Tuesday, July 2, 2019

নোমান আলি খানের মালয়শিয়া সফরে ভলান্টিয়ার হবার অভিজ্ঞতা -২


১ম পর্বের লিংক

Live শোনার সৌভাগ্য?

আমি ইসলামিক স্কলারদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী গঠন করার সময় একটা ব্যাপারে খুব সচেতন থাকার চেষ্টা করি- সেটা হচ্ছে তারা যেন আমাদের চোখে সেলিব্রেটিতে পরিণত না হন, অর্থ্যাৎ একজন সিনেমাস্টারকে আজকাল যেভাবে দেখা হয়, তাদের প্রতি আমাদের আচরণ যেনো তেমন না হয়ে যায়। অবশ্যই তারাই আমাদের চোখে সুপারস্টার বা রোল মডেল হবেন, কিন্তু আচরণ যেনো সীমা লঙ্ঘন না করে। তাই প্রথম দিনের লেকচার শেষ হবার পর সবাই যখন প্রায় ঊনার গায়ের উপর পরা শুরু করল ছবি তোলার জন্য, দূর থেকে সেই দৃশ্য দেখে আমার খুবই বিরক্ত লাগছিল। আর এক বোন যখন ঊনাকে ঢুকতে দেখে উউউউউউউ I saw him, He is soooooo cute  বলে খুশির ধ্বনি করল, মেজাজটা যে খারাপ হইসিল আমার, চেহারায়ও মনে হয় ফুটে উঠছিল সেটা। ( এব্যাপারে বিস্তারিত পড়তে পারেন এই লেখাটাতে, খুব জরুরী একটা concept- 
http://muslimmatters.org/2011/06/06/shaykhy-crushes-trials-in-the-life-of-men-of-knowledge/) আমার মনে হচ্ছিল কেন উস্তাদ নোমান আলি খান এটা allow করছেন...পরের দিন ঊনার মুখ থেকেই উত্তরটা পেয়েছিলাম অবশ্য!

আমার এই দৃষ্টি ভঙ্গীর জন্যই সম্ভবত  আমি live শুনতে পাচ্ছি বা পাব এটা প্রথম থেকেই আমার কাছে  বিশাল কোনো ব্যাপার ছিল না।জ্ঞান অর্জনই যদি মুখ্য উদ্দেশ্য হবে তবে  ইউটিউবে শোনা আর সরাসরি শোনার মাঝে effectively কোনো পার্থক্য পাওয়ার কথা না, আমি পাইও  না। কিন্তু সামনাসামনি স্কলারদের কাছ থেকে দ্বীন শিক্ষা করার একটা বিশাল সুবিধা আছে, যেটা আমরা মিস করি অনলাইনে, সেটা হল আদব শিক্ষা! আমাদের মুসলিমদের এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমরা আদব জানি না! এর আগে আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আমাদের IOU এর একজন শিক্ষক, শেখ রিয়াজ আনসারীর সাথে মিটিং করার ঊনি যখন আমার স্বামীর সাথে এবং আমার সুপারভাইসরের সাথে কথা বলছিলেন, তখন একভাবে, যখন আমার সাথে তখন সম্পূর্ণ অন্যভাবে। আসার পর আমি আর আমার স্বামী একমত হয়েছিলাম যে এই যে দারুণ ভাবে ঊনি lower your gaze মূলনীতি বাস্তবায়ন করলেন, এটা সামনা সামনি না দেখলে বুঝা যেত না, কখনই না! Lowering your gaze এর উপর অনেকগুলা লেকচার শোনার সমান সামনা সামনি এভাবে একবার বাস্তবায়িত হতে দেখা।

একদম অনুরূপ উপলব্ধি হয়েছে এবার উস্তাদ নোমান আলী খানকে দেখে। যারা ঊনার লেকচার নিয়মিত শুনে অভ্যস্ত, তারা জানেন যে ঊনার অধিকাংশ লেকচারের থিম থাকে যে A Practicing Muslim should be a very approachable person. নিয়্যতের পরিশুদ্ধতা নিফাক্বের ব্যাপারেও ঊনি খুব সাবধান থাকতে বলেন।তো একজন দায়ীর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিৎ সে যা preach করবে, তা সে নিজের জীবনে apply করবে। একটা মানুষ যে কি পরিমাণ হাস্যমুখী আর বন্ধুবৎসল হতে পারে তা ঊনাকে না দেখলে বুঝা যাবে না। ছেলে ভলান্টিয়ারদের কাঁধে হাত রেখে কথা বলছেন যেনো ঊনার দোস্ত টাইপ। এমন একজন মানুষ, যাকে অনায়াসে বলা যায় নিজের সীমাবদ্ধতার কথা, ইসলামের পথে হাঁটতে গিয়ে হোঁচট খাওয়ার কথা। যে মানুষটা এখনও ফরয নামাযে নিয়মিত হতে পারে নাই সে, কিংবা যে কিনা তাহাজ্জুদে নিয়মিত উঠতে পারছে না বলে কষ্ট পাচ্ছে সে-------দুইজন, ইসলাম পালনের দিক থেকে দুই প্রান্ত সীমায় অবস্থানকারী, উভয়েই যেনো ঊনার কাছে নির্দ্বিধায় এসে খুলে বলতে পারবে নিজের অক্ষমতার কথা, আপন ভাবতে পারবে ঊনাকে। আমি বিস্ময়ে ভাবছিলাম কিভাবে একটা মানুষ এতটা approaching হতে পারে?

তারপর নিজেই অনেক ভেবে বের করেছি উত্তরটা-------কারণটা হল কুরআন। আপনার হৃদয়ে যখন বিশাল পরিমাণে কুরআন থাকবে, আপনার দিন যখন কাটবে কুরআন অধ্যয়ন করে বেওং পড়িয়ে, তখন আপনার হৃদয় হবে একটা খোলা আকাশের মত, সব ধরণের পাখিরাই মুক্তভাবে বিচরণ করতে পারবে!

আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি এমন ছিলেন না? সাহাবীরাতো এসে ঊনাকে কথাও বলতে পারত যে I love Zina….আমরা কি চিন্তা করতে পারি স্বপ্নেও এমনটা? কিন্তু ঊনি এমন approachable ছিল যে সাহাবীটার মনে হয়নাই যে ঊনাকে বললে ঊনি নাঊযুবিল্লাহ আস্তাগফিরুল্লাহ বলে ঊনাকে দূরে ঠেলে দিবেন।

এখন এই যে new comer দের প্রতি Inclusiveness, সেটা করতে গিয়ে আমরা অনেক সময়ই ভুলে যাই যে কোথায় লাইন টানতে হবে। আমরা ভুলে যাই যে কারো সাথে মিশতে গেলে, আমি তার আপন-তাকে এই কথা বুঝাতে গেলে আমার তার মত হবার দরকার নাই। হাসি, মিষ্টি ব্যবহারই যথেষ্ট। আমি যে পথ হেঁটে এসেছি, যারা সেই পথের শুরুতে আছে, তাদেরকে সহজ করতে আমার আবার পিছন ফিরে যাবার দরকার নেই, কিংবা দরকার নেই নিজের আধ্যাত্মিক পথ চলাতে থমকে দাঁড়ানোর, একসাথে যাবো বলে। কারণ দিনের শেষে এটা একটা ব্যক্তিগত জার্নি। যে মাত্র যাত্রা শুরু করেছে, সে যদি ওই পথে হেঁটে আসা মানুষদের থেকে আশ্বাস আর ভালোবাসাটা পায় তবে আল্লাহ্‌র সাহায্য নিয়ে সে একাই হেঁটে আসতে পারবে। তাই আমাদের approach হওয়া উচিত-নিজের practice এর ব্যাপারে খুব কড়া, আর অন্যকে সময় দেয়ার ব্যাপারে খুবই সহজ।
 এই জায়গাটায় সীমা টানতে আমরা অনেকেই ব্যর্থ হই। যেমন ধরুন আমার পরিবারের সদস্যরা যদি সবাই হিন্দী সিরিয়াল দেখতে অভ্যস্ত হয়, তাহলে আমি তারা যেনো আমার সাথে সহজ হয় সেজন্য নিজে সিরিয়াল দেখতে বসে যাবো না। কিন্তু তারা যা করছে সেজন্য তাদের দুরছাই ও করব না......আমার ব্যবহার এমন হবে যে এসব কিছুর পরও তারা যেনো আমাকেই আপন ভাবে!

আমি জানি এটা কঠিন......খুব কঠিন। কিন্তু আগেই মনে হয় বলে নিয়েছি উপায়টা। কুরআনের সাথে সম্পর্ক। আজকাল আমরা নিত্য নতুন দাওয়াতী টেকনিক উদ্ভাবন করছি-উদ্দেশ্য-নতুন নতুন মানুষকে ইসলামের প্রতি আগ্রহী করে তোলা। একবারো কি ভেবে দেখেছি এই পদ্ধতিগুলো সুন্নাহ সম্মত কিনা? ওইসব পদ্ধতি দিয়ে যার দিকে ডাকছি তা কি আসলেই ইসলাম কি না? বিশ্ব মুসলিম সুন্দরী প্রতিযোগিতা মনে হয় এর উপযুক্ত উদাহরণ। Nouman Ali Khan দ্বিতীয় দিন যে টপিকের উপর কথা বলেছিলেন, The Linguistic Miracle of Quran[1] আমি বিশ্বাস করি Live Together করে এমন মানুষকেও আপনি ওই টকে নিয়ে যেতে পারবেন। এ ব্যাপারে  ইসলামকে আকর্ষনীয়ভাবে উপস্থাপন করার জন্য আপনাকে মিউজিককে হালাল করা যায় কিনা এমন ফতওয়া খুঁজতে হবে না...বা মনে করতে হবে না যে ইসলাম খুবই রসকষহীন। হাদীসে কিন্তু স্পষ্টভাবে এসেছে যে আল্লাহ কুরআন দিয়ে একটি জাতিকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যান, আবার কুরআন দিয়েই একটি জাতিকে অপদস্থ করেন। কুরআন কিয়ামতের দিন হয় আমার পক্ষে সাক্ষী হবে, না হয় বিপক্ষে। মাঝামাঝি কোনো অবস্থান নেই। 
আমরা কি প্রস্তুত এর জন্য-The striking question that I had in my mind after the 1st day meeting with him.

পরের পর্বে  উস্তাদের সাথে ভলান্টিয়ারদের যে special Question Answer session ছিল, তা থেকে যা শিখেছি সেটা তুলে ধরব ইনশাল্লাহ।

৩য় ও শেষ পর্ব



No comments:

Post a Comment

রিবা নিয়ে জানা সিরিজের স্ক্রিপ্ট -১১

রিবার নানা রূপ আজকের পর্বে আমরা রিবার নানা রূপের সাথে পরিচিত হব যেন দৈনন্দিন জীবনে আমরা সেগুলো থেকে বেঁচে থাকতে পারি-   টাকা ধার নেয়ার...