Wednesday, March 18, 2020

রিবা নিয়ে জানা সিরিজের স্ক্রিপ্ট -১১


রিবার নানা রূপ
আজকের পর্বে আমরা রিবার নানা রূপের সাথে পরিচিত হব যেন দৈনন্দিন জীবনে আমরা সেগুলো থেকে বেঁচে থাকতে পারি- 
টাকা ধার নেয়ার ক্ষেত্রেঃ
  • এতদিনে আমরা নিশ্চয়ই বুঝে গেছি যে কাউকে টাকা ধার দিলে কোনো যুক্তিতেই বেশী ফেরত নেয়ার অবকাশ নেই। এটা সুদী ব্যাংকে টাকা ডিপোজিট থাকার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য
  • ক্রেডিট কার্ডে যত টাকা ধার নেয়া হচ্ছে তার বিপরীতে যে টাকা সুদ দেয়া হয় সেটা নিষিদ্ধ রিবা
  • বিকাশ বা এই জাতীয় মোবাইল পেমেন্ট সিস্টেমেও জমাকৃত টাকার উপরে সুদ নেয়ার অপশন থাকে। সেটা অফ রাখতে হবে
  • বিভিন্ন বণ্ড, সঞ্চয়পত্র এগুলোতে আসলে ইস্যুকারীকে ধার দেয়া হয় তাই এটার বিপরীতে যে অতিরিক্ত টাকা দেয়া হয় সেটাও রিবা 

অন্যান্য মুদ্রা ভিত্তিক লেনদেনের ক্ষেত্রে রিবাঃ
আগের  একটি পর্বে ( ৮ম) আমরা একটি হাদীসটি উল্লেখ করেছি যেখানে মুদ্রা ব্যবহারের একটি সাধারণ একটা মূলনীতি বলে দেয়া হয়েছে, সেটার আলোকে-
·       আমরা যদি দুটো দেশের মুদ্রার মাঝে লেনদেন করতে চাই, যেমন ডলার আর টাকা, তাহলে এক্সচেঞ্জ রেট বা পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে যে কোনো রেটে আমরা লেনদেন করতে পারি, কিন্তু সেটা হতে হবে নগদ

·       যদি একই মুদ্রার মাঝে লেনদেন করতে চাই তাহলে কমবেশী করা যাবে না। যেমন আমরা অনেক সময় ভাংতি টাকা খুঁজে থাকি। ভাংতি টাকা দেয়া নিয়ে কোনো ব্যবসা করা যাবে না ।আবার ঈদের সময় দেখা যায় আমরা পুরান নোটের বদলে নতুন নোট নিয়ে থাকি, তখন পরিমাণে কম বেশী করি, যেটা করা যাবে না

আজকাল যদিও আমরা সোনা/ রূপা এগুলো মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার করি না, তবুও হাদীসটিতে যেহেতু সরাসরি নাম ধরে এগুলোর কথা এসেছে, তাই এগুলো যে অবস্থাতেই থাকুক না কেন, মুদ্রার বিধান প্রযোজ্য হবে। যেমনঃ 

  •  পুরান সোনার গয়নার সাথে নতুন গয়না সরাসরি লেনদেন করা যাবে না। পুরোনোটা বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে নতুনটা কিনতে হবে। 

  • সোনার গয়না আর সোনার বার বা কয়েনের মাঝে যদি লেনদেন করা হয় তাহলেও ওজন করতে হবে এবং সমান ওজনের হতে হবে। সোনার গয়নায় কারুকার্য করা আছে বলে কোনো অতিরিক্ত চার্জ রাখা যাবে না 

সার্ভিস নেয়ার ক্ষেত্রে রিবাঃ

  • আমরা যদি কিস্তিতে কোনো পণ্য কিনে থাকি  আর সেটার নির্ধারিত মূল্য (যা পরে বদলানোর সুযোগ থাকে না) যদি ক্যাশ প্রাইসের চেয়ে বেশী হয় তাহলে সমস্যা নেই। এটাকে অনেকে সুদের সাথে গুলিয়ে ফেলেন। কিন্তু আসলে এটা সুদ নয়, কারণ কিস্তিতে পাওয়ার কারণে ক্রেতা পণ্যটা পূর্ণ মূল্য শোধ করার আগে থেকেই ব্যবহার করতে পারেন, এই সুবিধার বিনিময়ে কিছু অতিরিক্ত মূল্য চার্জ করাতে কোনো সমস্যা নেই। তবে মূল্যটা অবশ্যই একটা চুক্তির মাধ্যমে চূড়ান্ত করতে হবে এবং পরে আর বদলানো যাবে না। অর্থ্যাৎ কিস্তিতে বেশি দামে নিয়ে পরে দুই দিন পর পুরো পরিশোধ করলেও দাম কিস্তিরটাই থাকবে
  • তবে কিস্তির দেনা শোধে ব্যর্থ হলে সময়ের ভিত্তিতে তার ওপর যদি বেশী টাকা নেয়া হয় তবে সেই অতিরিক্ত টাকাটা রিবা হিসেবে গণ্য হবে
  • একইভাবে যে কোনো পাওনা পরিশোধে দেরী করলে যদি তার ওপর কোন চার্জ আরোপ করা হয়, তবে তা রিবা। তাই বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল ইত্যাদির উপরে জরিমানা রিবার মধ্যে গণ্য হবে

এখানে আমরা শুধু বহুল প্রচারিত কয়েকটি রূপের কথা বলেছি। অবশ্যই আরো নানারকম রূপে রিবা আমাদের জীবনে আবির্ভূত হতে পারে। তাই কোনো কিছু নিয়ে সন্দেহ হলে আমাদের উচিৎ কোনো আলিমের সাথে পরামর্শ করে নিশ্চিত হয়ে নেয়া। এব্যাপারে ইসলামী অর্থনীতি ফোরাম নামের গ্রুপটি আমাদের সাহায্য করতে পারে https://www.facebook.com/groups/iecforum/


Thursday, September 26, 2019

‘আলোকিত মানুষের’ চোখে শাড়ি

শর্মীঃ এই আজকের প্রথম আলোতে আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদের ‘শাড়ি’ নামের লেখাটা পড়েছিস?
স্নিগ্ধাঃ হুম দেখলাম। এমনিতে পড়া হত না হয়তো কিন্তু যে হারে ফেসবুকে মানুষজন কথা বলতেসে এটা নিয়ে, কৌতূহল বশত চোখ বুলালাম একবার। এভাবে উলটা মানুষ আরো মার্কেটিং করতেসে লেখাটার।
শর্মীঃ তোর কি বক্তব্য লেখাটা নিয়ে?
স্নিগ্ধাঃ মানুষজন এভাবে রিঅ্যাক্ট করতেসে কেন আমার কাছে ক্লিয়ার না আসলে। লেখাটার ভাষা খুবই বাজে হলেও শাড়ি নিয়ে যা বলসে তার মূল থিম তো ঠিকই আছে। এটা একটু উলটা পালটা ভাবে পরলেই ছেলেদের বিশেষ আকাংখা জাগ্রত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল আর লেখাটার লেখকের চিন্তা ভাবনা যে এমন তা তো জানাই কথা। তোরা আসলে অনেক ছোট, ঊনার আগের বিটিভিতে অনুষ্ঠান উপস্থাপনা বা এসব দেখিস নাই তো, তাই একটা ফেরেশতা টাইপের ইমেজ বানায় রাখসিস। ঊনারা মেয়েদেরকে এভাবেই দেখতে চান তাই শাড়িকে শালীন পোশাক বলসেন। ঊনারা মেয়েদেরকে শালীনতার একটা অদ্ভুত কনসেপ্ট শিখাতে চান যাতে দুই কূলই রক্ষা হয়-মানে ঊনাদের দৃষ্টি সুখও হয় আবার সংস্কৃতিমনা বাঙ্গালী নারীর সৌন্দর্য শাড়ি এইসব হাবিজাবি কথাও বলা যায়। তবে ঊনার এই একটা লেখা দিয়ে ঊনার অন্য কাজ মানে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের এইসব, ভ্রাম্যমান লাইব্রেরী, সেগুলাকে ছোট করে দেখার পক্ষপাতী না আমি। ব্যক্তি মানুষ আর তার কাজকে আলাদা করে দেখা শিখতে হবে আমাদের।
শর্মীঃ আমি তোর সাথে কিছুটা একমত। আমি আসলে খুব অবাক হইসি লেখাটা পড়ে। আমার কাছে মনে হইসে এই বুড়া বয়সে এসে ঊনি ঊনার আসল চেহারাটা উন্মোচন করে দেয়ার ভুলটা কেন করলেন বুঝলাম না। আমি নিজে তো সেই কবে থেকেই বিশ্ব সাহিত্ব কেন্দ্রের নিয়মিত সদস্য। পড়ে পরীক্ষাও দিতাম। কখনো কুরআনের অনুবাদ বা ইসলামিক কোনো বই দেখি নি। ইসলামের প্রতি আমাদের এই সো কল্ড সুশীল সমাজের যে একটা সূক্ষ্ম বিতৃষ্ণা আছে এবং সেটা যে ঊনারা খুব সাফল্যের সাথে আমাদের প্রজন্মের মাঝে ঢুকিয়ে দিতে পেরেছেন এটা বুঝতে আমার অনেক সময় লেগেছে কিন্তু। নিজে বুঝলেও মানুষকে কিভাবে বুঝাবো তা বুঝে উঠতে পারতাম না। এখন ঊনি নিজেই সেই কাজটা করে দিলেন।
স্নিগ্ধাঃ আমি বুঝলাম না যে ঊনার এই লেখার সাথে ঊনার ইসলাম বিদ্বেষ এইসব হাবিজাবি কথা কোথা থেকে আসতেসে? তোদের হুজুরদের এইটা একটা সমস্যা কিন্তু! সব কিছুতেই ইসলামকে টেনে আনিস আর ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাস। ভাল্লাগে না যত্তসব।
শর্মীঃ শোন, তোকে আমি বুঝায় বলি ব্যাপারটা। আমরা যখন মেয়েদের পর্দা করার দুনিয়াবী উপকার নিয়ে কথা বলি, তখন বলি যে এতে মেয়েদের Sexual objectification টা হয় না, মানে মেয়েদেরকে স্রেফ ভোগ্যপণ্য হিসেবে দেখার রাস্তাটা বন্ধ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে একটা Underlying assumption হচ্ছে ছেলেদের এটা একটা স্বাভাবিক প্রবণতা- মেয়েদেরকে এভাবে কামনার দৃষ্টিতে দেখা। আল্লাহর ভয়ে দৃষ্টি সংযত যদি নাও করে তাতেও যেন আর এক দিক থেকে একটা রক্ষা কবজ থাকে, I mean, তাকালেও খুব বেশী কিছু যেন দেখা না যায়। এই যুক্তি যদি দেখানো হইতো তখন সুশীল ছেলেরা এবং ছেলেদেরকে খুব আপন ভাবা মেয়েরা হইহই করে উঠতো। আজকালকার ছেলেদের জন্য নারী অধিকার নিয়ে কথা বলা এক ধরণের স্মার্টনেস, জাতে উঠার ক্রাইটেরিয়া হয়ে গেছে। তাই তুই ছেলেদের দেখবি যে বলতে যে আমরা কি পশু নাকি যে মেয়ে দেখলেই উলটাপালটা চিন্তা আসবে? শিক্ষিত, সম্ভ্রান্ত ছেলেরা মেয়েদেরকে সম্মান করে সেটা তারা যেমন পোশাকই পরুক না কেন, এভাবে ছেলেদের Civic sense কে অপমান করা হয় ব্লা ব্লা রাজ্যের কথা শুনবি। এখন এই লেখা থেকে বুঝা যাচ্ছে যে বই পড়ে আলোকিত মানুষরাও মেয়েদেরকে এভাবেই দেখে যেভাবে এতদিন হুজুররা claim করে এসেছে। তারা খুব দুঃখিত যে আজকালকার মেয়েরা ওত বেশী শাড়ী পরে না, ঊনাদেরও মেয়েদের শরীরের উঁচু নিচু ভাঁজগুলো দু চোখ ভরে দেখা হয় না।
স্নিগ্ধাঃ ওই, লেখাটা থেকে এমনে শব্দ তুলে ধরিস না তো, খুবই বাজে লাগতেসে কানে। খুব ভালগার লাগসে আমার কাছে লেখাটা।
শর্মীঃ তবে এই লেখাটা পড়ে আমার কাছে আরো একটা জিনিস হঠাৎ মনে হইসে।আল্লাহ কেন মানুষের ছবি আঁকতে নিষেধ করসেন এইটার যৌক্তিক ব্যাখ্যা এতদিন আমার কাছে কিছু ছিলো না। ভাস্কর্যের ব্যাপারটা বেশ ক্লিয়ার যে এতে মূর্তি পূজার দুয়ার উন্মুক্ত হয়ে যেতে পারে। কিন্তু এইবার এই লেখাটার সাথে যেসব চিত্রকর্ম দেয়া হইসে সেটা দেখে আমার মনে হইসে যে ছেলেদের ছবি আঁকতে দিলে ওরা ঘুরে ফিরে মেয়েদের ছবিই আঁকবে আর সেখানে মেয়েদের বাজেভাবেই উপস্থাপন করবে। আমার কাছে তো লেখাটার সাথের ছবি গুলাও রীতিমত অশ্লীল লাগছে। তখন আমার মনে পড়লো যে ফেসবুকে একটা গ্রুপে আমি গল্প পড়তাম মাঝে মাঝে। সেখানেও মানুষ তাদের চিত্রকর্ম পোস্ট করতো, ক্যান জানি সব এই বুকের আঁচল খোলা নয়তো বাঁকা হয়ে দাঁড়ানো নয়তো আলু থালু বেশের মেয়েই হইতো।
স্নিগ্ধাঃ হুম এইটা ভালো পয়েন্ট বলছিস। ছবিগুলা আমারো চোখে লাগসে। মানুষকে স্বাধীনতা দিলে যেসব ব্যাপারে মানুষ সীমা মেনে চলতে পারবে না, সেগুলোতেই নিষেধ করা হইসে মে বি
শর্মীঃ এক্স্যাক্টলি। আর একটা জিনিসের ছবি আঁকার জন্য কল্পনা তো লাগেই সাথে একবার হলেও সেটার দিকে গভীর দৃষ্টি নিয়ে তাকাতে হয়। প্র্যাক্টিসিং মুসলিম কারো এমন আলু থালু বেশে নন-মাহরাম মেয়ের দিকে তাকানোর সুযোগ নাই তো। আর নিজের মাহরাম মেয়ের ছবিতো কেউ এঁকে প্রদর্শন করতে চাবে না।
স্নিগ্ধাঃ হুম। তবে প্রকৃতির ছবি আঁকার ব্যাপারে তোর চিন্তাটা কী?
শর্মীঃ ওই যে, যার ছবি আঁকবে তার দিকে বারবার নিবিষ্ট মন নিয়ে তাকাতে হবে, চিন্তা করতে হবে.........আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করা, ভ্রমণ করা, দেখা এগুলোতো কুরআনে খুবই উৎসাহিত করা হয়েছে। মানুষ পরকালের অস্তিত্ব এমনিতেই বুঝার কথা এইসব সৃষ্টি বৈচিত্র্য নিয়ে গবেষোনা করলে।
স্নিগ্ধাঃ হুম বুঝলাম। তোর কথাটা ভালোই যুক্তিযুক্ত লাগছে আমার কাছে। ওই ফোন রাখি রে এখন, আম্মার ইন্সুলিন নেয়ার সময় হয়ে গেছে।
শর্মীঃ হ্যাঁ, যা। আমিও পড়তে বসবো এখন ইনশাল্লাহ। ভালো থাকিস, আল্লাহ হাফেয।

শেষ যাত্রার শুরুতে.........

কেস স্টাডি ১ঃ
মৃত্যুটা হয়েছিলো একটা গাড়ি অ্যাক্সিডেন্টে।মৃতের সারা শরীরে অসংখ্য কাঁচ ঢুকে গিয়েছিলো। শয়ে শয়ে, নাকি হাজারে হাজারে? গোসল করানোর জন্য তার গায়ে হাত দেয়া যাচ্ছিলো না। কী করণীয়? অনেক চিন্তার পর একটা বুদ্ধি বের হলো। কিভাবে মনে নেই কিন্তু আলগোছে লাশটাকে আধ শোয়া করে পানির পাইপ দিয়ে তীব্র বেগে বিপরীত দিক থেকে পানি বর্ষণ করা হতে লাগলো। কিছুটা গাছে পানি দেয়ার মত করে। বেশ দূর থেকে আর খেয়াল করা হলো সামনে যেন কেউ না থাকে। সেই পানির তোরে অজস্র কাঁচ বেড়িয়ে এলো শরীর থেকে। এভাবে বেশ কয়েক বার করার পর অবস্থা অন্তত এটুক দাঁড়ালো যে গায়ে হাত দেয়া যাচ্ছে, কোনো রকমে গোসল সেরে কাফনের কাপড় পরিয়ে দেয়া হল।
কেস স্টাডি ২ঃ
মেয়েটা হাল ফ্যাশনের টাইট জিন্স আর টপস পরে বের হয়েছিলো বাসা থেকে। এবার একটু বেশীই আঁটসাঁট কেনা হয়ে গেছে কী? নাহ, যত লেগে থাকে গায়ের সাথে, বডি শেপটা ভালো বুঝা যায়, সুন্দরও লাগে- রিকশায় বসে ভাবছিলো মেয়েটি। কিন্তু বাধ সাধলো বিপরীত দিক থেকে তীব্র বেগে ছুটে আসা একটা বাস। রিকশা থেকে ছিটকে পরলো। গোসল করানোর সময় দেখা গেলো এত সাধের জিন্সটা এমনভাবে গায়ের সাথে এটে বসেছে যে কিছুতেই লাশের গা থেকে খোলা যাচ্ছে না। কী করণীয় তবে? বহু কষ্টে পায়ের গোড়ালি থেকে কাচি দিয়ে কাটা শুরু করা হল। শরীরের মাংস যেন কেটে না যায় এইভাবে, অতি সাবধানে জিন্সটা গা থেকে খোলা হল, গোসল দেয়া হল।
কেস স্টাডি ৩ঃ
‘আমার খুব ভয় লাগছে রে’- ডাক্তারের কাছে যেতে যেতে বোনকে ফিসফিস করে বলেছিলো মেয়েটি। যদি এবারো মেয়ে হয়, তোর দুলাভাই বলেছে যেন তার বাড়ির চৌকাঠ না মারাই।
আহ আপা, এত ভাবিস না তো, রিযিক্বের মালিক আল্লাহ। যেতে হবে না তোর ওই বাসায় তিন নাম্ব্বার মেয়েকে নিয়ে।
সাত পাঁচ এত না ভেবেই বড় বোনকে স্বান্তনা দিয়েছিলো। কিন্তু সে কি বুঝেছিলো কী বলেছিলো বোনকে?
আলট্রা সনোগ্রামে দেখা গেলো এবারো মেয়ে। বাড়ি ফিরে স্বামীকে কী বলবে এটা ভাবতে ভাবতেই ডাক্তারের চেম্বারে সিড়ি দিয়ে হোঁচট খেয়ে পরল মেয়েটি। কয়েক স্টেপ গরিয়ে যখন নিচে পরল, তখন সব শেষ। আপাদমস্তক বোরখাতে আবৃত, সুন্দরভাবে তার রাবের কাছে চলে গেলো মেয়েটি, সাথে গর্ভের মেয়েটাও। আর একজন মেয়ে জন্ম দেয়ার ‘বিশাল’ অপরাধের শাস্তি পেতে হল না আর। মেয়েটিকে গোসল করানোর অভিজ্ঞতা হয়েছিলো যার, তিনি বলেছিলেন এত সহজ আর সুন্দর ভাবে খুব কম গোসলই সম্পন্ন হয়েছে। হাল্কা একটা হাসি মুখে লেগেছিলো যেন ঠোঁটে। অপমানজনকভাবে কোনো বাড়িতে ফিরতে হয় নি, ফিরে গেছেন সম্মানজনক এক বাড়িতে।
কেস স্টাডি ৪ঃ
ঊনার পরিচিত কেউ নেই? আত্মীয় স্বজন?
নাহ, এই নার্সিং হোমে ফেলে গেছে দিন দশেক আগে, ভুয়া ফোন নম্বর আর ঠিকানা দেয়া। গত ৪-৫ ঘণ্টা ধরে পায়ুপথ দিয়ে বর্জ্য পদার্থ বের হচ্ছে তো হচ্ছেই। এমনিতে গোসল করাতে গিয়ে মৃতের শরীর থেকে রক্ত, জমে থাকা মল মুত্র বের হওয়া কিছুটা কমন অভিজ্ঞতা। কিন্তু এহেন ঘটনার সম্মুখীন হন নাই কখনো। বিরামহীনভাবে বের হয়ে চলেছে। আর ধৈর্য্য ধরে রাখা সম্ভব হল না.........মোটামুটিভাবে গোসল শেষ করিয়ে এক গাদা তুলার গাড্ডি চেপে ধরা হল ওই রাস্তায়। এভাবেই কাফনের কাপড় পরিয়ে ফেলা হল.........
উপরের ঘটনাগুলো ২০১০-১১ সাল নাগাদ একটা লাশ ধোয়ানোর ক্লাস করতে গিয়ে ইন্সট্রাক্টরের মুখে শোনা। বিস্তারিত এখন অনেকটাই মনে নেই, তাই কিছুটা কল্পনার আশ্রয় নেয়া হয়েছে, তবে মূল থিম ঠিক আছে। যিনি ক্লাস নিয়েছিলেন, এই জীবনে বহু লাশ ধুইয়েছেন তিনি। হয়েছেন বহু অভিজ্ঞতার সাক্ষী। আমাদের সারা জীবনের যা আমল, অনেক সময়েই তার উপর নির্ভর করে এই শেষ যাত্রার শুরুটা কেমন হবে। কারো কারো গোসল করাতে গিয়ে বীভৎস সব অভিজ্ঞতা হয়, কারো কারো ক্ষেত্রে খুব সহজে, সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়ে যায় সব কিছু। পরিচয় প্রকাশ না করে এই অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করেছিলেন যেন আমরা শিক্ষা নিতে পারি।
ওই ক্লাস করার পর বেশ কিছুদিন রাতে ঘুমাতে পারতাম না। দুআ করতাম একটা সুন্দর মৃত্যুর জন্য। তারপর কত সময় কেটে গেছে। শয়তান ভুলিয়ে দিয়েছে ওই তীব্র আবেগ।
আবারো হয়তো দুআর লিস্টে যোগ হয়েছে হালাল ইনকাম, পড়াশোনা, সন্তান, সবার সুস্থ থাকা-----------সবই গ্রহনযোগ্য দুআ অবশ্যই কিন্তু একটু বেশীই বুঝি দুনিয়া কেন্দ্রিক হয়ে গিয়েছিলাম?
জানি না।
গতকাল আমার নানী শাশুড়ি আমাদের রাবের কাছে ফিরে গেছেন। আমার দেখা অসাধারণ একজন মহিলা। অসামান্য সুন্দরী ঊনার চেহারা মনে করলেই আমার চোখে ভেসে উঠে একটা দৃশ্য---------আশেপাশের মহিলারা হয়তো সাংসারিক নানা আলাপচারিতায় মগ্ন, ঊনি একটু দূরে বসে তাফসীর পড়ছেন। আমাদের বিয়েতে তাফসীর ইবনে কাসীরের পুরো সেটটা গিফট দেয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন একজন আত্মীয়কে। ঊনার বক্তব্য ছিলো এইটা আমাদের সবার পড়া দরকার, এই সুযোগে কেনা হয়ে যাবে, সবাই মিলে মিশে পড়া যাবে।
শেষ যেবার দেশে যাই, ঊনার সাথে কয়েক রাত কাটানোর সৌভাগ্য হয়েছিলো। মাঝ রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখতাম বিছানা খালি, তাহাজ্জুদের জন্য উঠে গেছেন। আমি ঊনার অনেক আদর পেয়েছি, ভালবাসতে পারার অসামান্য যে ক্ষমতা আল্লাহ ঊনাকে দিয়েছিলেন, তার বদৌলতে। শেষ কদিন খুব কষ্ট পেয়েছেন-----------ক্যান্সারে ভুগছিলেন। ঊনার কষ্টের দিনগুলো আবার আমার মাঝে ওই দুআটা ফিরিয়ে এনেছে- একটা সুন্দর মৃত্যুর দুআ।
যখন আমি আমার রাবের প্রতি সন্তুষ্ট এবং আমার রাব, আম্মা, মেয়ের বাবা, আমার চারপাশের মানুষগুলো আমার উপর সন্তুষ্ট, এই অবস্থায় যেন আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে পারি। এই যে নানু চলে গেলেন, ঊনার চারপাশের মানুষগুলো শুধুই স্মরণ করছেন ঊনার ওয়াক্তের শুরুতে নামায পরার, তাহাজ্জুদ পরার, গীবত না করার, কুরআন বুঝে পড়ার, পর্দা করে চলার অভ্যাসগুলো। আল্লাহ আমাদেরও এমন মৃত্যু দেয়ার তৌফিক দিন, নানুকে জান্নাতুল ফিরদাউস দিন, আমাদের, আমাদের সন্তানদের ঊনার জন্য সাদক্বায়ে জারিয়ে হিসেবে ক্ববুল করুন।
*উত্তম মৃত্যুর জন্যে দোয়া* 🌹
‎*اللهم إني أسألك حسن الخاتمة .. *
উচ্চারণ:- আল্লহুম্মা ইন্নি আসআলুকা হুসনাল খ-তিমাহ।
অর্থ:- *হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে উত্তম মৃত্যু চাই!*
২) *মৃত্যুর আগে খাঁটি তাওবা করার জন্য দোয়া*🌹
‎اللهم أرزقني توبة
‎ نصوحة قبل الموت
উচ্চারণ:-আল্লাহুম্মারযুক্বনি তওবাতান্নাসু-হাহ, ক্ববলাল মাউত।
অর্থ:- *হে আল্লাহ! আপনি আমাকে রিযিক হিসেবে দিন মৃত্যুর পূর্বে খাটি দিলে তওবা করার।*
৩) *দীনের উপরে অটল থাকার জন্য দোয়া* 🌹
‎.. اللهم يا مقلب القلوب ثبت قلبي على دينك ..
উচ্চারণ:-আল্লাহুম্মা ইয়া! মুক্বাল্লিবাল ক্বুলুব, ছাব্বিত ক্বলবী আ'লা দ্বীনিক।
অর্থ:- *হে আল্লাহ ! হে হৃদয়ের পরিবর্তন কারী ! আপনি আমার হৃদয়-কে আপনার দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখুন!*

Saturday, September 21, 2019

রিবা নিয়ে জানা সিরিজের স্ক্রিপ্ট -১০


রিবার প্রসার রোধ করতে ইসলামের নানা নিয়ম 

আমরা আগের পর্বগুলোতে দেখেছি টাকার ডিমাণ্ডের চেয়ে সাপ্লাই বেশী হলে সুদভিত্তিক সমাজ গড়ে ওঠে। এমনটা যেন না হয় সেজন্য ইসলাম শুধু রিবাই নিষিদ্ধ করে নি, আরো নানা নিয়ম বেঁধে দিয়েছে
প্রথমত, যাকাতের বিধান দিয়েছে। এর মাধ্যমে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশী টাকা ১ বছরের বেশী সময় ধরে জমানো থাকলে সেটার নির্দিষ্ট অংশ দান করে দিতে হয়, অর্থ্যাৎ বাজারে ছেড়ে দিতে হয়। সহজভাবে বলতে গেলে, এটা টাকার সাপ্লাই বাড়িয়ে দেয় যেন ডিমান্ড ও সাপ্লাই এর মাঝে একটা ভারসাম্য থাকে  
অনেকের হয়তো মনে হতে পারে যে যাকাত নিজেই টাকার ডিমাণ্ড সৃষ্টি করতে পারে যদি  যাকাত ফরয এমন ব্যক্তিদের নিজস্ব আয় না থাকে। যেমন বাড়ির গৃহকর্ত্রী। তার হয়তো নিসাব পরিমাণ স্বর্ণালংকার আছে, কিন্তু আয় নেই এখানে আমাদের মাথায় রাখতে হবে যে যাকাত মুদ্রা দিয়েই আদায় করতে হবে ব্যাপারটা এমন না স্বর্ণালংকারের কিছু অংশ বেঁচে দিয়েও ঊনারা যাকাত আদায় করতে পারেন আবার যখন গৃহপালিত পশু বা অনুরূপের উপর যাকাত ফরয হয়, তখনো সেই সম্পদের একটা অংশ দিয়েই যাকাত দেয়া যায় অর্থ্যাৎ যাকাত মুদ্রার ডিমাণ্ডের উপর কোনো অযাচিত চাপ সৃষ্টি করে না, কিন্তু সাপ্লাই বাড়ায়
যাকাত যে নির্দিষ্ট খাতগুলোতে দিতে হয় সেগুলো নিয়ে চিন্তা করলেও আমরা দেখবো যে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা এমন ব্যক্তি যাদের ক্যাশ টাকা সবচেয়ে বেশী দরকার এবং সুদ ভিত্তিক ঋণ নেয়ার সম্ভাবনা খুবই প্রবল। তাদেরকে ক্যাশ টাকা বা আয়ের উৎস (গৃহপালিত পশু, কৃষিজাত পণ্য) দিয়ে সেই সম্ভাবনার দ্বার রুদ্ধ করা হয়।  এভাবে যাকাত অর্থনীতিতে সুদের প্রসার প্রতিরোধে অবদান রাখে
দ্বিতীয়তঃ অপ্রয়োজনে ঋণ নেয়াকে নিরুৎসাহিত করা। সমাজে রিবার বিস্তারের একটা হাতিয়ার হল সুদী ঋণের সহজলভ্যতা। এনজিও, ক্রেডিট কার্ড কোম্পানিগুলো অনেক সময়ই তথাকথিত সহজ শর্তের কথা বলে আমাদেরকে নানা বিলাসিতা, ভোগবাদিতা ইত্যাদির প্রলোভন দেখায় এবং সুদভিত্তিক লেনদেনের সাথে অভ্যস্ত করে তোলার চেষ্টা করে। আদতে এগুলো ঋণের ফাঁদ ছাড়া আর কিছুই না, এভাবে টাকার কৃত্তিম ডিমাণ্ড সৃষ্টি হয়।  
আমরা যদি ইসলামের এই ব্যাসিক নীতিমালাগুলো মেনে চলি তাহলে আমরা সমাজে সুদের বিস্তার রোধে অবদান রাখতে পারবো ইনশাল্লাহ। 



Sunday, August 18, 2019

রিবা নিয়ে জানা সিরিজের স্ক্রিপ্ট -৮



            
হাদীস থেকে পাওয়া মুদ্রানীতি 

আগের পর্বে আমরা দেখেছি যে সকল পণ্যের ( যেমন ভাত, ডাল, পোশাক-আশাক) দামই নির্ধারিত হয় তুলনামূলক ডিমাণ্ড এবং সাপ্লাই এর উপর নির্ভর করে। যদি ডিমাণ্ড সাপ্লাই এর চেয়ে বেশী হয় তাহলে দাম বেশী এবং সাপ্লাই ডিমাণ্ডের চেয়ে বেশী হলে দাম কম......এভাবে

তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে যে যেহেতু টাকার ডিম্যাণ্ডের তুলনায় সাপ্লাই কম হলেই টাকার মালিক/ নিয়ন্ত্রকরা সুদ আরোপ করার সুযোগ পায় তাহলে টাকার দামও এভাবে নির্ধারিত হলে সমস্যা কোথায়? সুদকে আমরা টাকার দাম হিসেবে চিন্তা করতেই পারি

কিন্তু না, ইসলামে মুদ্রাকে আর দশটা পণ্যের সাথে একই কাতারে ফেলা যায় না। এব্যাপারে হাদীসে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ

‘‘সোনার বিনিময়ে সোনা, রূপার বিনিময়ে রূপা, গমের বিনিময়ে গম, যবের বিনিময়ে যব, খেজুরের বিনিময়ে খেজুর, লবণের বিনিময়ে লবণ ক্রয় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে উভয় বস্ত্তকে যেমনকার তেমন, সমান সমান এবং হাতে হাতে হতে হবে। অবশ্য যখন উভয় বস্ত্তর শ্রেণী বা জাত বিভিন্ন হবে, তখন তোমরা তা যেভাবে (কমবেশী করে) ইচ্ছা বিক্রয় কর; তবে শর্ত হল, তা যেন হাতে হাতে (নগদে) হয়’’ (মুসলিম ১৫৮৭)

আপাতদৃষ্টিতে এই হাদীসটি পড়ে খটকা লাগতে পারে পারে। যদি আমি নগদে এবং সমান পরিমাণে লেনদেন করি, তাহলে সেই লেনদেনের দরকারটা কী! আর এমন অবাস্তব লেনদেন নিষিদ্ধ করারই বা কী দরকার!

কিন্তু আমরা যদি হাদীসটি গভীর মনোযোগ দিয়ে লক্ষ করি, তাহলে বুঝবো যে হাদীসে উল্লেখিত পণ্য গুলো আসলে তখন মুদ্রা হিসেবে ব্যবহৃত হত। হাদীসটি আসলে ইসলামে মুদ্রার ব্যাপারে মূলনীতি নির্ধারণ করে দিচ্ছে! 

মুদ্রা তথা বিনিময়ের মাধ্যম থেকে সুবিধা আসলে দুইভাবে নেয়া যায়ঃ

১) দেরীতে শোধ করার সুযোগ থাকলে
২) খারাপ কোয়ালিটির বেশী পরিমাণের সাথে  ভালো কোয়ালিটির কম পরিমাণ লেনদেন করার মাধ্যমে 

এই হাদীসে এই উভয় জিনিসই নিষেধ করে দিয়েছে। অর্থ্যাৎ বিনিময়ের মাধ্যম থেকে সুবিধা নেয়ার সম্ভাব্য সকল রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে 

এক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে এখানে এমন একটি অর্থনীতির কথা বলা হয়েছে যেখানে নানা ধরণের পণ্যই (যেমন খেজুর, লবণ ইত্যাদি) মুদ্রা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাহলে মুদ্রা হিসেবে প্রচলিত এমন পণ্যের বিভিন্ন কোয়ালিটির থেকে যদি কারো উপযোগ সৃষ্টি হয় (যেমন ২২ ক্যারাটের সোনা আর ১৮ ক্যারেটের সোনা) এবং কেউ যদি এর মাঝে লেনদেন করতে চায় তাহলে করণীয় কী? আলহামদুলিল্লাহ, হাদীস থেকে আমরা সেটাও জানতে পারি-

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) ও আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে খায়বারে তহসীলদার নিযুক্ত করেন। সে জানীব নামক (উত্তম) খেজুর নিয়ে উপস্থিত হলে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, খায়বারের সব খেজুর কি এ রকমের? সে বলল, না, আল্লাহর কসম, হে আল্লাহর রসূল! এরূপ নয়, বরং আমরা দু’ সা’ এর পরিবর্তে এ ধরণের এক সা’ খেজুর নিয়ে থাকি এবং তিন সা’ এর পরিবর্তে এক দু’ সা’। তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এরূপ করবে না। বরং মিশ্রিত খেজুর দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করে দিরহাম দিয়ে জানীব খেজুর ক্রয় করবে। (সহীহ বুখারী  ক্রয়-বিক্রয়  ২২০২) 

এথেকে আমরা বুঝলাম যে  একটি বস্তুকে একই সাথে পণ্য আর মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। যদি পণ্য হিসেবে ব্যবহার করতে হয় তাহলে অন্য মুদ্রার সাথে বাজারে লেনদেন করতে হবে। মানে ১৮ ক্যারাটের সোনা বাজারে বিক্রি করে যে টাকা পাওয়া যাবে, সেটা দিয়ে যতটুকু ২২ ক্যারাটের সোনা পাওয়া যায়, সেটা কিনতে হবে। 

প্রশ্ন উঠতে পারে যে মুদ্রাকে এভাবে আলাদা করার কারণ কীআসলে মুদ্রার কাজ আর সব পণ্যের থেকে আলাদা যেমনটা আমরা আগে দেখেছি। মুদ্রার মাধ্যমে কোনো পণ্যের উপযোগের পরিমাণ প্রকাশ করা হয়, মূল্য নির্ধারণ করা হয়, বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয় ইত্যাদি।

মুদ্রার এই বিশেষত্বের জন্যই মুদ্রাকে অন্য সব পণ্যের মত চিন্তা করে সুদকে মুদ্রার দাম হিসেবে চিন্তা করার কোনো সুযোগ নেই। 



রিবা নিয়ে জানা সিরিজের স্ক্রিপ্ট -৭


      মুদ্রাভিত্তিক অর্থনীতিতে মুনাফার সংজ্ঞা



আমরা এখন বাস করি মুদ্রাভিত্তিক অর্থনীতিতে যেখানে সব লেনদেন মুদ্রার বিনিময়ে হয়ে থাকে। এই অর্থনীতিতে মুনাফার সংজ্ঞা বোঝার আগে আমরা জেনে নিবো মুদ্রার ভূমিকা বা কাজ।   

মুদ্রার কাজ মূলত ৩টি-

১) পণ্য থেকে পাওয়া উপযোগের মাপকাঠি (Measure of Value) 

কোনো বস্তু থেকে আমরা যে উপযোগ/ Value পাই সেটার পরিমাণ মুদ্রার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। তাই আমরা এভাবে বলে থাকি যে এই জামাটা থেকে আমি ৫০০ টাকার সমমানের উপযোগ পাই। এক্ষেত্রে মুদ্রা শুধুই একটা তথ্য হিসেবে কাজ করে

) পণ্যের মূল্যের রেফারেন্সঃ

আমরা যদি কিছু কিনতে চাই, সেটার দাম প্রকাশিত হয় মুদ্রা দ্বারা। যেমন ল্যাপটপের দাম হতে পারে ৩০,০০০টাকা। এভাবে ২টা জিনিসের মূল্যের মাঝে আমরা তুলনাও করতে পারি । একটা ল্যাপটপ নাকি একটা স্বর্ণের চেইন……কোনটা বেশী দামী সেটা আমরা বুঝতে পারি তাদের মূল্য থেকে যা মুদ্রার এককে প্রকাশিত। 

৩) বিনিময়ের মাধ্যম (Medium of exchange)ঃ

আমরা যা কিছুই কিনতে চাই, মুদ্রার বিনিময়ে কিনতে পারি যেমনটা আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে করে থাকি।

এখানে লক্ষণীয় যে কোনো বস্তু থেকে পাওয়া উপযোগের মুদ্রা মান আর সেটার দাম কিন্তু এক নাও হতে পারে। আমি যদি কোনো জামা থেকে ৫০০ টাকার সমান উপযোগ পাই তাহলে আমি হয়তোবা ওই জামাটার জন্য ৫০০ টাকাই দিতে রাজি থাকবো। কিন্তু বাজারে হয়তো সেটার দাম ৪০০ টাকা।

বাজারে কোনো পণ্যের মূল্য তথা দামটা আসলে নির্ধারিত হয় সেটার তুলনামূলক ডিমাণ্ড ও সাপ্লাইয়ের ভিত্তিতে। 

আগের পর্বে আমরা দেখেছি একজন মাত্র কৃষক ও মাছওয়ালার উদাহরণ যারা এক প্লেট ভাত ও একটি মাছ লেনদেন করেছে। এখন এমনও তো হতে পারে যে বাজারে আরো মাছওয়ালা আছে যে এক প্লেট ভাতের বিনিময়ে দুটি বা কেউ তিনটি মাছ দিতে ইচ্ছুক... আবার চালও আরো অনেকে বিক্রি করে। 

এভাবে ডিম্যাণ্ড ও সাপ্লাইয়ের মিথস্ক্রিয়াতে যে 'দাম' নির্ধারিত হয়, তা সাধারণত ক্রেতা বা বিক্রেতা যে দামে কেনা বেচা করতে রাজি থাকে তার সমান না। ক্রেতা যত দাম দেয়, সাধারণত জিনিসটা থেকে পাওয়া উপযোগের মূল্যমান তার চেয়ে বেশী থাকে, মানে সে এর চেয়ে বেশী দামে কিনতে রাজি ছিলো। এই দুটো পরিমাণের মাঝে পার্থক্যকে আমরা বলতে পারি ক্রেতার দিক থেকে মুনাফা। প্রচলিত অর্থনীতির ভাষায় এটা Consumer Surplus নামে পরিচিত।

একই কথা বিক্রেতার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। সেও আসলে জিনিসটা বেঁচে যত টাকা পায়, তার চেয়ে কম টাকায় বিক্রি করতে রাজি ছিল, মানে জিনিসটার উপযোগের মূল্যমান তার পাওয়া টাকার চেয়ে কম। সেজন্যই সে আসলে জিনিসটা বেঁচে দিতে চাইছে। প্রচলিত অর্থনীতির ভাষায় এটা Producer Surplus নামে পরিচিত।

এজন্য আমরা খুব সহজ ভাষায় বলি যে আয় ও ব্যয়ের মধ্যে পার্থক্যকে মুনাফা বলে
 মুনাফা= বিক্রেতা বিক্রি করে যত টাকা পেয়েছে (আয়)- যত টাকায় বেঁচতে রাজি ছিল (খরচ) 

এই সংজ্ঞার নেপথ্যের ঘটনাটা আমরা এতক্ষণ ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করলাম। সেই সাথে আমরা দেখানোর চেষ্টা করলাম যে ক্রেতার দিক থেকেও মুনাফাকে ব্যাখ্যা করা যায়।

তাহলে সুদ আর মুনাফার মাঝে পার্থক্য কি আমাদের কাছে স্পষ্ট হল কিছুটা? মূল পার্থক্য যেটা আমাদের ব্রেনে গেঁথে নেয়া দরকার, সেটা হচ্ছে মুনাফাতে সরাসরি কোনো পণ্যের লেনদেনের মাধ্যমে দুই পক্ষেরই উপযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে (Increase of Value) বা নতুন উপযোগের সৃষ্টি হচ্ছে (Creation of Value) কিন্তু সুদের ক্ষেত্রে শুধু বিনিময়ের মাধ্যম লেনদেন করা হচ্ছে। যার কাছে টাকা নেই তাকে স্রেফ লেনদেনের সুযোগ করে দেয়ার বিনিময়ে অতিরিক্ত চার্জ নেয়া হচ্ছে।

এখন উপযোগ কিভাবে সৃষ্টি করা যেতে পারে? 
·      আমার দক্ষতা কাজে লাগিয়ে আমি কোনো বস্তুর রূপান্তর ঘটাতে পারি (যেমন কাপড় থেকে জামা বানাতে পারি, আটা থেকে রুটি, পিঠা)। যাদের এগুলো করার সময়/ এনার্জি/ দক্ষতা নেই তাদের কাছে বেশী দামে বিক্রি করতে পারি
·      আমরা কোনো জিনিসকে সহজলভ্য করতে পারি ধরুন সুপার স্টোর গুলোতে জিনিস পত্রের দাম বেশী হয় কারণ সেখানে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে, সাজানোভাবে অনেক কিছু এক সাথে পাওয়া যায় যেটা হয়তো এলাকার কাঁচা বাজারগুলো থেকে কেনা কষ্টকর।
·      আমরা কোনো জিনিস দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষণ করতে পারি যেন মৌসুম ছাড়াও তা পাওয়া যায়।
এরকম আরো উদাহরণ দেয়া যায় যেখানে ঝুঁকি (Risk) নিয়ে বা ওয়ারেন্টি দিয়ে (Liability) বা নতুন উপযোগ সৃষ্টি করে মুনাফা অর্জন করা যায়।

তাহলে সুদ এবং মুনাফার মাঝে মূল পার্থক্যগুলো আসুন এক নজরে আবারো একটু দেখে নেই





রিবা নিয়ে জানা সিরিজের স্ক্রিপ্ট -১১

রিবার নানা রূপ আজকের পর্বে আমরা রিবার নানা রূপের সাথে পরিচিত হব যেন দৈনন্দিন জীবনে আমরা সেগুলো থেকে বেঁচে থাকতে পারি-   টাকা ধার নেয়ার...