Wednesday, July 3, 2019

সূরা বায়্যিনাহঃ এক ঝলক দেখাঃ১



( এই লেখাটা উস্তাদ নুমান আলী খানের লেকচার অনুসারে লেখা। ঊনার লেকচার ইংরেজী থেকে বাংলায় অনুবাদ করে দিয়েছিলো আমার ফ্রেণ্ড রাবেয়া রওশীন। আল্লাহ ওকে উত্তর প্রতিদান দিক) 


প্রথমেই আমরা দেখবো যে এই সূরার সাথে আগের সূরার সম্পর্কগুলো কী। এক নজরে দেখা যাক-

সূরা আলাক্ক [৯৬] –  প্রথম সূরা যার মাধ্যমে ওহী আসা শুরু হয়।

সূরা ক্কদর [৯৭] -  বর্ণনা করেছে কিভাবে ওহী আসা শুরু হয় [অর্থ্যাৎ, কুরআন নাযিল হয়েছিল রামাদানে লাইলাতুল ক্কদরে]

সুরা বায়্যিনাহ [৯৮] – ওহীর সারাংশ ও পরিণতি কী

এই সূরা খুব পরিষ্কারভাবে জানাচ্ছে আল্লাহর দ্বীন কি, এবং এই দ্বীন ও এর অনুসারীরা কেমন হবে। তাই এর নাম – বায়্যিনাহ [মানে স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ] এর বর্ণনার সাথে সবচেয়ে মানানসই।

এই সূরা কোথায় নাযিল হয়েছিল?

সূরাটা মক্কায় নাযিল হয়েছিল না মদীনায় এই বিষয়ে মতপার্থক্য আছে।

কুরআনের সব সূরার মাঝে এই সূরাটা বোঝা ও অনুবাদ করা সবচেয়ে কঠিন। কেন? সেটা আমরা বোঝার চেষ্টা করবো নিচে।

আয়াত ১

لَمْ يَكُنِ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ وَالْمُشْرِكِينَ مُنفَكِّينَ حَتَّىٰ تَأْتِيَهُمُ الْبَيِّنَةُ 

কিতাবীদের মধ্যে যারা কুফরী করে তারা ও মুশরিকরা, তাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ না আসা পর্যন্ত (নিজেদের অবিশ্বাসে) অটল থাকবে।

এই প্রথম আয়াতটা ক্রম ও অর্থ অনুযায়ী বোঝাটা সবচেয়ে কঠিন কারণ আমরা ইতিহাস থেকে দেখি যে আহলে কিতাব ও মুশরিকরা আল্লাহর সাথে শিরক (অংশীদার স্থাপন) করা থেকে বিরত হয়নি, এমনকি বায়্যিনাহ/স্পষ্ট প্রমাণ আসার পরও। তাহলে কেন এই আয়াতে এইভাবে বলা হলো?

আয-যামাকশারি মনে করেন যে এখানে আসলে আল্লাহ অবিশ্বাসীদের দৃষ্টিভঙ্গির বিস্তারিত বর্ণনা দিচ্ছেন। তাদের যুক্তি হচ্ছে – যতক্ষণ পর্যন্ত না কোন নির্দিষ্ট বায়্যিনাহ/স্পষ্ট প্রমাণ তাদের কাছে আসবে ততক্ষণ পর্যন্ত তারা কোনভাবেই তাদের শিরক ত্যাগ করবে না। এই মতকে সমর্থন করে এমন প্রমাণ আছে কুরআনের অন্যত্র ৩:১৮৩, ইসরা ১৭:৯০-৩ ইত্যাদি। অর্থ্যাৎ তারা এমন একটা বায়্যিনাহ দাবী করছে যা এতটাই স্পষ্ট যে এর অলৌকিকতা তর্কাতীত এবং শুধুমাত্র তাহলেই তারা বিশ্বাস করবে।

আরেকটি মত- শানক্কীতি: আহলে কিতাব ও মুশরিকরা তাদের কুফর/শিরক(অবিশ্বাস) ত্যাগ করবে না যতক্ষণ না বায়্যিনাহ আসে – তারপর তাদের অনেকেই সত্যিই বিশ্বাস করেছিল।

এর সুস্পষ্ট প্রমাণ আমরা পাই ইসলামের প্রথমদিকের ইতিহাসে যখন আরবরা ও পারস্যের অধিবাসীরা (যারা মুশরিক ছিল) নিজেদের পুরনো ধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে যখন বায়্যিনাহ/ইসলামের স্পষ্ট প্রমাণ তাদের কাছে উপস্থিত হয়।  একই রকম ঘটনা ঘটেছে সিরীয় খ্রিষ্টান ও ইয়াহুদীদের (আহলে কিতাব) ক্ষেত্রে যারা দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করেছিল; ইতিহাসজুড়ে এমন ঘটে চলেছে, কখনো কম কখনো বেশি। যে সব সময়ে বায়্যিনাহ খুব বেশি বাধা না পেয়ে প্রচারিত হতে পেরেছে সে সব সময়ে অনেক মানুষ ইসলামে প্রবেশ করেছে। বায়্যিনাহ/স্পষ্ট প্রমাণ তাদের কাছে আসা পর্যন্ত আহলে কিতাব ও মুশরিকরা তাদের ধর্মীয় সংষ্কৃতিতে শতাব্দী এবং এমনকি সহস্রাব্দ ধরে অটল ছিল।

আল্লাহর পক্ষ থেকে সত্য বাণী সমাজে আসার আগে সেখানে ৪ ধরণের মানুষ দেখা যায়ঃ

১। ভিতর ও বাইরে দুই দিকেই ভালো, যেমন আবু বকর আস-সিদ্দীক ইসলামে আসার আগে থেকেই ভালো ছিলেন
২।  ভিতরে ভালো কিন্তু সমাজের দ্বারা প্রভাবিত তাই তাদের ভালো দিক প্রকাশ পাচ্ছে না, যেমন হামযা বিন আব্দুল মুত্তালিব।
৩। ভিতরে খারাপ কিন্তু সমাজের চোখে ভালো, যেমন আবু জাহাল।
৪। ভিতর ও বাইরে দুই দিকেই খারাপ, যেমন আবু লাহাব।

এই সূরায় শব্দটা হচ্ছে মুনফিকীনা – কোন কিছু তার স্থান থেকে আলাদা করা। এই দ্বীন মানুষকে দুই ভাগে বিভক্ত করে, যেখানে আগে তারা একই সমাজে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে ছিল।

তাই বায়্যিনাহ এসেছিল বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী এই দুই দলকে একে অপরের থেকে স্পষ্টভাবে আলাদা করতে।

আয়াত ২:

رَسُولٌ مِّنَ اللَّـهِ يَتْلُو صُحُفًا مُّطَهَّرَةً

আল্লাহর পক্ষ থেকে এক রাসূল পবিত্র কিতাবসমূহ তিলাওয়াত করে।

প্রথম আয়াতে কোন বায়্যিনাহ/স্পষ্ট প্রমাণের কথা বলা হয়েছে? পরের আয়াতে উল্লেখিত এই দুইটা হচ্ছে বায়্যিনাহঃ

১। দ্বীনের তাত্ত্বিক দিক [কিতাব] এবং;
২। এর বাস্তবায়ন [আল্লাহর রাসূলের উদাহরণ]

আয়াত ৩:

فِيهَا كُتُبٌ قَيِّمَةٌ
তাতে রয়েছে সঠিক বিধিবদ্ধ বিধান।

কুতুবুন – লেখা বোঝায় (যেমন, বইকে কিতাব বলে), এবং হুকুমও বোঝায় (আল্লাহর বিধান) ক্কায়্যিমাহ ক্কামা – দৃঢ়, সোজা থাকা, যা সোজা হয়ে দাঁড়ায়। যদি কোন কিছু বাঁকা থাকে, তাহলে এটাও সোজা করা হয়। এখানে ইসলামী বিধানগুলোর বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়েছে।

(চলবে)

২য় পর্বের লিংক










No comments:

Post a Comment

রিবা নিয়ে জানা সিরিজের স্ক্রিপ্ট -১১

রিবার নানা রূপ আজকের পর্বে আমরা রিবার নানা রূপের সাথে পরিচিত হব যেন দৈনন্দিন জীবনে আমরা সেগুলো থেকে বেঁচে থাকতে পারি-   টাকা ধার নেয়ার...