলা হয় নি। আসলে সূরা
আল ইমরানের আয়াতটি, যেখানে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদের কথা বলা
হয়েছে, সেটা বলা হয়েছে তৎকালীন আরবদের মাঝে প্রচলিত প্রথার
উদাহরণ হিসেবে, কোনো শর্ত হিসেবে নয়। তাই যারা বলেন ব্যাংকের
সুদ রিবা নয়, কারণ তা চক্রবৃদ্ধি হারে নয়, তারা আসলে
রিবা সম্পর্কিত কুরআনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আয়াতটিকেই এড়িয়ে যান।
No comments:
Post a Comment