Monday, July 29, 2019

তাক্বদীরে বিশ্বাসের স্বরূপঃ এটা কি কোনো গোলকধাঁধা?


তাক্বদীরে বিশ্বাসের স্বরূপঃ এটা কি কোনো গোলকধাঁধা?
ঘটনা ১:
আন্টিঃ আল্লাহই তো আমার ভাগ্যে এখানে বিয়েটা রেখেছিলেন তাই না? তোর আঙ্কেলের সাথে বিয়ে হল বলেই তো আমার দ্বীন পালনে এত কষ্ট হয়!
নিতুঃ কিন্তু আন্টি আপনিও তো বিয়ের সময় দ্বীন পালন করে নাকি এটাকে কোনো গুরুত্ব দেন নি। দিয়েছিলেন?
আন্টিঃ  কোথায় আমার বিয়ে হবে না হবে সেটা তো আল্লাহই লিখে রেখেছেন। আমি দেখলেই বা কি করতাম, বিয়েটাতো আর ঠেকাতে পারতাম না, তাই না?
ঘটনা ২:
নিতুঃ আপা, তুই যে এখনো নামায শুরু করছিস না, একবার ভেবে দেখেছিস যে এখন হুট করে যদি মরে যাই আমরা তাইলে কি অবস্থা হবে? কিসের জন্য অপেক্ষা করছি আমরা?
আপাঃ আল্লাহ যখন হিদায়াত দিবেন তখনই শুরু করব। আল্লাহ তো কুরআনে বলেই দিয়েছেন যে আমি যাকে ইচ্ছা তাকে হিদায়াত দেই...
ঘটনা ৩ :
প্রভাঃ অ্যাপোলোতে যদি সাথে সাথে নিয়ে যাইতি, তাহলে এমনটা হইত না......এবারের মত আঙ্কেলের জানটা বেঁচে যাইতো......

উপরের ঘটনাগুলি সবই কাল্পনিক। কিন্তু এগুলো খুব ‘কমন’ ঘটনা যা আমরা আশে পাশে হরহামেশাই শুনি। তাক্বদীরে বিশ্বাস আমাদের ঈমানের ছয়টা পিলারের একটা। আর ঈমানের যে স্তম্ভটা মানুষের কাছে সবচেয়ে ঘোলাটে লাগে সেটা সম্ভবত তাক্বদীরে বিশ্বাস। আল্লাহ সবকিছু লিখে রেখেছেন, আবার আমি আমার কাজের জন্য জবাবদিহি করব, এটা আপাত দৃষ্টিতে কেমন যেন সাংঘর্ষিক লাগতে থাকে অনেকের কাছেই।
আমি প্রায়ই মানুষকে বলি যে আমরা যারা মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেছি তাদের আসলে ঈমানের স্তম্ভগুলো নিয়ে স্বচ্ছ ধারণা অর্জন করা দরকার সবার আগে। কারণ ঈমান যদি ঠিক না থাকে তাহলে আমল করে কোনো লাভ নেই।  আর  ইসলামের মূল বিষয়গুলো কোনোটাই আসলেই রকেট সাইন্স না।খালি একটু আন্তরিকতা নিয়ে শয়তানের ওয়াস ওয়াসা থেকে আশ্রয় চেয়ে দুআ করে পড়লেই ব্যাপারটা ক্রিস্টাল ক্লিয়ার হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।
তাক্বদীরে বিশ্বাসের মূলত চারটা অংশ রয়েছে---

এখন আমরা এই অংশগুলো একটু ব্যাখ্যা করব...
ব্যাপারটা বোঝার জন্য আমরা আবারো একটা কাল্পনিক ঘটনার অবতারণা করব।
শিল্পী একটা কলেজে পড়ায়। ওর ক্লাশে মাত্র ১০জন ছাত্রী। সবাইকে ও একদম হাড়ে হাড়ে চেনে। ওর একজন ছাত্রী হল নীরা। মেয়েটা চরম ফাঁকিবাজ। ওকে একদিন ডেকে নিয়ে শিল্পী সাবধান করে বলল যে ও যদি এভাবেই গাছাড়া থাকে, তবে ও লিখে দিতে পারে যে টেস্টে নীরা ফেল করবে।
শিল্পীর অনুমান ভুল হয় নি। টেস্টে আসলেই উতরাতে পারল না নীরা.........
এখন পাঠক আপনারা বলেন যে নীরা যদি এসে বলে যে শিল্পী ওকে বাধ্য করেছে ফেল করতে তবে কি এটা ঠিক? কী শিল্পীকে এমন সঠিক অনুমান করতে সাহায্য করল? টিচার হিসেবে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান, তাই না? কিন্তু এটাতো ভুল হতেই পারত......তাই না? কারণ শিল্পী একজন মানুষ এবং তার জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
এবার এই বিষয়টা দিয়ে আমরা তাক্বদীরের ব্যাপারটা বুঝতে চেষ্টা করব। আমরা কে কী করব না করব......এগুলা সবই আসলে আল্লাহ জানেন কারণ তাঁর জ্ঞান অসীম এবং পারফেক্ট। এই জ্ঞান শুধু যা হচ্ছে তার ব্যাপারে না, যা হতে পারত, তার মাঝেও পড়ে। যেমন আল্লাহ কুরআনে বলছেন যে যারা সীমালঙ্গনকারী, তারা পরকালে আল্লাহকে দেখার পর আর একবার দুনিয়াতে ফিরে আসার সুযোগ চাইবে। তার উত্তরে আল্লাহ বলছেন যে ওদেরকে আবার সুযোগ দেয়া হলেও ওরা প্রথমবারের মতই আচরণ করবে। এই যে কী হলে কী হবে, এটাও আল্লাহ জানেন।কিন্তু এই জানার অর্থ কখনোই না যে তিনি আমাদের কোনো কাজ করতে বাধ্য করেন!
আর কী হবে না হবে এটা সবই আল্লাহ লিখে রেখেছেন। এমন না যে আল্লাহ ভুলে যাবেন বলে লিখে রেখেছেন...কিন্তু আল্লাহ ইচ্ছা করেছেন, তাই লিখে রেখেছেন।
এখন এই লেখাটার আবার কয়েকটা স্তর আছে।
১মঃ লাওহে মাহফুযের লেখা
২য়ঃ মায়ের পেটে থাকতে লেখা
৩য়ঃ লাইলাতুল ক্বদরের সময়ের লেখা
এখন এর মাঝে লাওহে মাহফূযের লেখাটা অপরিবর্তনীয়। এখানে একদম বিস্তারিত লেখা আছে।
এখন প্রশ্ন হতে পারে যে তাহলে দুআতে কি ভাগ্য পরিবর্তন হয়? হয়, তবে ৩য়টা। বাৎসরিক ভাবে যে লেখাটা হয়, সেখানে পরিবর্তন আসতে পারে।
ব্যাপারটা একটা MCQ প্রশ্নের মত। হয়ত আল্লাহ ঠিক করে রেখেছেন-
আয়ূ-
ক)কিছুই না করলে ৪৫ বছর
খ)  ৫০ বছর যদি ওষুধ খায়
গ)  ৫৫ বছর ওষুধ + দুআ
এখন আপনি কী করবেন তার উপর নির্ভর করছে ক, খ নাকি গ। মানে ভাগ্য পরিবর্তন হয়, শুধু একটা অপশন না। এখন কী কী অপশন দিবেন এটা আল্লাহ ঠিক করে রেখেছেন। এখানে আপনার আমার কোনো হাত নাই। তাই যেহেতু অপশনের মাঝে নাই, তাই কখনোই এটা ৬০ বছর হবে না। আবার বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করাটা অপশনে আল্লাহ রাখেন নাই। তাই করলেও লাভ হবে না। ব্যাপারটা একটা ডায়াগ্রামের মাধ্যমে আমরা দেখতে পারি-


আবার ব্যাপারটা এমন হতে পারে যে পরিণতি একই হবে কিন্তু সেটাতে পৌঁছাতে আপনি কোন পথ বেছে নিবেন এটা আপনার ইচ্ছা। একটা উদাহরণ দেই-
একবার এক ব্যক্তি  (ক) আরেক লোককে (খ) বলল যে ঊনার ঘোড়াটা যেন একটু দেখে রাখে, সে একটু এক বাসা থেকে আসতেসে। ক লোকটা মনে মনে ভাবল যে ফিরে এসে খ কে ১০০ টাকা দিবে পারিশ্রমিক। কিছুক্ষণ পর এসে দেখে খ লোকটা ঘোড়ার লাগামটা নিয়ে হাওয়া হয়ে গেছে এবং সে বাজারে ১০০টাকা দিয়ে ওটা বেঁচে দিল।
এখানে দেখেন যে আল্লাহ ঊনার ভাগ্যে ১০০ টাকা লিখে রেখেছিলেন। কিন্তু খ কোন পথে সেটা পাবে সেটা ওর সিদ্ধান্ত। তাই মানুষ হারাম উপায়ে যেটা অর্জন করে আল্লাহ আসলে অন্যভাবে তার জন্য ওই পরিমাণই লিখে রেখেছিলেন। এমন না যে হারাম পথে সে তার রিযিক্ব বাড়ায়।
এখন লাওহে মাহফূযের লেখাটা বদলায়না কেন? কারণ আল্লাহ আবার জানেন যে আপনি কোনটা করবেন। ক, খ নাকি গ। আর যেটা করবেন, সেই ফাইনালটা লেখা আছে লাওহে মাহফূযে।
তাহলে আমরা বুঝলাম যে মানুষ তার নিজের কর্মের জন্য দায়ী। প্রথম ঘটনাতে আন্টি যদি দ্বীনের কথা বিয়ের সময় চিন্তা করতেন, হয়ত তাহলে আল্লাহ তার স্বামীর মাঝে পরিবর্তন আনতেন...
 কিন্তু সে কি সিদ্ধান্ত নিবে এটাও আল্লাহর ইচ্ছাধীন। কোনো সৃষ্টির পক্ষে আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে যাওয়া সম্ভব নয়।
এটা হচ্ছে তাক্বদীরে বিশ্বাসের ৩য় অংশ-আল্লাহর ইচ্ছা। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে যে আল্লাহ কি তাহলে ইচ্ছা করেন যে মানুষ খারাপ কাজ করুক?
উত্তর হচ্ছে আল্লাহর ইচ্ছা দুই ধরণের।
ক) সৃষ্টিগত ইচ্ছা
খ) শরঈ ইচ্ছা
সৃষ্টিগত ইচ্ছা হচ্ছে এই মহাবিশ্বে যা কিছু ঘটছে কোনো কিছুই তার ইচ্ছার বাইরে ঘটছে না। এটা তাঁর ক্ষমতার সাথে সংশ্লিষ্ট। কোনো কিছু তাঁর ইচ্ছার বাইরে ঘটতে পারে না, অস্তিত্বই লাভ করতে পারে না। কিন্তু তার অর্থ এটা না যে যা ঘটছে তার সব কিছু তিনি পছন্দ করেন।
যা ঘটা তিনি পছন্দ করেন বা চান যে ঘটুক, সেটাকে বলে  শরঈ ইচ্ছা। যেমন তিনি চান যে সব মানুষ ইসলাম পালন করুক। কিন্তু তিনি যা পছন্দ করেন তা সবসময় ঘটে না, যদি তার সৃষ্টিগত ইচ্ছার সাথে এটা সাংঘর্ষিক হয়। আমরা যখন বলি যে আল্লাহ না চাইলে তো গাছের পাতাও নড়ে না...তখন আমরা আল্লাহর সৃষ্টিগত ইচ্ছার কথা বলি।
তাই যখন কেউ বলে যে আল্লাহ চাচ্ছেন না তাই আমি হিদায়াত পাচ্ছি না......সে এখানে আল্লাহর সৃষ্টিগত ইচ্ছার কথা রেফার করছে। কিন্তু আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে আল্লাহর এই সৃষ্টিগত ইচ্ছা আল্লাহর ন্যয়বিচারের সাথে সংশ্লিষ্ট। আল্লাহ যাকে হিদায়াত দেন না, সে হিদায়াত পাওয়ার মত কাজ করে না বা শর্ত পূরণ করে না বলেই দেন না......
আবার যদি আগের পর্বের ডায়াগ্রামটার কথা চিন্তা করি এবং ২য় ঘটনাটার কথা ভাবি----তাহলে বুঝব হয়ত নিতুর বোনের ভাগ্যে এভাবে লেখা আছে-


 এজন্যই আল্লাহ কুরআনে বিভিন্ন জায়গায় এমন কথা বলেছেন যার ভাবার্থ দাঁড়ায়- Allah guides whom, who craves to be guided or deserves to be guided.
এখন এই যে মানুষ চেষ্টা করবে, তারপর ভালো কাজ করবে......তার এই চেষ্টা, ইচ্ছা করার ক্ষমতা, কাজ সবই আবার আল্লাহর সৃষ্টি। শুধু মানুষই আল্লাহর সৃষ্টি না, মানুষের কাজও আল্লাহর সৃষ্টি। মানুষ চাইলেও কোনো কাজ করতে পারে না, তার জন্য যে ক্ষমতা দরকার সেটাও আল্লাহর কাছ থেকে আসতে হয়। নিচে ব্যাপারটা বুঝানোর চেষ্টা করা হল-

অর্থ্যাৎ মানুষকে সীমিত আকারে স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে, একটা নিয়ন্ত্রণ রেখার বলয়ের মধ্যে। এই সীমিত স্বাধীনতা বা সিদ্ধান্তের জন্যই সে জিজ্ঞাসিত হবে, যা তার সাধ্যের বাইরে সেটার জন্য তাকে জবাবদিহিও করতে হবে না
এখন প্রশ্ন হতে পারে যে মানুষ যা খারাপ কাজ করে, বা মানুষের জন্য খারাপ কিছু আল্লাহ সৃষ্টি করলেন কেন বা সৃষ্টিগত ইচ্ছার মাঝে মানুষের জন্য খারাপ এমন কিছু পড়ে কেন।
উত্তর হচ্ছে absolute evil বলে কিছু নেই। ডাক্তার যখন হাত কাটে চিকিৎসার জন্য, আমাদের ব্যাথা লাগে, সেটা কষ্টকর ব্যাপার। কিন্তু আসলে এটা ভালো।
আমাদের জীবনে এমন বহু ঘটনা আছে যেগুলো প্রথমে আমাদের কাছে খারাপ লেগেছে, পরে বুঝেছি যে সেটাই আমাদের জন্য সবচেয়ে ভালো ছিল। তাইতো আমরা বলে থাকি যে আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন, যদিও বা কী ভালো, সেটা আমরা আমাদের সীমিত বুদ্ধি দিয়ে টের নাও পাই.........
এখন তাক্বদীরে বিশ্বাসের ব্যাপারে একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে যে যা হয়ে গেছে, তা আমরা কোনোভাবেই বদলাতে পারব না।তাই এটা নিয়ে কথা বলা ইসলামে খুবই অপছন্দনীয়। যেমন ধরেন ৩য় ঘটনাটা- প্রভা যে বলছিল যে ওর আঙ্কেলকে অন্য হসপিটালে নিলে বেঁচে যেত, এটা বিশ্বাস করাটা ভুল। তাই আমরা বলতে পারি যে অতীতের ব্যাপারে আমরা বিশ্বাস করি যা ঘটেছে তা অলঙ্ঘনীয় ছিল, সেখান থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি, কিন্তু তা বদলাতে পারি না, কিন্তু ভবিষ্যতের ব্যাপারে এখনো আমাদের অপশন ক, খ, গ ইত্যাদির মাঝে বেছে নেয়ার সুযোগ আছে মনে করে চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকি......
শেষ কথাঃ
তাক্বদীরে বিশ্বাসের নানা দিকের মূল নির্যাস আসলে আল্লাহ কে, কেমন এই ব্যাপারটা সম্পর্কে সম্যক উপলব্ধি। আল্লাহকে না চেনার কারণেই আসলে যত সংশয়ের জন্ম হয়। আমি এখানে চেষ্টা করেছি হাদীস কুরআনের রেফারেন্স না দিয়ে ব্যাপারটা সহজভাবে বুঝাতে। কিন্তু এটা এমন একটা বিষয় যে বারবার পড়তে হয়। যত বেশী উদাহরণ, তত বেশী ক্লিয়ার হয়। কিন্তু তাতে আরো বড় হয়ে যাবে বলে আর লিখলাম না।
বিষয়টি নিয়ে শুনতে চাইলে বাংলায় কটা লেকচার আছে, ওটা শুনতে পারেন।




রিবা নিয়ে জানা সিরিজের স্ক্রিপ্ট -৫



অর্থনৈতিক দিক থেকে রিবার সংজ্ঞা


আগের পর্বগুলোতে আমরা রিবা নিয়ে আমাদের সমাজে প্রচলিত কিছু ভুল ধারণা নিরসনের চেষ্টা করেছি। আজকের পর্বে আমরা রিবা কী এটা খুব সহজ ভাষায় বোঝার চেষ্টা করবো ইনশাল্লাহ। রিবা কী এটাই যদি আমরা বুঝতে না পারি তাহলে আমরা কিভাবে এটা থেকে দূরে থাকবো?
তবে তার আগে আমাদের মাথায় গাঁথতে হবে যে আল্লাহ সুবহানুহু ওয়া তা’লা রিবা নিষিদ্ধ করেছেন মূলত আমাদের অর্থনৈতিক জীবনটাকে সহজ করার জন্য। তাই আজকে আমরা রিবার সংজ্ঞা বোঝার চেষ্টা করবো একদমই অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে। আমরা বোঝার চেষ্টা করবো যে কখন একটা সমাজে রিবা প্রসারতা লাভ করে।
দৃশ্যপট ১ঃ 
মনে করুন যে আপনি খুব বিপদে পড়েছেন, আপনার বেশ কিছু টাকার খুব দরকার। এখন আপনার আশেপাশে একজন ব্যক্তিই আছে যে টাকা ধার দিবে, শর্ত হচ্ছে সুদ দিতে হবে ১০% হারে তখন আপনি কী করবেন? আপনার আর কোনো উপায় নেই, আপনি যে ব্যক্তি ১০% হারে সুদে ঋণ দিচ্ছে, তার কাছেই যাবেন 
দৃশ্যপট ২ঃ 
এখন আরো একটি দৃশ্য কল্পনা করুন আপনার পরিচিত ২ জন ব্যক্তি আছে ধার দেয়ার মত একজন ৮% হারে দিচ্ছে, আর একজন ১০% আপনি নিঃসন্দেহে যে ৮% হারে দিচ্ছে, তার কাছে যাবেন টাকা এখন আগের বারের চেয়ে একটু কম দুষ্প্রাপ্য 
দৃশ্যপট ৩ঃ  
এবার ভাবুন এমন একটা পরিস্থিতি যেখানে প্রচুর মানুষ আপনাকে বিনা সুদে ধার দিতে রাজি আছে আর কিছু মানুষ আছে যারা ২-৩% সুদ ছাড়া আপনাকে ধার দিবে না তখন কি আপনি রাজি হবেন সুদ দিতে যেখানে সুদ ছাড়াই আপনি টাকা ধার পাচ্ছেন? নিশ্চয়ই না
তাহলে আমরা কি বুঝলাম?
·       একটা এলাকায় বা সমাজে টাকা যত দুষ্প্রাপ্য হয়, সুদের হার তত বাড়তে থাকে  
দৃশ্যপট ৪ঃ 
আসুন এবার একটু অন্যরকম একটা পরিস্থিতি চিন্তা করি একটা সমাজে, টাকার কোনো অভাব নেই, কিন্তু টাকা ইস্যু করার ক্ষমতা  বা সমস্ত টাকার নিয়ন্ত্রণ শুধু একটা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মাঝেই সীমাবদ্ধ  সেক্ষেত্রে তারা যদি সিদ্ধান্ত নেয় যে সুদ ছাড়া কাউকে টাকা ধার দেয়া হবে না, তাহলে টাকা দুষ্প্রাপ্যই রয়ে যাচ্ছে, টাকার পরিমাণ অঢেল থাকা সত্ত্বেও
এখান থেকে আমরা শিখলাম যে
·      টাকার পরিমাণ অঢেল এমনকি প্রয়োজনের অতিরিক্ত থাকা সত্ত্বেও যদি সব টাকার নিয়ন্ত্রণ কোনো গ্রুপ বা সিণ্ডিকেটের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকে, তাহলেও সেই সমাজে সুদ ছাড়া টাকা পাওয়া অসম্ভব হয়ে যেতে পারে
তাহলে আমরা বুঝলাম যে মূলত টাকার দুষ্প্রাপ্যতাই সুদভিত্তিক লেনদেনকে সম্ভব করে তোলে।এক কথায় যখন টাকার চাহিদা/ ডিমাণ্ডের তুলনায় যোগান/ সাপ্লাই কম হয়, তখনই সুদের হার বেড়ে যায়। 
যদি সিস্টেমটা এমন হয় যে সেখানে টাকা ছাড়া কোনো লেনদেন করা সম্ভব না, তবে পরিস্থিতি আরো কঠিন হয় পড়ে কারণ তাতে টাকার ডিমাণ্ড আরো বেড়ে যায় যাদের কাছে অতিরিক্ত টাকা আছে কিংবা  টাকা সাপ্লাই এর ক্ষমতা যাদের হাতে, তারা এটার সুযোগ নিয়ে সুদের হার বাড়িয়ে দিতে পারে কিন্তু যদি এমন হয় যে কিছুটা হলেও বিনিময় অর্থনীতি বিদ্যমান, মানে মানুষ তার কাছে থাকা টাকা ছাড়া অন্যান্য সম্পদ যেমন চাল, ডাল এগুলো দিয়ে লেনদেন করতে পারে, তাহলে টাকার ডিমাণ্ড কমে যায়। সুবিধাবাদী গোষ্ঠী যাদের কাছে টাকা নেই তাদের অবস্থার সুযোগ অতটা নিতে পারে না 
এখানে একটা বিষয় লক্ষণীয় যে। তারা স্রেফ টাকার সাপ্লাই এর চেয়ে ডিমাণ্ড বেশী-এই অবস্থার, কিংবা টাকার নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে, এটার সুযোগ নেয় 
আশা করি এতক্ষণের  আলোচনায় আমরা বুঝলাম যে কখন একটা সমাজে সুদ বিরাজ করে কিন্তু এটা থেকে কি আমরা বুঝলাম যে সুদ কী?
সুদ হচ্ছে সেই অতিরিক্ত চার্জ যা বিনিময়ের মাধ্যম তথা টাকা ধার দেয়ার সময় অতিরিক্ত টাকার মালিক/ টাকার নিয়ন্ত্রকরা আদায় করে থাকে 
সহজ ভাষায় একে আমরা একটা সেতুর টোলের সাথে তুলনা করতে পারি টোল না দেয়া পর্যন্ত যেমন ব্রিজ পার হওয়া যায় না, সুদ না দেয়া পর্যন্ত টাকার মালিক/ নিয়ন্ত্রকরা বাজারে টাকা ছাড়ে না


Wednesday, July 24, 2019

রিবা নিয়ে জানা সিরিজের স্ক্রিপ্ট -৪

                                           রিবা নিয়ে অন্য ভুল ধারণাগুলো

আগের দুটো পর্বে আমরা মূলত ১ম ভ্রান্ত ধারণাটা নিয়ে কথা বলেছি যে ব্যাংকের সুদ নিষিদ্ধ রিবার অন্তর্ভুক্ত নয় এবং আমরা দেখেছি যে কুরআনের এত কঠোর অবস্থান থাকা সত্ত্বেও মুসলিম দেশগুলোতে কিভাবে রিবা মহামারীর মত ছড়িয়ে গেল। আজকের পর্বে আমরা সংক্ষেপে বাকি ভুল ধারণাগুলো নিয়ে কথা বলবো ইনশাল্লাহ।

              ভুল ধারণা :২

                           মুদ্রাস্ফীতির (Inflation) কারণে সুদ দেয়া বৈধ

আমরা আজকাল প্রায়ই অভিযোগ করে থাকি যে জিনিস পত্রের দাম বাড়ছে তো বাড়ছেই, এর সাথে আমরা তাল মিলাতে পারছি না, হাঁপিয়ে উঠছি। কিন্তু কেন এমনটা হচ্ছে তা কি আমরা বুঝি?
অনেকগুলো কারণের মাঝে একটা কারণ হচ্ছে টাকার মান কমে যাওয়া। এক বছর আগে ১০০টাকায় আমরা যতটুকু জিনিস কিনতে পারতাম, এখন সেই পরিমাণ জিনিস কিনতে আমাদের হয়তো খরচ হবে ১১৫ টাকা। অর্থাৎ একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিয়ে আগে যা কেনা যেত, এখন তার চেয়ে কম জিনিস কেনা যায়, তাই আমাদের মনে হয় যে জিনিস পত্রের দাম বাড়ছে।

এজন্যই আজকে যদি আমি কাউকে ১০০০ টাকা ধার দেই, এক বছর পর যদি সে আমাকে ১০০০টাকাই ফেরৎ দেয়, তাহলে আদতে যেন সে আমাকে ৯৫০টাকা ফেরত দিলো। কারণ এক বছর পর ১০০০টাকা দিয়ে যা কেনা যাবে, এক বছর আগে সেই জিনিস কেনা যেত ৯৫০টাকা দিয়ে। আমি যদি ঋণদাতাকে ১০০০টাকাই ফেরৎ দিতে চাই, আমার দেয়া উচিৎ ১০০০টাকার বেশী যাতে সে আগের ১০০০টাকার সমমূল্যের জিনিস কিনতে পারে। কিন্তু আমি যদি সেটা করি তাহলে ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে সেটা নিশ্চিতভাবেই সুদ বা রিবা হিসেবে বিবেচিত হবে।

তাই অনেকে বলে থাকেন যে এই ক্ষেত্রে সুদ দেয়া বৈধ কারণ আমি ঋণদাতাকে বেশী কিছু দিচ্ছি না, বরং তার ক্রয় ক্ষমতা যেন ঠিক থাকে সেজন্য আদতে সেই পরিমাণ টাকাই দিচ্ছি যা সে আমাকে দিয়েছিল।

আপাত দৃষ্টিতে যুক্তিটা বেশ সন্তোষজনক মনে হলেও এর মাঝে বিশাল এক চোরাবালি লুকিয়ে আছে যা চোখে পড়বে শুধু তখনই যখন আমাদের বর্তমান অর্থ ব্যবস্থা নিয়ে বিস্তারিত ধারণা থাকবে। এটা নিয়ে খুঁটিনাটি পড়াশোনা করলে আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে এইভাবে টাকার মান যে কমে যাচ্ছে, সেটা হচ্ছেই সুদ ভিত্তিক সিস্টেমের জন্য। তাই আমরা যদি মুদ্রাস্ফীতির (Inflation) এর সুদের সাথে আপোষ করা শুরু করি, তাহলে কোনোদিনও এই চোরাবালি থেকে বের হতে পারবো না। বরং আমরা যদি সবাই সুদ বর্জন করা শুরু করি, তাহলেই এই মুদ্রাস্ফীতি (Inflation) সমস্যা অনেকটাই কমে আসবে। সামনের পর্বগুলোতে যখন আমরা বর্তমান অর্থ ব্যবস্থা নিয়ে বিস্তারিত কথা বলবো, তখন এই বিষয়ে সকল দ্বিধা দ্বন্দ্ব দূর হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।

                                           ভুল ধারণা :৩
                            
রিবার নিষেধাজ্ঞা বাণিজ্যিক ঋণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়

এটা একেবারেই ভুল একটা কথা। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে মানুষের জীবনযাত্রা আজকের মত এত বস্তুবাদী ছিলো না যে বাড়ি, গাড়ি, বিলাস দ্রব্য কেনার জন্য মানুষ সুদ ভিত্তিক ঋণ নিবে। তখন মানুষ ঋণ নিতোই ব্যবসায়িক উদ্দেশে, আর সেটাই ইসলাম এসে নিষিদ্ধ করেছে।  
      ভুল ধারণা :৪

একান্ত নিরুপায় হলে রিবার সাথে যুক্ত হতে সমস্যা নেই।

এটা সত্যি যে একান্ত নিরুপায় হলে যে কোনো হারাম কাজই ইসলামে সাময়িক বৈধতা পায়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে নিরুপায় মানে আসলে কী। এই নিরুপায়তার সংজ্ঞাটা কী আমরা আমাদের খেয়াল খুশিমত বানাতে পারি? নিরুপায়তা বলতে এখানে জীবন বাঁচানোর মত পরিস্থিতির কথা বলা হয়েছে যখন মদ্যপান বা শুকরের মাংস খেয়ে হলেও জান বাঁচাতে হবে। আমরা যখন বাড়ি করার জন্য, গাড়ি কেনার জন্য, বিদেশে ঘুরতে যাওয়ার জন্য বা বিলাসজাত দ্রব্য কেনার জন্য সুদভিত্তিক লেনদেনের সাথে যুক্ত হয়ে পড়ি, তখন কি সেটাকে নিরুপায়তা বলা যায়? এভাবে কাকে ঠকাই আমরা? আমাদের রাবকে যিনি কী না আমাদের অন্তরের অবস্থা আমাদের চেয়েও ভালো জানেন?

         ভুল ধারণা :৫

তৎকালীন সময়ে রিবা ছিলো তীব্র শোষণের হাতিয়ার। একারণেই রিবা নিষেধ করা হয়েছিলো। কিন্তু এখন শক্তিশালী পক্ষও (যেমন সরকার) দুর্বলের (জনগণ) কাছ থেকে ঋণ নেয়। প্রেক্ষিত বদলে যাওয়াতে রিবার নিষেধাজ্ঞা আজকের সময়ে প্রযোজ্য নয়।

আসলে এই ধারণাটা তখনই জন্মায় যখন আমাদের বর্তমান অর্থব্যবস্থা সম্পর্কে জ্ঞান খুবই অপ্রতুল হয়। আগেকার সময়ে মহাজনেরা যখন চক্রবৃদ্ধি আকারে সুদ নিত সেটা ঋণগ্রহীতা ও তার পরিবারের জীবনটা ছিন্নভিন্ন করে দিতো। তখন সেটার প্রভাব শুধু ওই একটা পরিবারের উপরেই পড়তো।  কিন্তু বর্তমান অর্থনীতি সুদভিত্তিক হওয়ার কারণে আমাদের সবার জীবনে নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে, সেটা আমি প্রত্যক্ষভাবে রিবার সাথে জড়িত থাকি আর না থাকি। এক কথায় রিবা এখন আরো বড় শোষণের হাতিয়ার, যদিও সেটা আমরা সরাসরি টের পাই না। আসলে  সরকার আমাদের কাছ থেকে রিবা ভিত্তিক ঋণ নেয় বলেই বরং আমরা আজকে তাদের হাতে জিম্মি।   সামনের পর্বগুলোতে এটা আমরা আরো ভালোভাবে বুঝবো ইনশাল্লাহ।

কয়েক স্তরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা


জানেন আপু আমার না মেডিসিন নিয়ে পড়তে ইংল্যাণ্ডে যাওয়ার কথা ছিল, সেই আমি ended up going to Bangkok for treatment, সেখানে থাকতে হল প্রায় ৭-৮ মাস......খুব বিতিকিচ্ছিরি অসুখ, গলায় সিস্ট হইসিলো, কথা বলতে পারি নাই ৩ মাস! ডাক্তাররা একবার সাস্পেক্ট করছিলো যে ক্যান্সার হয়ে গেছে মনে হয়। আলহামদুলিল্লাহ যে হয় নাই। এরপর থেকেই আমি সিদ্ধান্ত নেই প্র্যাক্টিসিং মুসলিম হবার ব্যাপারে!

হুম। তাহলে তো বলা যায় তুমি বোনাস লাইফের উপর চলছো। এতদিনে তোমার আখিরাত মানে কবরের জীবন শুরু হয়ে যেতে পারতো, কী বলো?

তাতো বটেই আপু! কিন্তু ভার্সিটি গেলেই আমার এইসব সচেতনতা সব উধাও হয়ে যায়। ইসলাম প্র্যাকটিস করা মানেই প্রচণ্ড একা হয়ে যাওয়া আপু, সেটা আমি খুব ভয় পাই.........পরিত্যক্ত হবার ভয়!

এটা কিন্তু স্বাভাবিক জানো?

স্বাভাবিক?

হুম। আমাদের একটা মেজর সমস্যা হচ্ছে যে আমরা যে একজন ভয়ংকর শত্রু পরিবেষ্টিত হয়ে থাকি, সেটা আমাদের মনে থাকে না......

শত্রু? ফিক করে হেসে ফেলল রাত্রি

সত্যিরে আপু! সেই শত্রুর নাম শয়তান। আল্লাহ কুরআনে বারবার ওকে প্রকাশ্য শত্রু বলছেন। এই জীবনটা হচ্ছে শয়তানের সাথে একটা constant battle. এইভাবে যদি দেখা যায় সব কিছু, তাহলে অনেকটাই সহজ হয়। আজ যদি তুমি ভাবো যে তুমি শত্রু পরিবেষ্টিত হয়ে আছেো, তাহলে তোমার অ্যাটিটিউড কী নরমাল থাকবে?

এইটা কিন্তু আপু ভালো কথা বলসো। এমনে ভাবি নাই। এভাবে দেখলে বুস্ট আপ থাকা যায় সবসময়।

এক্স্যাটলি। আমাদের ইসলামী পড়াশোনায় এটা একটা মিসিং লিংক মনে হয় আমার কাছে। প্রতিটা সময় যখন আমাদের দুনিয়ার প্রতি মোহ জন্মায় আমরা যদি সেটাকে শয়তানের ফাঁদ হিসেবে দেখতে পারি, তাহলে সহজে প্রতারিত হই না......

হুম......খুশী মনে মাথা নাড়লো রাত্রি......এখন থেকে নিজেকে কয়েক স্তর বিশিষ্ট প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে মুড়ে রাখতে হবে দুআ, যিকির আর righteous company দিয়ে ইনশাল্লাহ।

নিষিদ্ধ প্রশ্ন


শীলা: আপু, তোমাকে একটা কথা জিগ্যেস করি?

নীরা: অবশ্যই! এত ভূমিকা করছিস কেনো হঠাৎ?

শীলা: আগে বলো রাগ করবা না! ইয়ে মানে প্রশ্নটা একটু ভয়ংকর টাইপ। ছোটবেলায় আম্মুকে বলছিলাম, আম্মু ঠাস করে চড় লাগায় দিসিল আর তওবা করতে বলছিল!কিন্তু আমার মাথা থেকে না প্রশ্নটা যায় নাই!

কথাটার মাঝে এমন একটা সরলতা ছিল যে শুনে ফিক করে হেসে দিল নীরা।

নীরা: আচ্ছা বাবা শুনে চড় লাগাব না, রাগও করব না।

কথাটা শুনে একটু আশ্বস্ত হয়ে শীলা বলল ইয়ে মানে আপু তুমি বলার পর থেকে আমি আবার কুরআন অর্থসহ পড়া শুরু করছি। কিন্তু যখনই জাহান্নামের বর্ণনা পড়ি, আমার কাছে শাস্তিগুলা না কেমন যেন অবাস্তব লাগে, ঠিক বিশ্বাস হতে চায় না! এমন কি আসলেই হবে আপু? 

কথাটা শুনে একটু থম ধরে থাকল নীরা। IOU তে ভর্তি হবার আগে ঠিক এইরকমভাবেই বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলাচলে যে ও নিজেও ভুগতো, তা আর বছর আটেকের ছোট এই কাজিনটাকে খুলে বলল না ও। IOU তে Dawah কোর্সে পড়া টিপসটাই ব্যবহার করল.........

নীরা: এই যে এখানে পানির বোতলটা দেখতেসিস, এখান থেকে এক ফোঁটা পানি দিয়ে যদি আমি আস্ত একটা মানুষ বানায় ফেলি তাইলে কেমন হবে ব্যাপারটা?কিংবা যদি এখন এই ছাঁদ দিয়ে অঝোরে পানি পড়তে থাকে?

শীলা: এক ফোঁটা পানি থেকে মানুষ হবে কেমনে? আর মাত্র নতুন বানানো এই বাড়িটার ছাদে তো কোনো ফাটল নাই, সেখান থেকে পানিই বা পড়বে কেমনে আপু? কীসব অবিশ্বাস্য কথাই যে বলো!

নীরা: আপুরে, অথচ চিন্তা করে দ্যাখ যে এমন অবিশ্বাস্য ব্যাপারই তো হরহামেশা ঘটছে, তাই না? আকাশ থেকে রেগুলার পানি পড়ছে, কোনো ফুটা নাই তবু, আকাশটা দাঁড়িয়ে আছে খুঁটি ছাড়াই, আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করছেন এক ফোঁটা বীর্য থেকে...... তাই না?

শীলা: এভাবে তো কখনো ভেবে দেখি নাই!

নীরা: হ্যাঁ রে! এইজন্যই আল্লাহ পুরা কুরআন জুড়ে আল্লাহর এসব সৃষ্টি নৈপুণ্যের দিকে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। এগুলা নিয়ে যদি চিন্তা করি আমরা, আল্লাহর ক্ষমতার ব্যাপারে সম্যক ধারণা পাব, আর তাহলেই জান্নাত/ জাহান্নাম কোনোটার বর্ণনাই আমাদের কাছে অবিশ্বাস্য লাগবে না বুঝলি?

শীলা: উফ আপু! তুমি এত্ত সুন্দর করে সব কিছু বুঝাও কিভাবে! সত্যিই তো, আমাদের চারপাশে কত অবিশ্বাস্য ঘটনাই ঘটছে!এখন থেকে আমার মাঝে আর কখনো সংশয় আসবে না ইনশাল্লাহ!

নীরা: ইনশাল্লাহ!

পাপের বিজ্ঞাপন



ফেসবুকের হোম পেইজ এ একবার চোখ বুলাতেই একটা নিউজে চোখ আটকে গেল সুমির। এ কী! নীলার প্রোফাইলে সবাই Rest in Peace লিখছে কেন? 

তাড়াতাড়ি করে মিতুকে ফোন দিল ও।

সুমিঃ এই নীলার কী হয়েছে রে?
মিতুঃ তুই জানিস না? 
সুমিঃ নাতো, কী জানব?
মিতুঃ ও তো লাইফ সাপোর্টে ছিল তিন দিন, গতকাল রাতে মারা গেছে।
সুমিঃ ইন্নানিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহি রাজিঊন।কিভাবে? কী হয়েছিল? 
মিতুঃ কিছুই নারে! সামান্য ডেঙ্গু। কিন্তু ব্রেনে ভাইরাল আক্রমণ করেছিল, ভর্তি হওয়ার দিন রাতেই একদম হঠাৎ কোমায় চলে যায়।
সুমিঃ এত কিছু ঘটে গেছে, কিচ্ছু জানি না আমি! 
মিতুঃ কেউই জানে নারে! আমিও গতকাল শুনেছি যে কোমায়, তার কিছুক্ষণ পরেই শুনি যে নাই ও। বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল মিতু।
সুমিরও গলা রুদ্ধ হয়ে এল।

ওরা একসাথে স্কুলে পড়েছে ১০ বছর। সুমি ইসলামে আসার পর সুস্পষ্টভাবে এড়িয়ে চলত নীলা, অনেকদিন তাই যোগাযোগ ছিল না।

নীলার ফেসবুক প্রোফাইলে যেতেই ভয়ে কেঁপে উঠল সুমির সারা শরীর। জ্বলজ্বল করছে ওর হাসি মাখা ছবি। দুর্দান্ত সুন্দরী ছিল, একেকটা ছবি একেক স্টাইলের। শখানেক লাইক, হট, সেক্সি ইত্যাদি নানা বিশেষণে বিশেষিত। About এ বড়বড় করে লেখা In a relationship with...........বয়ফ্রেণ্ডের সাথে এমন সব ভঙ্গিতে ছবি দিয়ে ভর্তি যে তাকানো যায় না! ওর ছবি হোমপেইজ থেকে হাইড করে রাখতে হয়েছিল এইজন্য!

ও আল্লাহ! এইগুলা সব যে এখন ওর বিরুদ্ধে সাক্ষী হবে! ওর কানের কাছে ভেসে উঠল কদিন আগেই পড়া একটা হাদীস-
“আমার সমগ্র উম্মাহ্‌ নিরাপদ, কেবল তারা ব্যতীত যারা কিনা তাদের পাপ নিয়ে দম্ভ করে বেড়ায়। তাদের কেউ যখন কোন কুকর্ম করে রাতে ঘুমাতে যায় এবং আল্লাহ্ তার পাপ গোপন রাখেন, সকালে ঘুম থেকে উঠার পর সে বলতে থাকে, “এই শোন, আমি না কাল রাতে এই এই (কুকর্ম) করেছি”।  সে যখন ঘুমাতে যাই, আল্লাহ্ তার পাপ গোপন রাখেন, আর সকালে ঘুম থেকে উঠেই আল্লাহ্ যা গোপন রেখেছিলেন তা সে লোকজনের কাছে প্রকাশ করে বেড়ায়”। [সহীহ আল বুখারী]

আল্লাহ! ফেসবুক যে এখন আমাদের পাপের
 বিজ্ঞাপন দেয়ার জায়গা হয়ে গেছে। যত মানুষ এখন ওর প্রোফাইলে যাবে ওর পাপের সাক্ষী যে আরো বাড়বে.........

হতবিহবল সুমির মাথায় হঠাৎ একটা বুদ্ধি আসল। ওর পরিচিত শখানেক বোনদের একটা ফেসবুক গ্রুপ আছে। ও ওদের বলল যে সবাই যেন নীলার ফেসবুক প্রোফাইলটার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করে। গণহারে এতজন রিপোর্ট করতে থাকলে হয়ত ব্লক হয়ে যাবে ওর প্রোফাইলটা।

জীবনকে পূর্ণ মাত্রায় উপভোগে ব্যস্ত ওর এই ছোট্টবেলার বন্ধুটার জন্য এটা করা সুমির কাছে দায়িত্ব মনে হল.........আল্লাহর অশেষ রহমতে দু-একদিনের মাঝেই প্রোফাইলটা ব্লক করিয়ে দিতে পারল!

সেইসাথে ছোট্টবেলার বন্ধুটার জন্য খুব করে দুআ করতে থাকলো। ও তো আমাদের আর সবার মতই মৃত্যুকে খুব দূরের কিছু ভেবেছিলো। ও এই যে ফেসবুকে এসব ছবি দিয়ে বেড়াতো, এতে আমাদের দায়ও কি এড়ানো যায়, যারা লাইক দিয়েছে, কমেন্ট দিয়ে প্রশংসা করেছে-ভাবছিলো সুমি। প্রশংসা পেতে কার না ভালো লাগে! একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কুরআন খুলে সূরা নূর বের করলো সুমি। উল্টাতে উল্টাতে চোখে পড়লো নিচের আয়াতটা-

“যারা পছন্দ করে যে,ঈমানদারদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার লাভ করুক,নিঃসন্দেহে ইহাকাল ও পরকালে তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। [সূরা আন-নূর; ২৪:১৯]

এটাকেই খুঁজতেছিলো ও। তারপর খুঁজে বের করলো সূরা যুমারের আয়াতটা যেটা একদম মন প্রশান্ত করে দেয়-

হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। আল্লাহ সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি অতি ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু। (৩৯ঃ৫৩)

মনে মনে আরো একবার তাওবা করলো নিজের অতীতের গুনাহগুলোর জন্য, দুআ করলো সবার জন্য যাতে আল্লাহ আর কাউকে এভাবে অপ্রস্তুত অবস্থায় তাঁর কাছে ফিরিয়ে না নিয়ে যান, আমীন।



রিবা নিয়ে জানা সিরিজের স্ক্রিপ্ট -১১

রিবার নানা রূপ আজকের পর্বে আমরা রিবার নানা রূপের সাথে পরিচিত হব যেন দৈনন্দিন জীবনে আমরা সেগুলো থেকে বেঁচে থাকতে পারি-   টাকা ধার নেয়ার...